• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ইজতেমার মাঠে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২৪, ০৫:৪৮ পিএম
ইজতেমার মাঠে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি
দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব ইজতেমা। ছবি : সংবাদ প্রকাশ

টঙ্গীর তুরাগ নদের পাড়ে চলছে ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার শেষ সময়ের প্রস্তুতি। শনিবার (২ ফেব্রুয়ারি) শুরু হবে প্রথম পর্ব। এ পর্বে অংশ নিতে এরই মধ্যে ময়দানে আসতে শুরু করেছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মুসল্লিরা।

জানা গেছে, গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে তাবলিগ জামাতের এ বার্ষিক সম্মেলন হবে আগেরবারের মতোই দুই পর্বে। ২, ৩ ও ৪ ফেব্রুয়ারি ইজতেমার প্রথম পর্ব এবং চার দিন বিরতি দিয়ে ৯, ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম পর্বের নেতৃত্বে থাকবেন জুবায়েরপন্থীরা। দ্বিতীয় পর্বের নেতৃত্বে থাকছেন সাধারণ তাবলিগ অনুসারী মুসল্লিদের নেতৃত্বদানকারী ভারতের মুরব্বি মাওলানা সাদপন্থীরা। ইজতেমা উপলক্ষে মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য ১১ জোড়া বিশেষ ট্রেন চলবে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও মিডিয়া সেল স্থাপনসহ সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

সরেজমিনে ইজতেমার মাঠে দেখা যায়, প্রথম পর্বে অংশ নিতে কাপড়ের ব্যাগসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে মাঠে প্রবেশ করছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মুসল্লিরা। এ ছাড়া বিদেশি মুসল্লিদেরও মাঠে আসতে দেখা যায়। পাশাপাশি দুপুরের খাবারের আয়োজন করতে নিজ নিজ তাবুর পাশে গ্যাসের চুলায় রান্না করতে দেখা গেছে মুসল্লিদের।

উত্তরবঙ্গ থেকে আসা মো. আকরাম নামের এক মুসল্লি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে ইজতেমায় এসেছি। অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল, যেটা এবার পূরণ হয়েছে। সবাই একত্রে হয়ে আল্লাহ নিকট নিজের ভুলভ্রান্তি ক্ষমা প্রার্থনাসহ নফল ইবাদত ইজতেমার মাঠে করতে পেরে আমি আসলেই আনন্দিত।”

তিনি আরও বলেন, “ইজতেমার পরিবেশ আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো। বিগত সময়ের মতো কোনো কোন্দল বা দ্বন্দ্ব যেন তৈরি না হয় এটাই আমরা চাই। নিরাপত্তা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বেশ কঠোর আছে। আশা করি, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ইজতেমা শেষ করে বাড়ি ফিরতে পারব।”

বিশ্ব ইজতেমা শান্তিপূর্ণভাবে সফল করতে, যেকোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে আছে পুলিশ, র‌্যাবসহ সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সার্বিক নিরাপত্তা বিষয়ে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন। তারা দুজনই মুসল্লিদের নিরাপত্তার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কথা বলেন।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “বিশ্ব ইজতেমার ময়দান নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৫ হাজার সদস্য নি‌য়ে ছয় স্ত‌রের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হ‌য়ে‌ছে। ইজতেমা নিয়ে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা রয়েছে। আমরা তাদের ব্রিফিং দিয়েছি, প্রশিক্ষণ দিয়েছি, কে কখন কোথায় কীভাবে দায়িত্ব পালন করবে, সেভাবে তাদের প্রস্তুত করেছি।”

র‌্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন বলেন, “বিশ্ব ইজতেমা ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আর ইজতেমা ঘিরে কোনো ধরনের জঙ্গি হামলার আশঙ্কা নেই। তারপরও অনলাইনে নজরদারি রাখা হয়েছে। ইজতেমার দুই পক্ষ নিয়ে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, এ জন্য মুরব্বিদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।”

জানা যায়, ইজতেমা উপলক্ষে তুরাগ নদীর ওপর ভাসমান সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫টি সেতু নির্মাণ করেছে সেনাবাহিনী এবং একটি বিআইডব্লিউটিএ। এসব ব্রিজ দিয়ে সাময়িকভাবে মুসল্লিরা এপার-ওপার যাতায়াত করতে পারবেন। বিদেশি মেহমানদের উন্নতমানের অজু, গোসল ও বাথরুমের পৃথক ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের রান্নার জন্য সরবরাহ করা হবে প্রাকৃতিক গ্যাস। বিশেষত বিদেশি মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য তাদের পুরো ছাউনিটি আলাদাভাবে তৈরি করা হয়। এছাড়াও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ১২টি নলকূপে ১২ কিলোমিটার পাইপ লাইনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ২৫টি ফগার মেশিনে মশকনিধনে কাজ করা হবে। ময়দানে নিয়মিত পানি ছিটানো, মশার ওষুধ দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেখানে সার্বক্ষণিক একাধিক টিম কাজ করবে। পাশাপাশি মুসল্লিদের বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কার্যক্রমের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. খায়রুজ্জামান বলেন, “ইজতেমা ময়দান ও শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার হাসপাতালে মুসল্লিদের বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কার্যক্রমের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। রোগী পরিবহনের জন্য ১৫টি অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন থাকবে।”

বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে জুবায়েরপন্থী ও সাদপন্থীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মুসল্লি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “ইজতেমা নিয়ে দুপক্ষের মারামারির কথা মনে পড়লে এখনো আমার ভয় কাজ করে। না জানি কোন সময় আবার নতুন করে মারামারির ঘটনা ঘটে। আমরা মতো এই ভয় অনেকের মনে এখনও রয়ে গেছে। কারণ মারামারির ঘটনা ভোলার মতো নয়।”

তিনি আরও বলেন, “সাধারণ মানুষ হিসেবে আমাদের চাওয়া একটাই শান্তিপূর্ণভাবে ইজতেমার দুপর্ব যেন শেষ হয়। আমরা কোনো মারামারি দলাদলি চাই না। এখানে বিদেশি মুসল্লিরাও আসেন। তারা এসব ঘটনাকে নিন্দা ও খারাপ চোখে দেখে। যা আমাদের দেশের সম্মানের ওপর আঘাত হানে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। তাই আমরা শান্তি চাই। মহান আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে সুস্থভাবে ইজতেমা শেষ করে বাড়ি যাওয়া তৌফিক দান করেন।”

Link copied!