জাপানে ‍‍`দাদী ভাড়া‍‍` দেওয়া হয় কেন


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৫, ০৫:১৭ পিএম
জাপানে ‍‍`দাদী ভাড়া‍‍` দেওয়া হয় কেন
ছবি: সংগৃহীত

জাপানে “দাদী ভাড়া” দেওয়ার রীতি রয়েছে। যা শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটি একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা। সেখানে বিভিন্ন বয়সের মানুষ প্রয়োজন অনুযায়ী ভাড়া করে নেন একজন “দাদী”।  যিনি নিজেট স্নেহ, যত্ন দিয়ে পারিবারিক সম্পর্কের অভাব পূরণ করেন। কিন্তু কেন এমন রীতির জন্ম হলো, তা জানার জন্য জাপানের সামাজিক কাঠামো, একাকীত্বের প্রবণতা এবং পারিবারিক ব্যবস্থার পরিবর্তনের দিকে তাকাতে হবে।

জাপানে “দাদী ভাড়া” রীতিটি মানবিক প্রয়োজন থেকে উদ্ভূত হয়েছে। ভালোবাসা, যত্ন, পরামর্শ এবং সামাজিক বন্ধনের অভাব পূরণ করতেই এই ব্যতিক্রমী ধারণার জন্ম হয়েছে। 

জাপান বিশ্বের অন্যতম “সোশালি আইসোলেটেড” সমাজ। এই দেশে অনেকেই একা বাস করেন। তাদের পরিবার নেই বা সম্পর্ক ভেঙে গেছে। বৃদ্ধরাও একাকীত্বে ভোগেন, আবার তরুণরাও কর্মব্যস্ত জীবনের কারণে পরিবার থেকে দূরে থাকেন। এই পরিস্থিতিতে মানুষ মানসিক ও আবেগিক সঙ্গ খোঁজে – কখনও একজন মায়ের মতো, কখনও দাদীর মতো স্নেহময় কেউ দরকার হয়। ফলে “ভাড়ায় দাদী” সংস্কৃতি শুরু হয়। যাতে একজন স্নেহময়ী মহিলা ভাড়া করে নেয়া যায়। যিনি গল্প করবেন, রান্না শিখিয়ে দেবেন কিংবা শুধু পাশে বসে থাকবেন।

জাপানে আগে যৌথ পরিবার ছিল প্রচলিত। দাদা-দাদী, বাবা-মা, সন্তান একসঙ্গে থাকতেন। কিন্তু বর্তমানে নিউক্লিয়ার পরিবার বা একক বসবাসের প্রবণতা বেড়েছে। ফলে শিশুরা দাদী-নানীর স্নেহ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, আবার অনেক দাদীও সন্তান-নাতি থেকে আলাদা। এই শূন্যতা পূরণ করতে অনেক পরিবার “দাদী” ভাড়া নেন। যিনি সন্তানের সঙ্গে গল্প করেন, খেলা করেন কিংবা স্কুলে নিয়ে যেতে সাহায্য করেন।

শিশুরা শুধু মা-বাবা থেকে নয়, দাদী-নানী থেকেও জীবনের অনেক শিক্ষা ও স্নেহ পায়। কিন্তু দাদা-দাদীর অনুপস্থিতিতে অনেক বাবা-মা অনুভব করেন, তাঁদের সন্তান আবেগিকভাবে কিছুটা পিছিয়ে পড়ছে। তাই “দাদী ভাড়া” করা হয়ে উঠেছে এক ধরনের বিকল্প শিক্ষা ও ভালোবাসার মাধ্যম। তারা গল্প বলেন, ঐতিহ্য শেখান, রান্না করেন, এমনকি মায়েদের গাইডও দেন।

সেই দেশে অনেক বৃদ্ধা অবসরের পরও কর্মক্ষম ও কর্মমুখী থাকতে চান। তারা একঘেয়েমি দূর করতে এবং আর্থিকভাবে কিছু আয় করার জন্য এই “ভাড়ায় দাদী” পেশা বেছে নেন। এই পেশায় তারা স্নেহ দেন, কথোপকথন করেন এবং সমাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

জাপানের কঠিন, ব্যস্ত কর্মজীবনে মানসিক চাপ খুব বেশি। মানুষ অনেক সময় কাউকে নিয়ে নিজের মনের কথা বলতে চায়, সহানুভূতি পেতে চায়। কিন্তু সেটা পরিবার বা বন্ধুদের কাছে সম্ভব হয় না।
এই জায়গায় একজন দাদী ভাড়া করে নেওয়া এবং মনের কথা শেয়ার করা অনেকটা “ইমোশনাল থেরাপিস্ট” এর কাজ করেন। যিনি মন দিয়ে কথা শোনেন এবং পরামর্শ দেন।

দেশটিতে বর্তমানে এই সেবা নানা এজেন্সির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। একজন “দাদী” ঘণ্টাপ্রতি নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে কাজ করেন। কেউ রান্না শেখান, কেউ ছেলেমেয়েকে সময় দেন, কেউ গৃহপরিচারিকার কাজও করেন। এটি জাপানে একটি ছোট কিন্তু সুগঠিত ব্যবসায়িক ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।

Link copied!