• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

হাঁটুর নিচ থেকে দুই পা নেই, জয় করলেন এভারেস্ট


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২২, ২০২৩, ০১:৩৯ পিএম
হাঁটুর নিচ থেকে দুই পা নেই, জয় করলেন এভারেস্ট

ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে নেপালি সেনাদের ইউনিট ‘গুর্খা’ নামে পরিচিত। সেই গুর্খা ব্রিগেডের সদস্য হরি বুদ্ধ মাগার ২০১০ সালে আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালনকালে বোমার বিস্ফোরণে দুই পা হারিয়েছিলেন।

তবে হাঁটুর নিচ থেকে দুই পা না থাকলেও এই সৈনিক অদম্য ইচ্ছা ও কৃত্রিম পা নিয়েই জয় করেছেন এভারেস্টের চূড়া। বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি যার দুই পায়ের হাঁটুর ওপর অংশ পর্যন্ত নেই, কিন্তু তিনি ৮ হাজার ৮৪৯ মিটার (২৯ হাজার ৩২ ফুট) উচ্চ মাউন্ট এভারেস্টের শৃঙ্গ জয় করেছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। স্যার এডমন্ড হিলারি এবং শেরপা তেনজিং নোরগে পর্বত জয়ের জন্য প্রথম পর্বতারোহী হওয়ার ৭০ বছর পর হরি বুদ্ধ মাগার এ কৃতিত্ব গড়লেন। গত শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে তিনি ২৯ হাজার ফুট চূড়ায় পৌঁছান।

৪৩ বছর বয়সী হরি বুদ্ধ মাগার বেস ক্যাম্পে ফিরে স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে বলেন, “এটা কঠিন ছিল। আমার মনে কেবল কেবল এই কথাই ঘুরপাক খেয়েছে যে, চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে এবং এভারেস্টের শীর্ষে পা রাখতে হবে। কঠিন ওই সময়ে আমি আমার পরিবার এবং যারা আমাকে এভারেস্টে উঠতে সাহায্য করেছে তাদের প্রত্যেকের কথা চিন্তা করছিলাম। এই ভাবনাটি আমাকে শীর্ষে উঠতে সাহস যুগিয়েছে।”

ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর গুর্খা রেজিমেন্টে ১৫ বছর কর্পোরাল হিসেবে কাজ করার আগে মাগারনেপালে বেড়ে উঠেছেন। হিমালয় পর্বত এলাকায় জীবনের অনেকটা সময় হেঁটে বেড়িয়েছেন। রোমাঞ্চকর খেলা সব সময় তাকে আকৃষ্ট করত। বর্তমানে তিনি পাঁচটি দাতব্য সংস্থার জন্য অর্থ সংগ্রহ করছেন।

২০১০ সালে আফগানিস্তানে একটি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বিস্ফোরণে তার উভয় পা হারান। পা হারালেও দমে যাননি মাগার। দীর্ঘদিন পুনর্বাসন কেন্দ্রে ছিলেন। চিকিৎসা নিয়েছেন, প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, নিজের মনোবল চাঙা রেখেছেন।

দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে তিনি বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে আরোহণের পরিকল্পনা করেছেন। মাগারের ওয়েবসাইটে তার এই প্রচেষ্টাকে নিয়ে একটি স্লোগান দেওয়া হয়েছে—‘পা নেই, কোনো সীমা নেই।’

তিন সন্তানের এই জনক হতাশায় মাঝেমধ্যে আত্মহত্যার কথা ভাবতেন। একসময় তিনি মাদকাসক্তও হয়ে পড়েন। তবে সন্তানদের কথা চিন্তা করে একসময় তিনি নিজেকে নতুনভাবে মূল্যায়ন করতে শুরু করেন।

মাগার বলেন, “আমার মূল উদ্দেশ্য ছিল, শারীরিক প্রতিবন্ধীত্ব সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা। আমি যদি সচেতন হতাম, তাহলে আমি আমার জীবনের দুটি বছর নষ্ট করতাম না। আমি নিজের শারীরিক প্রতিবন্ধীত্বের সর্বোচ্চ ব্যবহারের সংকল্প করি। জনগণকে দেখাতে চেয়েছিলাম যে শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও যেকোনো কিছু করতে পারে। তবে কাজটি করতে হবে ভিন্ন উপায়ে।”

তিনি আরও বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি সময় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী জীবনকে খাপ খাইয়ে নিতে পারছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি যা চাইবেন, করতে পারবেন। আকাশের সীমা আছে, এর কোনো সীমা নেই।”

হাঁটুর নিচ থেকে দুই পা নেই, এমন দুই ব্যক্তি অতীতে হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় করেছেন। তাদের একজন নিউজিল্যান্ডের নাগরিক মার্ক ইঙ্গলিস, অন্যজন চীনের নাগরিক শিয়া বোয়ু। মার্ক ২০০৬ সালে এবং শিয়া ২০১৮ সালে এভারেস্টে আরোহণ করেন।

চীনের নাগরিক শিয়া যে বছর এভারেস্টে আরোহণ করেন, সে বছরই মাগার তার অভিযানের প্রস্তুতি শুরু করেন। তবে একটা পর্যায়ে তাকে প্রশক্ষিণ বন্ধ করে দিতে হয়।

নেপালের আইন অনুযায়ী, নিরাপত্তার কারণে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের এভারেস্টে আরোহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

প্রথম এভারেস্টজয়ী স্যার এডমন্ড হিলারি এবং শেরপা তেনজিং নোরগের মতো মাগারের এভারেস্ট জয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক গুরুত্ব পেয়েছে।

Link copied!