নানা গুঞ্জন, নাটক আর অনিশ্চয়তা শেষে চান্ডিকা হাথুরুসিংহেকে দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচের পদে নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এর আগে প্রথম দফায় ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিন বছর টাইগারদের হেড কোচ ছিলেন তিনি।
প্রথম দফায় বাংলাদেশ দলের পারফর্মেন্সের পরিসংখ্যান হাথুরুর পক্ষেই কথা বলবে। তার অধীনেই ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে তার অধীনে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ, সেমিফাইনাল খেলেছে ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে।
এছাড়া টেস্টে বাংলাদেশে তার অধীনে ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অবিস্মরণীয় জয় পেয়েছিল। এছাড়া শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কার মাটিতেও টাইগারদের জয়ের সময় কোচ ছিলেন তিনি।
সবমিলিয়ে তার কোচিংয়ে ২১ টেস্টের মধ্যে জয় ৬টিতে, ৫২ ওয়ানডের মধ্যে জয় ২৫টিতে ও ২৯টি টি-টোয়েন্টি খেলে জয় ছিল ১০টিতে। সিরিজ হিসেবে দেখলে সবচেয়ে বেশি ছয় জয় এসেছে ওয়ানডে সিরিজে। আর টি-টোয়েন্টি ও টেস্টে সমান একটি করে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ।
হাথুরু যখন কোচ হয়ে আসেন তখন রীতিমতো প্রতি সিরিজেই খাবি খাচ্ছে বাংলাদেশ। তার অধীনে খাঁদের কিনারা থেকে উঠে আসে টাইগাররা। এরপর পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেসহ টানা ছয়টি ওয়ানডে সিরিজ জেতে টাইগাররা।
তবে সাফল্যের দিক থেকে যেমন ক্রিকেটের নানা মহলে প্রশংসিত হয়েছেন তেমনি স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে সমালোচিতও হয়েছেন। এমনকি সিনিয়র ক্রিকেটারদের সাথে নষ্ট হয়েছে সম্পর্কও।
তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল অতিরিক্ত পরীক্ষা-নিরিক্ষা করার। সৌম্য সরকার ও তাসকিন আহমেদের অধ্বপতনের জন্য তার এই অতিরিক্ত পরীক্ষা-নিরিক্ষাও দায়ি করে থাকেন অনেকে।
তবে প্রথম মেয়াদে হাথুরু সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছিলে দুইটা সিদ্ধান্ত নিয়ে। প্রথমটা বাংলাদেশের শততম টেস্টে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে ও মুমিনুল হক সৌরভকে বাদ দেওয়া। এমনকি ওয়ানডে সিরিজেও রিয়াদকে রাখতে চাননি যদিও সেই সময়কার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার হস্তক্ষেপে সেটা আর করে উঠতে পারেননি।
এছাড়া ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিব আল হাসানকে একাদশের বাইরে রাখতে চেয়েছিলেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে।
শুধু ক্রিকেটার নয় প্রথম দফায় নির্বাচকদের সাথে এক পর্যায়ে সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি হয়েছিল বলে শোনা যায়। দল নির্বাচনে তার ভূমিকা নিয়ে নির্বাচকদের সঙ্গে বেশ কয়কেবারই মনোমালিন্য হয়েছিল।
তবে ক্রিকেটার-নির্বাচকদের সাথে যেমন শীতল সম্পর্ক ছিল তেমনি বোর্ডের বড় কর্তাদের সঙ্গে তাদে সম্পর্ক ছিল খুবই উষ্ণ। ফলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সব জায়গাতেই আলাদা দাপট দেখাতে পারতেন এই শ্রীলঙ্কান।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত যাদের নিয়ে কাজ করবেন তাদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হওয়া ও নিজ দেশ শ্রীলঙ্কা থেকে মোটা বেতনে প্রস্তাবে কিছুটা তাচ্ছিল্যের সঙ্গেই চাকরি ছেড়েছিলেন তিনি। ২০১৭ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেই পদত্যাগ করেন তিনি।
তবে সেটার জন্য আর বাংলাদেশে আসেননি হাথুরুর। ওখানে বসেই পাঠিয়ে দেন পদত্যাগপত্র। তখন তার এরকম আচরণে বোর্ডের বেশ কয়েকজন বড় কর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বলে জানা গিয়েছিল। সেই ঘটনার ঠিক ৫ বছর ৪ মাস পর আবারও তিন ফরম্যাটেই টাইগারদের হেডমাস্টার হয়ে ফিরছেন এই লঙ্কান মাস্টারমাইন্ড ।