• ঢাকা
  • শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি কেন হয়


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৪, ২০২৩, ০৬:০০ পিএম
বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি কেন হয়
বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি থাকলে চিকিৎসা নেওয়া উচিত ছবি : সংগৃহীত

বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি হলো একটি মানসিক রোগ যা নিজের বা অন্যের স্বাভাবিক জীবনকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। যারা এই সমস্যায় ভোগেন তারা নিজের জীবন নিয়ে, সম্পর্ক নিয়ে অস্থিরতা ও দোদুল্যমান অনুভূতিতে থাকেন। 

যেমন তারা নিজের পছন্দ এবং অপছন্দ নিয়েও ঘন ঘন মত পরিবর্তন করেন। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি অত্যন্ত সংবেদনশীল হন। ছোট কোনো বিষয়ে উত্তেজিত হয়ে উঠতে পারেন এবং তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন। 

সহজভাবে চিন্তা করা এবং যুক্তিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়াও তাদের কাছে কঠিন হয়ে পড়ে। এ সমস্যা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার শুরুর দিকে দেখা যায়, তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ভালো হয়ে যেতে পারে।

এর লক্ষণগুলো-

হারানোর ভয়
এ রোগের সবচেয়ে বড় লক্ষণ হলো হারানোর ভয়। আক্রান্ত ব্যক্তি সবসময় প্রিয়জনদের থেকে দূরে চলে যাওয়ার বা একা থাকার ভয় পান। তাই পরিবারের সদস্যদের কর্মক্ষেত্র থেকে দেরিতে বাড়ি আসার মতো সাধারণ কিছু ব্যাপারেও এরা তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই আক্রান্ত ব্যক্তি পরিবার এবং বন্ধুদের নিজের কাছাকাছি রাখার জন্য উন্মাদের ন্যায় প্রচেষ্টা চালায়।

সম্পর্কে অস্থিরতা
এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি দ্রুত প্রেমে পড়েন এবং সহজেই হতাশ হয়ে প্রেম থেকে বেরিয়ে আসতে চান। আবারও নতুন কোনো সম্পর্কে প্রবেশ করেন এই আশায় যে, এই নতুন ব্যক্তিটি হয়ত ক্রমাগত উদ্বেগ এবং নিরাপত্তাহীনতা থেকে তাকে কিছুটা সান্ত্বনা দিতে পারবে। কিন্তু যখন এটি ঘটে না, তখন সম্পর্কটা খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকে এগিয়ে যায়।

অস্পষ্ট ধারণা 
রোগীর স্থিতিশীলভাবে কোনো নির্দিষ্ট  দৃষ্টিকোণ বজায় রাখতে অনেক বেগ পেতে হয়। যেমন একদিন নিজের প্রতি অনেক যত্নশীল হয়, তো পরেরদিন নিজেকে অত্যন্ত ঘৃণা করতে শুরু করে। তারা জীবনের চাওয়ার-পাওয়ার জায়গাগলোতে স্থির থাকতে পারে না। উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং লক্ষ্যগুলো পরিবর্তন হতেই থাকে।

স্ব-ধ্বংসাত্মক আচরণ
স্ব-ধ্বংসাত্মক আচরণ এবং আবেগপ্রবণতা এমন রোগীর সবচেয়ে বড় দুটি লক্ষণ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির স্ব-ধ্বংসাত্মক নানা আচরণ করে থাকে যেমন বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো, দোকান থেকে জিনিসপত্র চুরি করা, অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা মাদক গ্রহণ করা ইত্যাদিতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করেন। এমন নানা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্য, আর্থিক এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কের দিক থেকে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেদের ক্ষতি করতে দ্বিধা করেন না। 

তারা সহজেই নিজেদের শরীর কেটে ফেলতে পারে বা নিজেকে পুড়িয়ে ফেলতে পারে এবং আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে যেকোনো পদক্ষেপও নিয়ে নিতে পারেন। শরীরে ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করা বা নিজেকে পুড়িয়ে ফেলাসহ নানান ক্ষতি করে ফেলতে পারেন।

মেজাজ পরিবর্তন
বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি মেজাজের চরমভাবে পরিবর্তন ঘটায়, যা আজকের সুখী-হাসিখুশি মেজাজ থেকে আগামীকাল হতাশাগ্রস্ত এবং আত্মহত্যার মানসিকতার দিকে চলে যেতে পারেন। তাদের মেজাজের পরিবর্তন তীব্রভাবে ঘটলেও তা খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। মেজাজের এই পরিবর্তন কয়েক মিনিট বা ঘণ্টা স্থায়ী হয়।

একাকিত্বে ভোগা
আক্রান্ত ব্যক্তি ভয়াবহ রকমের একাকিত্বে ভোগেন। কেউ কারও নয় এমন বিশ্বাস থেকে এই অস্বস্তিকর শূন্যতা কাটানোর জন্য নিজের সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ করেন।  ভালো বোধ করার জন্য মাদকদ্রব্য ও অনিয়ন্ত্রিত খাবার খাওয়া করেন। শূন্যতার এই অনুভূতিটিই তাদের করা সমস্ত আচরণ এবং প্রতিক্রিয়াকে জাগিয়ে করে।

ভয়ানক রাগ
এ রোগ আবেগপ্রবণতা সৃষ্টি করে, যা প্রায়শই বিস্ফোরক রাগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সামান্য মতবিরোধেও তার মধ্যে রাগের প্রবণতা দেখা যায়। রাগ হলে জিনিস ছুঁড়ে ফেলা বা চিৎকার করার মতো আচরণের সঙ্গে প্রকাশ পেতে পারে। 

মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসকদের মতে,  অনেকের ক্ষেত্রে এই রাগ যে সবসময় বাইরে প্রকাশ পাবে তা নয়। এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য ভেতরে ধরে রাখতে পারে এবং পরে এটাই নিজের ক্ষতির আকারে প্রকাশ করতে পারে।

আপনার বা পরিচিত কারোর মধ্যে বর্ডারলাইন পার্সোনালিটির লক্ষণ দেখা যায় তবে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

Link copied!