• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ছাত্রলীগের দুগ্রুপের সংঘর্ষ ও লাঠিপেটার কারণ জানা গেল


বরগুনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২২, ০৮:২২ পিএম
ছাত্রলীগের দুগ্রুপের সংঘর্ষ ও লাঠিপেটার কারণ জানা গেল

বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণায় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুসহ অনেকের মতামত উপেক্ষা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কেন্দ্রঘোষিত কমিটি জেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কিছুতে মেনে নিতে পারছে না। এ কারণেই বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। এর জের ধরে শোক দিবসের আলোচনানুষ্ঠানে যোগ দেওয়া নিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

ঘটনার পর শোক দিবসের এক আলোচনানুষ্ঠানে বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে এক পুলিশ কর্মকর্তার বরখাস্তসহ বিচার দাবি করেন। এর কিছুসময় পর একই ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একই স্থানে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশকে ধন্যবাদ জানান।

সংসদ সদস্য শম্ভু ও ছাত্রলীগের সাংঘর্ষিক বক্তব্যের পর অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন ‘ছাত্রলীগের বিপক্ষে সংসদ সদস্য, নাকি সংসদ সদস্যের বিপক্ষে ছাত্রলীগ?’

এনিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ১৭ জুলাই জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের আগে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আবদুর রশিদ রাফির হাতে সভাপতি পদে ২২ ও সাধারণ সম্পাদক পদে ২৬ জনের জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়ে। সম্মেলনের এক সপ্তাহ পর ২৪ জুলাই কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন। এতে রেজাউল কবির রেজা সভাপতি ও তৌশিকুর রহমান ইমরানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৩ জনের নাম প্রকাশ করা হয়।

কমিটি ঘোষণার দিন (২৪ জুলাই) বিকেলেই দলীয় কার্যালয়ের সামনে ছাত্রলীগের একাংশ টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ ও কমিটি ঘোষণার পর রাত ১০টার দিকে শহরে ঝটিকা মিছিল করে। এতে শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে টানা এক সপ্তাহ প্রতিদিনই সন্ধ্যার পর ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে আসে। ৩০ জুলাই (শনিবার) রাত সাড়ে ৮টার দিকে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতদের একাংশের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে পৌর শহরের ধর্মতলা মোড়ে এসে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার চেষ্টা করে। এসময় বেশ কয়েকজন আহত হন। সর্বশেষ সোমবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে শোক দিবসের কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের গ্রুপিং দ্বন্দ্বে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান সহ-সভাপতি ও সভাপতি পদ দাবি করে বঞ্চিত ছাত্রলীগ নেতা সবুজ মোল্লা বলেন, “কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সভপতি, বর্তমান সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ জাহাঙ্গীর কবীরের কমিটি নিয়ে আলোচনা হয়। এসময় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সম্পাদক তিনজন করে মোট ছয়জনের নাম কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে প্রস্তাব করে পাঠান।”

বর্তমান সহ-সভাপতি আরও বলেন, “ওই ছয়টি নামের মধ্য থেকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করার কথা ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ওই নামগুলো বাইরে গিয়ে রেজাকে সভাপতি ও ইমরানকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করে। এতে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকের মতামত উপেক্ষা করে কেন্দ্রঘোষিত কমিটি জেলা ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। এ কারণেই বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে।”

সবুজ বলেন, “এমপি শম্ভু কাকাকে উপেক্ষা করা হয়েছে, আমরা এটা মানতে পারছি না। কেন্দ্র কেন এটা করেছে তারাই ভালো বলতে পারবেন।”

শীর্ষ দুই পদের যেকোনো একটি পদ দাবি করা অপর ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম সাগর বলেন, “আমি পদপ্রত্যাশী ছিলাম, বঞ্চিত হয়েছি। আমি মনে করি এটি একটি ভুয়া কমিটি হয়েছে। এটি ব্যক্তিকেন্দ্রীক কমিটি। এ কমিটি জেলা আওয়ামী লীগ কোনোদিন মেনে নেবে না। জেলা আওয়ামী লীগের কাছে এ কমিটি কখনো গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। আমাদের জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশনা অনুসারে আমরা কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছি।”

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোতালেব মৃধা বলেন, “যারা কমিটি দেওয়ার অথরিটি তারা কমিটি দেবে। এটা মেনে নিবে এটাই রাজনৈতিক সৃষ্টাচার। আমার ছেলে হয়নি কেন, আমার ভাই হয়নি কেন মানা যাবে না, এটা রাজনৈতিক সৃষ্টাচার বহির্ভূত। ছাত্রলীগের ঝামেলা শুরু পর আমার সামনেই ডিসি সাব এমপিকে বলেছিলেন, স্যার ছাত্রলীগ ঝামেলা করতেছে আপনি দেখুন, তখন এমপি সাহেব বলেন, এতদিন কিছুই হয়নি, এখন যদি ঝামেলা হয় হোক, এমপি সাহেবের বক্তব্য কি প্রমাণ করে? ছাত্রলীগের এই দ্বন্দ্ব পুষে রেখেছেন আমাদের এমপি সাহেব। তারা যে নাম প্রস্তাব করেছিল, আমাদের কোনো মতামত নেয়নি, এমনকি কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বে পরও একটা বৈঠক ডাকেনি জেলা আওয়ামী লীগ।”

মোতালেব মৃধা আরও বলেন, “ছাত্রলীগের কমিটিকে জেলা আওয়ামী লীগ মানছে না এটা আমরা বলতে পারি না, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ব্যক্তিগতভাবে যদি না মানতে পারেন সেটা সংগঠনের বিবেচ্য বিষয় না। এটা স্পষ্ট শম্ভুর সঙ্গে পদবঞ্চিতদের সখ্যতা ও বর্তমান কমিটির সভাপতি সেক্রেটারির সঙ্গে বিরোধীতার ফল।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক এক শীর্ষ নেতা ও জেলা আওয়ামী যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদের এক নেতা বলেন, “রেজাউল কবীর রেজা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য খলিলুর রহমানের ভাইয়ের ছেলে। জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সাবেক নেতা মশিউর রহমান শিহাবের ঘনিষ্ঠ অনুসারী ইমরান। ওই দুই নেতার ঘনিষ্ঠ দুজন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেনে নিতে পারছেন না। তিনি চেয়েছিলেন, তার অনুসারীদের যে কাউকে পদ দেওয়া হোক। কিন্তু সেটা না হওয়ার কারণেই এই বিভেদ ও বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতদিন পর্যন্ত টিকে আছে।”

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল কবীর রেজা দাবি, “ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আমরা ঐক্যবদ্ধ। যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে তারা আমাদের না, তাদের পরিচয় সন্ত্রাসী।”

তবে কেন এমন হামলা প্রশ্নের জবাবে রেজা বলেন, “ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করতে আমাদের ভেতর কিছু ভিন্নমতের ছেলেদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এবিষয়ে এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, “আমাদের পরামর্শ ছাড়াই সদ্য ঘোষিত জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। সম্মেলনের আগে কাউন্সিল বাধ্যতামূলক, এ কমিটি দেওয়ার আগে সেটাও করা হয়নি। আপনারা জানেন ছাত্রলীগ করতে হলে যে পাঁচটি শর্তের কথা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সে শর্তগুলো কমিটিতে মানা হয়নি। ছাত্রলীগের ত্যাগী ও বঞ্চিতরা কমিটি নিয়ে ক্ষুব্ধ। আমাদের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন হিসেবে তাদের এ সমস্যার সমাধান করা দায়িত্ব। আমি কোনো পক্ষ বা কারো প্রতিপক্ষ নই। এই ছেলেরা সবাই আমাদের সন্তান। তাদের কথা আমার শুনতে হয় এবং সমাধানও দিতে হয়।”

Link copied!