আম গ্রীষ্মের অন্যতম সুস্বাদু ফল। এই ফল মিষ্টি, রসালো স্বাদের জন্য বেশ জনপ্রিয়। তবে যেকোনো ফলের মতোই এটি সকালে বা দিনের সময় খাওয়া উত্তম। কারণ রাতে আম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, রাতে আম খেলে শরীরের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব ও ক্ষতি হতে পারে। যেমন_
হজমে সমস্যা হতে পারে
রাতে শরীর বিশ্রাম নেওয়ার প্রস্তুতি নেয় এবং বিপাক ক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। এই সময় ভারী খাবার বা অতিরিক্ত চিনি জাতীয় খাবার খেলে তা সহজে হজম হয় না। আমে প্রাকৃতিক চিনি (ফ্রুক্টোজ) এবং আঁশ থাকে। রাতে খেলে হজম ধীর হয়ে যেতে পারে এবং গ্যাস, অম্বল, বুক জ্বালাপোড়া বা বদহজম দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যাদের হজমে সমস্যা আছে, তাদের জন্য রাতে আম খাওয়া উপযুক্ত নয়।
ওজন বেড়ে যেতে পারে
আমে থাকা প্রাকৃতিক চিনির পরিমাণ কম নয়। একটি মাঝারি সাইজের আমে প্রায় ৪৫-৫০ গ্রাম প্রাকৃতিক চিনি থাকে, যা শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি সরবরাহ করে। রাতে খাওয়া খাবার সাধারণত কম খরচ হয়, অর্থাৎ শরীর সেগুলো সহজে পোড়ায় না।অতিরিক্ত ক্যালোরি জমে চর্বিতে রূপান্তরিত হয়ে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়ায়। বিশেষ করে যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখছেন বা ডায়েট করছেন, তাদের জন্য রাতে আম খাওয়া একেবারেই পরামর্শযোগ্য নয়।
রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে
আমে উচ্চ মাত্রার প্রাকৃতিক চিনি (ফ্রুক্টোজ) থাকে। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে রাতে আম খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। রাতে আম খেলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে, কারণ ঘুমের সময় ইনসুলিন কার্যকারিতা কম থাকে।দীর্ঘমেয়াদে এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে রাতে আম না খাওয়াই ভালো।
দাঁতের ক্ষতি হতে পারে
রাতে খাবার খাওয়ার পর অনেকে ঠিকমতো দাঁত ব্রাশ করেন না। আমের মিষ্টতা ও অ্যাসিডিক প্রকৃতির কারণে রাতে খেয়ে ঘুমালে দাঁতের উপর অ্যাসিড জমে থেকে যায়। এটি দাঁতের এনামেল ক্ষয় করতে পারে এবং দাঁত ক্ষয়ে যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে দাঁতের ব্যথা বা ক্যাভিটির কারণ হতে পারে।
ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে
যদিও এটি সরাসরি প্রমাণিত নয়, তবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে রাতে অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় ফল খাওয়ার ফলে ঘুমে বিঘ্ন ঘটে। চিনিযুক্ত খাবার রক্তে সুগার বাড়িয়ে দিয়ে সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে, যা ঘুম আসায় বিলম্ব ঘটায়। তাই যাদের ঘুমে সমস্যা আছে, তারা রাতে আম খাওয়ার আগে দুইবার ভাবুন।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
যদি আপনি সুস্থ, ওজন স্বাভাবিক থাকে, ডায়াবেটিস না থাকে এবং সঠিক সময়ে হালকা পরিমাণে আম খান, তবে কোনো বড় ক্ষতির আশঙ্কা নেই। তবে অবশ্যই রাত ৮টার আগে খাওয়া ভালো।
বেশি পরিমাণ না খেয়ে ১টি ছোট আম খান। খাওয়ার পর ভালোভাবে হাঁটাহাঁটি করুন। দাঁত ব্রাশ করে ঘুমাতে যান।
তাই দিনে খাওয়াই আম উপভোগের সবচেয়ে নিরাপদ উপায়। সে সময় শরীরের বিপাকক্রিয়া সক্রিয় থাকে এবং আমের পুষ্টিগুণও ভালোভাবে কাজে লাগে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।