মানব দেহের পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের মধ্যে একটি হলো চোখ। এই চোখ পরিবেশের সঙ্গে একজন ব্যক্তির সংযোগ স্থাপন করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আর যদি কোনো ত্রুটি, বাধা বা অনুপযুক্ততার কারণে একজন ব্যক্তি চোখে দেখতে না পান, তাদের আমরা দৃষ্টিহীন বা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বলি। অন্যান্য প্রতিবন্ধকতার মতো দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের প্রতি সামাজিক উদাসীনতা ও নেতিবাচক মনোভাব দেখা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ মিলিয়ন মানুষ হলো দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অনুযায়ী, দেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ৩ লাখ ৬৪৯ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কোনো ব্যক্তি যদি তিন মিটার দূরত্বে অবস্থিত ব্যক্তির আঙ্গুল গণনা করতে অসমর্থ হন, তবে সে দৃষ্টিহীনতায় ভুগছেন এবং আলোর অনুভূতি একেবারেই না থাকাকে ধরা হয় পুরোপুরি দৃষ্টিহীন।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের বৈশিষ্ট্য
১) শ্রেণিকক্ষে ব্ল্যাকবোর্ডের লেখা দেখতে না পাওয়া।
২) উজ্জ্বল দিনের আলোতে আলোর অনুভূতি না পাওয়া।
৩) ঘন ঘন চোখ লাল হওয়া।
৪) চোখ থেকে পানি পড়া।
৫) চোখ পিটপিট করা।
৬) চোখে ঝাপসা দেখা।
৭) চলাফেরায় পদে পদে বাধা পাওয়া এবং স্পর্শ করে চলার পথ নির্ণয়ের চেষ্টা করা।
কেন হয়
চোখের গঠনগত ত্রুটি : চোখের আকৃতি যদি ত্রুটিপূর্ণ হয় তবে দেখার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা যায়। এ ছাড়া সঞ্চালন পেশী অক্ষিগোলকের বা কর্নিয়ার গঠনে সমস্যা থাকলে তা দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার জন্য দায়ী হতে পারে।
জিন ও বংশগত ত্রুটি : বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, জিনগত ত্রুটির কারণে শিশুর দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা আসে। বংশগত বিভিন্ন রোগ যেমন- জন্মগত ছানি, ডায়াবেটিস ইত্যাদি শিশুর দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার জন্য দায়ী।
দুরারোগ্য ব্যাধি জনিত কারণ : ব্যক্তির দুরারোগ্য ব্যাধিজনিত কারণে দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। যেমন- স্মল পক্স, চিকেন পক্স, হাম ইত্যাদি। চোখের বিভিন্ন রোগ এবং সংক্রমণজনিত রোগ। যেমন- চালসে, হ্রস্বদৃষ্টি, দীর্ঘদৃষ্টি, ছানি, গ্লুকোমা, রেটিনা ছিঁড়ে যাওয়া, চোখের রগে টিউমার ইত্যাদি।
দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধকতা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
✍️ গর্ভবতী মা যেন নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ করে সেদিকে নজর রাখা।
✍️ গর্ভবতী মায়ের সংক্রামক ব্যাধির চিকিৎসা করা।
✍️ শিশু যেন অপুষ্টিতে না ভোগে এবং শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন এ থাকে তা নিশ্চিত করা।
✍️ শিশুদের নিয়মিত টিকাদান করা।
✍️ জন্ম পূর্ববর্তী সময়ে মায়ের এক্স-রে, অতিমাত্রায় ওষুধ সেবন, জন্মকালীন শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি কারণে শিশু দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হতে পারে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
✍️ কোনো ব্যক্তির চোখে বাইরের কোনো বিষাক্ত পদার্থের সংক্রমণ বা লোহার কুচি, পাথর কণা প্রবেশের কারণে বা চোখে কোনো ধরনের যন্ত্রণা অনুভব করলে বা চোখ অস্বাভাবিক লাল হলে সঙ্গে সঙ্গে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
পরামর্শ : ডা. মো. আরমান হোসেন রনি, কনসালট্যান্ট (চক্ষু)
দীন মোহাম্মদ আই হসপিটাল, সোবানবাগ, ঢাকা।