• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া


টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২৩, ০৬:২৯ পিএম
দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

আর একদিন পরেই ঈদ। ঈদকে ঘিরে এবার টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলার ২৪১টি স্থায়ী ও দেড় শতাধিক অস্থায়ী পশুর হাটের জন্য গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মিলিয়ে ১ লাখ ৯১ হাজার ৯৪৩টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে এবার চাহিদার তুলনায় পশু বেশি থাকলেও দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিক্রেতারা বলছেন, পশু লালন-পালনে যে পরিমান খরচ হয়েছে, সে তুলনায় পশুর দাম বাড়েনি। অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, গতবারের তুলনায় হাটগুলোতে পশুর দাম আকাশচুম্বি।

সরেজমিনে বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা যায়, ছোট পশুর চেয়ে বড় পশুর দাম তুলনামূলকভাবে কম। ৪-৫ মণ ওজনের গরুর দাম সবচেয়ে বেশি হওয়ায় সাধারণ শ্রেণির ক্রেতারা এককভাবে কোরবানির গরু কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকে ২ থেকে ৭ জন মিলে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গরু কোরবানি দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। একইভাবে মহিষ, ছাগল ও ভেড়া হাটগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া পশুর হাটগুলোতে একটি মাঝারি আকারের গরুর জন্য বিক্রেতার কাছ থেকে ৪০০ থেকে ৯০০ টাকা এবং ক্রেতার কাছ থেকে এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা খাজনা রাখা হচ্ছে। জেলার সবচেয়ে বড় ষাড় ৫২ মণ ওজনের জেলার দেলদুয়ার উপজেলার কলেজছাত্রী হামিদা আক্তারের ‘মানিকের’ দাম হাকানো হচ্ছে ১৬ লাখ টাকা। গত বছর এ ষাড়টির ওজন ছিল ৪৫ মণ, আর দাম চাওয়া হয়েছিল ১৫ লাখ টাকা। ঢাকার গাবতলী হাটেও উঠিয়েছিলেন কিন্তু বিক্রি হয়নি। ষাঁড়টি নিয়ে হামিদা আক্তার এক প্রকার বিপাকেই পড়েছেন। গত বছর বিক্রি না হওয়ায় তিনি এবার কিছুটা কম দামে হলেও ষাঁড়টি বিক্রি করতে চান।

পশু বিক্রেতা নাজমুল করিম, খোদেজা বেগম, রাইশা ইসলাম, হামিদা আক্তারসহ অনেকেই জানান, কোরবানির পশুর দাম গত বছরের তুলনায় বাড়েনি। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ার সঙ্গে তুলনা করলে পশুর দাম মোটেই বাড়েনি। গরু লালন-পালন ছাড়াও হাটে ওঠাতে গরুর পেছনে বাড়তি খরচ আছে। তাছাড়া বিক্রি করলেও হাটের খাজনা পরিশোধ করতে হয়। এখন পশু লালন-পালনে ভূষি, নালি (এক প্রকার জোলা গুর), খৈল, চালের গুড়া, খড়, কাঁচা ঘাষ ইত্যাদি ব্যবহার করতে হয়। এসবের দাম আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। তারপরও এবার কোরবানির পশুর দাম বেড়েছে বলা হচ্ছে, এটা ঠিক নয়।

কোরবানির পশু কিনতে আসা হুসেইন জহুর, খান আলী জাহান, আব্দুল আজিজ মিয়াসহ কয়েকজন জানান, বিক্রেতারা কোরবানির পশুর দাম মাত্রাতিরিক্ত বাড়িয়ে হাকাচ্ছেন। গত বছর যে গরু ৮০-৯০ হাজার টাকায় পাওয়া যেত, এবার তার দাম দেড় থেকে দুই লাখ টাকা চাওয়া হচ্ছে। তবে বড় গরুর দাম তুলনামূলকভাবে অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকা গরু অর্থাৎ ৪-৬ মণ ওজনের একটি গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে সর্বনিম্ন দুই লাখ টাকা। বাধ্য হয়ে তারা ২-৭ জন মিলে ভাগে কোরবানি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

গোবিন্দাসী গরুর হাটে খাজনা আদায়কারীরা জানান, তারা নিয়মানুযায়ী খাজনা আদায় করছেন। কোনোভাবেই অতিরিক্ত খাজনা নিচ্ছেন না। কোরবানির গরুতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই খাজনা দিয়ে থাকেন, এটা রীতিতে পরিণত হয়েছে।  

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবার ১ লাখ ৯১ হাজার ৯৪৩টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৭ হাজার ৬২০টি গরু, ৩১৭টি মহিষ, এক লাখ ২০ হাজার ১৫৮টি ছাগল ও ৩ হাজার ৮৪৬টি ভেড়া রয়েছে।

টাঙ্গাইল জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রানা মিয়া জানান, গত বছরের তুলনায় এবার জেলায় প্রায় ২৫ হাজার বেশি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রায় তিন হাজার খামারি হাট ছাড়াও গরু অনলাইনে বিক্রি করছেন। অনেক খামারি গরুর অনলাইন ভিত্তিক পেইজ খুলে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, “যে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। মহাসড়কসহ জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কে গরু পরিবহনের ট্রাকগুলোকে পুলিশের বিশেষ নজরদারীতে রাখা হয়েছে। সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতি রোধে জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে। জেলার হাটগুলোতেও পুলিশের টহল টিম সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে জেলা পুলিশ নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে।”

Link copied!