রাশিয়ার একটি যুদ্ধবিমানের ধাক্কায় যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর একটি ড্রোন কৃষ্ণসাগরে বিধ্বস্ত হয়েছে। ধাক্কায় নজরদারির কাজে ব্যবহৃত এমকিউ–৯ রিপার নামের ওই ড্রোনটির প্রপেলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বলে জানিয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী।
মার্কিন সম্প্রচার মাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) এ ঘটনা ঘটে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় কমান্ড এক বিবৃতিতে বলেছে, কৃষ্ণসাগরের ওপর দিয়ে রাশিয়ার দুটি এসইউ-২৭ যুদ্ধবিমান এবং যুক্তরাষ্ট্রের একটি রিপার ড্রোন উড়ছিল। এ সময় একটি যুদ্ধবিমান ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ ড্রোনটির সামনে যায় এবং সেটির ওপর কয়েকবার জ্বালানি তেল ফেলে। এরপর যুদ্ধবিমানটি ড্রোনের ‘প্রোপেলারে’ আঘাত করে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত ড্রোনটি কৃষ্ণসাগরে বিধ্বস্ত করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় মার্কিন বাহিনী।
এদিকে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি বলছে, রাশিয়ার একটি যুদ্ধবিমানের সঙ্গে মার্কিন ড্রোনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষের ফলে মানববিহীন মার্কিন ড্রোনটি কৃষ্ণ সাগরে বিধ্বস্ত হয়েছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার একটি রুশ এসইউ-২৭ জেট বিমানের সঙ্গে মার্কিন এমকিউ-৯ রিপার ড্রোনের ধাক্কা লাগে।
পেন্টাগনের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট্রিক রাইডার বলেছেন, রাশিয়ান যুদ্ধবিমানটি সকাল ৭টার কিছু পরে ড্রোনে আঘাত করার আগে আগে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ড্রোনের আশেপাশে উড়েছিল।”
মার্কিন বিমানবাহিনীর জেনারেল জেমস হেকার এক বিবৃতিতে বলেন, “এমকিউ–৯ ড্রোনটি আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় নিয়মিত অভিযানে ছিল। তখন সেটিকে আঘাত করে রাশিয়ার একটি যুদ্ধবিমান। এর ফলে ড্রোনটি বিধ্বস্ত হয়। বলতে গেলে এটি রাশিয়ার একটি অনিরাপদ ও অপেশাদার পদক্ষেপ, যার ফলে দুটি উড়োজাহাজ প্রায় বিধ্বস্ত হতে যাচ্ছিল।’
মার্কিন ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, এই অঞ্চলে রুশ বিমানের মুখোমুখি হওয়া সাধারণ ঘটনা। প্রায়ই ঘটে থাকে। তবে এই ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কারণ রাশিয়ার এই পদক্ষেপ ছিল ‘অনিরাপদ ও অপেশাদার’। প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল বেপরোয়া পদক্ষেপ।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী রুশ জঙ্গিবিমানকে দোষারোপ করলেও রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে ভিন্ন কথা।
তারা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাশিয়ার বিমান কোনো অস্ত্র ব্যবহার করেনি বা ড্রোনটির সংস্পর্শে আসেনি। ক্রিমিয়া উপদ্বীপের কাছে কৃষ্ণসাগরের ওপর একটি মার্কিন মানববিহীন ড্রোন শনাক্ত করে রাশিয়া। যা রুশ সীমান্তের দিকে যাচ্ছিল। ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের জন্য রাশিয়া যে অস্থায়ী আকাশপথ তৈরি করা হয়েছে, ড্রোনটি তা লঙ্ঘন করছিল। ওই ড্রোন চিহ্নিত করার জন্য যুদ্ধ বিমান পাঠায় রাশিয়া। কিন্তু বাক বদল করতে গিয়ে এমকিউ–৯ ড্রোনটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সাগরে পড়ে যায়।
অপরদিকে ড্রোন কৃষ্ণসাগরে বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ওয়াশিংটনে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস জানিয়েছেন, রুশ রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এলে আমরা কড়া অভিযোগ দেব। রুশ যুদ্ধবিমান যা করেছে, তা একদমই অনিরাপদ ও অপেশাদার আচরণ। এরই মধ্যে মস্কোতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন ট্র্যাসি রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কড়া বার্তা দিয়েছেন।
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তলব করার পর আনাতোলি আন্তোনভ সাংবাদিকদের জানান, ইউরোপের পূর্ব অংশে যা ঘটছে, তা বিবেচনায় নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্রিমিয়াকে রাশিয়া ফেডারেশনের একটি অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না, সেখানে রাশিয়ান নৌবাহিনী বা রাশিয়ান বিমানবাহিনীকে উসকে দেওয়া প্রয়োজন ছিল কি-না।
তিনি বলেন, “আমরা এমন পরিস্থিতি যাতে তৈরি না করি, যেখানে রাশিয়ান ফেডারেশন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনিচ্ছাকৃত সংঘর্ষ বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীন হয়।”
গত বছর ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান শুরুর পর এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর উড়োজাহাজের মধ্যে এ ধরনের সংঘাতের ঘটনা ঘটল।
আপনার মতামত লিখুন :