• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩০, ১৬ রজব ১৪৪৬

কে-পপ মিউজিক এবং টিনএজার


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২১, ১০:৩৬ এএম
কে-পপ মিউজিক এবং টিনএজার

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ট্রেন্ডিংয়ে পরিবর্তন আসে। ট্রেন্ডিংয়ের শুরুটা হয় টিনএজারদের কাছ থেকেই। ১৩ থেকে ২১ বছর বয়সীদের মধ্যেই ঘুরপাক করে ট্রেন্ডিংয়ের নানা বিষয়। পোশাকে, আচরণে উঠে আসে ট্রেন্ডিংয়ের ছাপ, যা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন মহলে।

বর্তমানে ট্রেন্ডিংয়ের লাইমলাইটে চলে এসেছে কে-পপ মিউজিক। বলা যায়, দেশের অধিকাংশ ঘরেই এখন কে-পপ মিউজিকের রাজত্ব জুড়ে বসেছে। অনেকেরই কাছেই ট্রেন্ডিংয়ের এই বিষয়টি নতুন মনে হতে পারে। কিন্তু টিনএজারদের এই মিউজিকের সঙ্গে কয়েক বছর ধরেই বেশ পরিচিত। রীতিমতো বন্ধুমহলে কে-পপ মিউজিক নিয়ে চর্চাও চলে।

কে-পপ মিউজিক কী? কে-পপ মিউজিক সাধারণত একটি কোরিয়ান মিউজিক। দক্ষিণ কোরিয়ার কে-পপ ব্যান্ড বিটিএস থেকেই এর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে এটি বেশ আলোচিত। এর সদস্যসংখ্যা সাতজন। এই ব্যান্ডের জনপ্রিয়তা এখন ইউটিউব থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে বেশ পরিলক্ষিত। তাদের গান নিয়মিত রেকর্ড করে বেড়াচ্ছে। বাংলাদেশের টিনএজারদেরও ছুঁয়ে গেছে এর জনপ্রিয়তা।

জনপ্রিয় এই ব্যান্ড দল বিটিএস গানের পাশাপাশি নানা সামাজিক কাজও করছে, যা বেশ প্রশংসাও কুড়িয়েছে বিশ্ব মহলে।

সম্ভাবনাময় প্রতিভা খুঁজে বের করে দক্ষিণ কোরিয়ার পপ ইন্ডাস্ট্রি। বড় বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এর পেছনে কাজ করছে। বড় কর্মকর্তা ও নির্বাহীদের সামনে যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান প্রতিভা খুঁজে নেন চারপাশ থেকেই। যার মধ্যেই প্রতিভা দেখতে পান তাকেই গড়ে নেন আগামী দিনের জনপ্রিয় তারকা হিসেবে। তরুণ প্রতিভার সঙ্গে চুক্তি করে কঠোর প্রশিক্ষণ শুরু করে প্রতিষ্ঠানগুলো।

কে-পপের বাজারে মেধা ও সৌন্দর্য দুইয়েরই সমন্বয় থাকতে হয়। প্রশিক্ষণের সময় শিল্পীদের কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়। তাদের শেখানো হয় গান, র‌্যাপ, নাচ। অভিনয়, ব্যক্তিত্ব উন্নত করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বিদেশি ভাষাও শেখানো হয়। এমনকি কঠোর ডায়েট চার্টও ফলো করতে হয়। তারকা করে গড়ে তোলার পেছনে আকর্ষণীয় করার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে প্রতিষ্ঠানগুলোর। প্রশিক্ষণ নিয়ে তারকাকে প্রস্তুত করতে ১০ বছরও সময় লেগে যায়।

আন্তর্জাতিকভাবে কোরিয়ান ড্রামা ও সিনেমা জনপ্রিয়তা পায়। ‘অটাম ইন মাই হার্ট’ দিয়েই জনপ্রিয়তার যাত্রা শুরু। ২০০০ সালের কথা। এই ড্রামা সিরিজ প্রচারের পরই সারা বিশ্বে সাড়া পায় কোরিয়ান সিনেমা।

এই রেশ ধাপে ধাপে চলে আসে বাংলাদেশেও। কয়েক বছরের মধ্যেই রাজত্ব শুরু করে কোরিয়ান সিনেমা, ড্রামা সিরিজ ও মিউজিক, যা বর্তমানে টিনএজার থেকে শুরু করে তরুণ, মধ্যবয়সীদের মধ্যেও আসক্তি ছড়িয়ে পড়েছে।

কে-পপ মিউজিকে আসক্তির তালিকার বেশি রয়েছে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ুয়া উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্তের টিনএজাররা। বন্ধুমহলে এই মিউজিক নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এমনকি কে-পপের ধরনে নিজেদেরও গড়িয়ে নিচ্ছে টিনএজাররা। কোরিয়ান গায়ক-গায়িকাদের চেহারার গড়ন, জীবনাচার ও এর পাশাপাশি কোরিয়ান ড্রামা ঘরানার সিনেমাগুলো দেখে বেশ মুগ্ধ হচ্ছেন। কিশোর-কিশোরীরা জানান, কোরিয়ান কলাকুশলীদের ‘সুন্দর’ চেহারাই কে-পপের প্রতি আকৃষ্ট করেছে। এমনকি ‘আপ টু ডেট’ প্রমাণ করতেও কে-পপ মিউজিকে আসক্তি বাড়ছে।

ট্রেন্ডের সঙ্গে থাকতে অনেকেই কোরিয়ান ড্রামা বা কে-পপের দিকে ঝুঁকছে। কুশলীদের সৌন্দর্যচর্চা নিয়েও বেশ আগ্রহ থাকে টিনএজারদের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কে-পপ মিউজিক নিয়ে এই প্রজন্মের মধ্যেই বিভাজন তৈরি হচ্ছে। কেউ পছন্দ করছেন, কেউ করছেন না। এমনকি যারা কে-পপ মিউজিক পছন্দ করছেন না তাদের বন্ধু মহলে রীতিমতো হেয় হতে হচ্ছে, যা অভিভাবকদের মধ্যেও শঙ্কা বাড়াচ্ছে। কারণ, সব পরিস্থিতিই টিনেএজারদের মানসিকভাবে প্রভাবিত করে।

ট্রেন্ডি কে-পপের এই আসক্তি নিয়ে কথা বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. নূর মোহাম্মদ। তার মতে, শুধু কে-পপ মিউজিকই নয়, যেকোনো বস্তুগত আসক্তি মানসিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, “তরুণ-তরুণীরাই যেকোনো বিষয়ে আসক্তি বেশি হয়। তারা সেই বিষয়টি ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে চিন্তাও করছে না। শুধু আসক্তির বিষয়টি নিয়েই থাকছে। সেই বিষয়ে কথা বলা উপভোগ করছে। অনেক সময় কথাও বলছে না, শুধু ওই বিষয়টি নিয়েই একা ঘরে সময় কাটাচ্ছে। এর প্রভাবে কিশোর কিশোরীরা অসামাজিক হয়ে যাচ্ছে। লেখাপড়ায় পিছিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক নৈতিক দায়িত্ব থেকেও পিছিয়ে যাচ্ছে। পরে বয়স পেরিয়ে গেলেও ক্যারিয়ারে খুব ভালো কিছু করতে পারে না। একসময় অনুশোচনা হয়। কিন্তু তখন অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়।“

কে-পপ মিউজিক নিয়ে তিনি বলেন, “মিউজিক শোনা খুবই ভালো। অবসরে বা অঙ্ক করার ফাঁকে মিউজিক শুনতেই পারছেন। এটা ইতিবাচক। কিন্তু যদি তা আসক্তিতে পরিণত হয় তবেই সমস্যা। পরিবার থেকে দূরে চলে যায়। একসময় একাকিত্ব, বিষণ্নতা দেখা দেয়।"

"তবে সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এ জন্য বাবা-মাকে নজর রাখতে হবে। সন্তান আসক্ত হচ্ছে এমন বিষয়গুলো থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে সাহায্য করতে হবে। শিক্ষকরাও এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রয়োজনে শিক্ষকরা কিশোর-কিশোরীদের এসব বিষয়ে আলোচনা করে নেতিবাচক দিকগুলো বুঝিয়ে দিতে পারে।"

“আসক্তির বিষয় নিয়ে কোনো সমালোচনা তারা নিতে পারে না। পাগলামো বা ক্ষেপামো করে। এটার জন্য পারিবারিক স্কুলিংটাই বেশি কাজ করে।"

Link copied!