• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

দক্ষিণ ইউরোপ-আফ্রিকাজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ, ১০টি শহরে রেড অ্যালার্ট


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২৩, ০১:৩৫ পিএম
দক্ষিণ ইউরোপ-আফ্রিকাজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ, ১০টি শহরে রেড অ্যালার্ট

বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা ভয়াবহ হারে বেড়েই চলেছে। ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বের তাপমাত্রা সার্বিকভাবে ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই কারণেই বিশ্বের নানা প্রান্তে আগের চেয়ে বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে। গরমের তীব্রতা এতটাই বেশি যে, এতে অনেকে অসুস্থও হয়ে পড়ছেন।

আর ইউরোপের দেশগুলোতে এই তাপপ্রবাহের প্রভাব যেন একটু বেশিই। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার কিছু অংশজুড়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এমনকি আগামী দিনগুলোতে স্পেন, ফ্রান্স, গ্রিস, ক্রোয়েশিয়া এবং তুরস্কের কিছু অংশে তাপমাত্রা ৪০ এবং ইতালিতে ৪৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। ফ্লোরেন্স ও রোমসহ ১০টি শহরে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। এতে বলা হয়, মানব সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তাপপ্রবাহ আরও ঘন ঘন দেখা দিচ্ছে এবং দিনে দিনে তা আরও তীব্র হয়ে উঠছে। মারাত্মক গরম মানুষের শরীরে নানা ধরনের প্রভাব ফেলে। এটি হিট স্ট্রোকে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। এছাড়া প্রচণ্ড তাপ কার্ডিওভাসকুলার এবং শ্বাসযন্ত্রের রোগকে বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে সবচেয়ে ঝুঁকিতে পড়েন বয়স্ক ব্যক্তিরা।

গত মঙ্গলবার ইতালির উত্তরাঞ্চলে তীব্র গরমে ৪৪ বছর বয়সী এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর আগে তিনি মিলানের কাছে লোদি শহরে জেব্রা ক্রসিং লাইন পেইন্টিং করছিলেন। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে পরে তার মৃত্যু হয়।

দেশটির আবহাওয়া অফিস বলেছে, শুক্রবার ইতালিতে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ হবে এবং বিবিসি ওয়েদার বলেছে, দক্ষিণ ইউরোপের বিশাল অংশজুড়ে চল্লিশের ঘরের মাঝামাঝি তাপমাত্রা দেখা যেতে পারে এবং সম্ভবত তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।

ইতালীয় রাজনীতিবিদ নিকোলা ফ্রেটোয়ান্নি টুইট করে বলেছেন, আমরা অসহনীয় তাপপ্রবাহের মুখোমুখি হচ্ছি। তীব্র গরমে লোদিতে আজকের মতো দুর্ঘটনা এড়াতে সমস্ত প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

এছাড়া তাপপ্রবাহের জেরে ইতালিতে ঘুরতে যাওয়া বেশ কয়েকজন পর্যটক ইতোমধ্যেই হিট স্ট্রোকের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে রোমের কলোসিয়ামের বাইরে এক ব্রিটিশ ব্যক্তিও রয়েছেন। চলমান এই তাপপ্রবাহ আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দেশটিতে চরম পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এর আগে ২০২১ সালের আগস্টে ইতালীয় দ্বীপ সিসিলির সিরাকিউসের কাছে ইউরোপের সর্বকালের উষ্ণতম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। সেসময় সেখানে তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১১৯ দশমিক ৮ ফারেনহাইট)।

এদিকে ইউরোপীয় স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের গবেষকদের গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে, গত বছরের মে মাসের শেষ থেকে সেপ্টেম্বর মাসের শুরু পর্যন্ত ৩৫টি ইউরোপীয় দেশে তাপজনিত কারণে ৬১ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন। গত বছরের এই গ্রীষ্ম ছিল ইউরোপের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ গ্রীষ্মকাল।

নেচার মেডিসিন জার্নালে সোমবার নতুন এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়। এতে দেখা গেছে, জনসংখ্যার আকার অনুসারে গ্রিস, ইতালি, পর্তুগাল এবং স্পেনের মতো ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোতে মৃত্যুর হার ছিল সর্বোচ্চ।

গত বছরের গ্রীষ্মে ইউরোপীয় দেশগুলোকে তীব্র দাবানল এবং খরায় বিপর্যস্ত হতে দেখা গিয়েছিল। এমনকি গত বছরের জুলাই মাসে পর্তুগালে ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। সংখ্যার বিচারে তাপের কারণে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে ইতালি, স্পেন এবং জার্মানিতে। ইতালিতে গত বছরের গ্রীষ্মে মারা গেছেন ১৮ হাজার ১০ জন। স্পেন ও জার্মানিতে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১১ হাজার ৩২৪ জন এবং ৮ হাজার ১৭৩ জন।

Link copied!