বিয়ের পর মেয়েদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হলো শ্বাশুড়ির সঙ্গে সম্পর্ক। এই সম্পর্ক অনেক সময় সহজ হয়, আবার হয় না। তবে চেষ্টা থাকলে একে মধুর করে তোলাও সম্ভব। কারণ, শ্বাশুড়ি-মেয়ের সম্পর্ক আবেগ, দায়িত্ব ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার মিশ্রণে গঠিত। অনেকেই মনে করেন এই সম্পর্ক সহজে ঘনিষ্ঠ হয় না। তবে সঠিক টেকনিক বা কৌশল প্রয়োগ করলে এটি হতে পারে ভালোবাসার, শ্রদ্ধার ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।
শ্রদ্ধা দেখান, ভালবাসা আ
শ্বাশুড়ির প্রতি প্রথমেই শ্রদ্ধাশীল মনোভাব রাখা জরুরি। আপনি যদি তাকে সম্মান দেন, তাহলে তার দৃষ্টিভঙ্গিও আপনার প্রতি ইতিবাচক হবে।
যোগাযোগে স্বচ্ছতা বজায় রাখুন
বেশিরভাগ ভুল বোঝাবুঝির মূল কারণ হলো অপর্যাপ্ত বা ভুল যোগাযোগ। এমন কিছু বলবেন না, যাতে পরে ভুল ব্যাখ্যা হয়। মনে কোনও অভিযোগ থাকলে সরাসরি ও নম্রভাবে তা তুলে ধরুন। গোপনে বলা বা অন্যদের কাছে অভিযোগ করা সম্পর্ককে খারাপ করে তোলে।
পছন্দ-অপছন্দ জানুন
শ্বাশুড়ির প্রিয় খাবার, পোশাক, ধর্মীয় আচরণ, দৈনন্দিন অভ্যাস ইত্যাদি জানার চেষ্টা করুন। এতে আপনি তার সঙ্গে সহজে সংযুক্ত হতে পারবেন। মাঝেমধ্যে তার প্রিয় রান্না করে খাওয়ানো বা ঈদের সময় তার পছন্দের শাড়ি উপহার দেওয়া তাকে বিশেষ অনুভব করায়।
নিজেকে চাপিয়ে দেবেন না
নতুন পরিবারে প্রবেশ করলে সম্পর্ক তৈরিতে সময় লাগে। অনেকেই চায় দ্রুত শ্বাশুড়ির মন জিতে নিতে। কিন্তু এতে উল্টো চাপ তৈরি হয়। ধীরে ধীরে নিজেকে প্রমাণ করুন। ভালোবাসা, আস্থা ও সম্পর্ক সবকিছু গড়ে ওঠে ধৈর্যের মাধ্যমে।
পরামর্শকে গুরুত্ব দিন
বয়স ও অভিজ্ঞতায় শ্বাশুড়ি অনেক কিছু জানেন। রান্না, সংসার চালানো বা সন্তানের লালনপালনে তার অভিজ্ঞতা কাজে লাগান। প্রয়োজনে পরামর্শ চাওয়া বা সাহায্য চাওয়া তাকে সম্মানিত অনুভব করায়।
স্বামীকে না জড়ানোই ভালো
অনেক পরিবারে দেখা যায়, স্ত্রী ও মায়ের মধ্যে মতানৈক্য হলে স্বামীকে কোর্টের বিচারকের ভূমিকা পালন করতে হয়।।এতে করে স্বামী মানসিকভাবে চাপে পড়ে এবং সম্পর্কেও ফাটল ধরতে পারে। ব্যক্তিগত বিষয়ে স্বামীকে না জড়িয়েও সরাসরি শ্বাশুড়ির সঙ্গে সমাধান করা উচিত।
ছোটখাটো বিষয়ে খুঁতখুঁত না করা
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেরই কিছু আচরণ বদলায়। হয়তো শ্বাশুড়ি খুব কথা বলেন, অথবা রান্নায় বেশি তেল ব্যবহার করেন। এসব নিয়ে বারবার আপত্তি করলে আপনি নেতিবাচক হিসেবে পরিচিত হবেন। সামান্য বিষয় ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখুন।
নিজের জায়গা বুঝে চলুন
একটি পরিবারে নতুন আসা মানে একেবারে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা নয়। শ্বাশুড়ি সেই ঘরের দীর্ঘ সময়ের কর্ত্রী, তাই আচরণে নম্রতা রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তার সিদ্ধান্ত বা নিয়ন্ত্রণকে একেবারে উপেক্ষা করলে তা সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সহানুভূতির মনোভাব রাখুন
মনে রাখবেন, শ্বাশুড়িও একজন মা, তিনি হয়তো বয়সের কারণে একাকীত্ব, শারীরিক অসুস্থতা কিংবা মানসিক দুশ্চিন্তায় ভোগেন। মাঝে মাঝে তার খোঁজ নেওয়া, পাশে বসে গল্প করা বা তার চিকিৎসার খোঁজ রাখা জরুরি। এসব সম্পর্ককে উষ্ণতা দেয়।
আন্তরিকতা বেশি মূল্যবান
অনেকে মনে করেন, উপহার দিলেই সম্পর্ক ভালো হবে। যদিও উপহার সম্পর্ক মজবুত করতে পারে, কিন্তু তা যদি আন্তরিকতা ছাড়া হয়, তবে কৃত্রিম লাগে। আন্তরিক আচরণ, সময় দেওয়া, হাসিমুখে কথা বলা এগুলোই দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের চাবিকাঠি।
মনে রাখবেন, আপনি যেমন একজন নতুন পরিবারে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছেন, শ্বাশুড়িও একজন নতুন মানুষকে আপন করে নিতে চেষ্টা করছেন। তাই ভালোবাসা ও সহযোগিতার মধ্য দিয়েই এই সম্পর্ককে সফলভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করুন।