• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

বরিশালের অনেক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই


মো. শহিদুল ইসলাম, বরিশাল
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২, ০৭:০৫ পিএম
বরিশালের অনেক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই

২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দেশব্যাপী ভাষা দিবস পালনে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। তরুণ প্রজন্মকে ভাষার সঠিক তাৎপর্য জানাতে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ২১ ফেব্রুয়ারি থাকে বিভিন্ন রকম কর্মসূচি।

কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানে বিদ্যালয় আছে, শহীদ মিনার নেই। খোঁজ নিয়ে যানা যায়, সেসব প্রতিষ্ঠানে দায়সারাভাবে পালন করে মহান ভাষা দিবস। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানতে পারছে না ভাষার সঠিক তাৎপর্য, জানাতে পারছে না ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা।

২১ ফেব্রুয়ারি ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর দিন। এদিন দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানায়। তবে প্রতিবারের মতো এবারও সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বরিশাল নগরীর কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নেই কোনো শহীদ মিনার, বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “আমরা আর্থিক সংকট ও পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় এত দিন শহীদ মিনার করতে পারিনি, তবে শিগগিরই আমরা শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ শুরু করব। প্রতিবছরের মতো এবারও শিক্ষার্থীদের র‍্যালি নিয়ে  কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাব, কবিতা আবৃত্তি ও আলোচনা সভা করব।”

নগরীর মথুরানাথ স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলমাঠে পর্যাপ্ত জায়গা থাকলেও নেই কোনো শহীদ মিনার। কারণ জানতে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ফোন দিলে ব্যস্ততার কারণে তিনি কথা বলতে পারেননি।

নগরীর আলেকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নব আদর্শ বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত জায়গা থাকলেও নেই কোনো শহীদ মিনার।

পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্র বলে, “শহীদ মিনার না থাকার কারণে ২১ ফেব্রুয়ারি ভালোভাবে পালন করতে পারি না। ২১ ফেব্রুয়ারির দিন আমাদের বড় ভাইয়েরা বাঁশ, ইট, কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে। আমরা ওখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাই।”

বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, একটা শহীদ মিনার করতে আর কত টাকা লাগে, কমিটি কিংবা জনপ্রতিনিধি মিলে করতে পারে, তারা তা না করে সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে। তিনি আরও বলেন, “১৯৫২ সালে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে যারা শহীদ হয়েছিলেন, তাদের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে শহীদ মিনারের প্রয়োজন। বর্তমান প্রজন্ম ২১ ফেব্রুয়ারি কেন পালন করে, সেসব বিষয়ে জানতে হবে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, সেখানে শহীদ মিনার নির্মাণ প্রয়োজন।”

জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বরিশালে কলেজ রয়েছে ৯২টি, তার মধ্যে শহীদ মিনার আছে ৬৮টিতে এবং নেই ২৪টিতে। স্কুল রয়েছে ৪৫২টি, তার মধ্যে শহীদ মিনার আছে ৩৭০টিতে এবং নেই ৮২টিতে, মাদ্রাসা আছে ২৩৫টি, তার মধ্যে শহীদ মিনার আছে ৩০টিতে এবং বাকি ২০৫টিতে শহীদ মিনার নেই। সবচেয়ে পিছিয়ে আছে মাদ্রাসাগুলো।

বরিশাল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সরকারি স্কুল-কলেজে ফান্ড থাকার কারণে প্রায় সবগুলোতেই শহীদ মিনার রয়েছে, তবে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি ফান্ড না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছায় কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার গড়ে উঠেছে আবার নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে অনেক জায়গায় শহীদ মিনার নির্মাণ করতে সক্ষম হয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ।

বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল লতিফ মজুমদার বলেন, বর্তমানে বরিশাল জেলায় ১৫৯১টি প্রাইমারি স্কুল রয়েছে, এর মধ্য শহীদ মিনার আছে মাত্র ২২১টি প্রতিষ্ঠানে। শহীদ মিনার নির্মাণে সরকারি কোনো বাজেট না থাকায়, প্রধান শিক্ষক ও কমিটির যৌথ সমন্বয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারবে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

এ ব্যাপারে বরিশাল অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. হাসান ফারুক বলেন, প্রতিটি বিদ্যালয়  শহীদ মিনার থাকা বাধ্যতামূলক, তা করতে হবে ম্যানেজিং কমিটির সমন্বয়ে। তাদের শহীদ মিনার নির্মাণ করতে যদি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়, তাহলে বরিশাল জেলা প্রশাসক সার্বিক সহযোগিতা করবে বলে তিনি জানান।

Link copied!