• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২০ মুহররম ১৪৪৫
মায়ের আদেশ

ভিক্ষা ছেড়ে বই বিক্রি করছে পিতৃহীন সিয়াম


বিজন কুমার
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৩, ১০:০০ পিএম
ভিক্ষা ছেড়ে বই বিক্রি করছে পিতৃহীন সিয়াম
মায়ের কথা রাখতেই ভিক্ষা ছেড়ে বই বিক্রি করছে পিতৃহীন শিশু সিয়াম (৭)

“আমি আগে ভিক্ষা করতাম। তারপরে আম্মু কইছে (বলছে), তুই কাজ কইরাই (করে) খাবি। এরপর থাইক্কা (থেকে) আর ভিক্ষা করি না।” কথাগুলো সিয়াম নামের এক শিশুর।

যে সময়ে তার হেসে-খেলে বেড়ানোর কথা, সে সময়টিতে রাজধানীর পিচঢালা পথে বই বিক্রি করে আয় করছে ৭ বছর বয়সী এই শিশুটি। আয়ের এই পথটিও মন্দ নয়, কারণ একটা সময় সিয়াম ভিক্ষাবৃত্তির মতো কাজে যুক্ত ছিল। এখন সে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আয় করছে। তার ইচ্ছে বড় হয়ে পুলিশ হবে। সে আয় করে খাওয়াবে মাকে। আল্লাহর কাছে তার একটাই চাওয়া, তার মাকে যেন আল্লাহ্ কখনো কেড়ে না নেন।

শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকার বিজয় সরণী এলাকার ফ্লাইওভারে কথা হয় সিয়ামের সঙ্গে। এক পর্যায়ে এই শিশু মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর ভক্তির কথা ব্যক্ত করে সংবাদ প্রকাশকে।

রাজধানীর বেগুন বাড়ি এলাকার বাসিন্দা সিয়াম। তার মা একই এলাকার মোর্শেদা। তিনিও বই বিক্রি করেন। সিয়াম বাবাকে হারিয়েছে ২ বছর আগে। সে রাজধানীর একটি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র।

তিন মাস আগেও সিয়াম ভিক্ষা করত। এক পর্যায়ে মা ভিক্ষাবৃত্তি পেশার কথা জানতে পারলে সিয়ামকে নির্দেশ দেন পণ্য বিক্রি করে আয় করার। এরপর মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা আর সম্মান বোধকে সামনে রেখে শুরু হয় তার বর্তমান আয়ের পথ। প্রথমে তোয়ালে, তারপরে লুসনি, এরপরে বই।

কথা হলে সিয়াম বলে, “সকাল ৭টা বাজে আমি স্কুলে যাই। এরপর বাড়ি আহি (আসি) দুপুর ২ টায়। আইয়া (এসে) খাওয়া কইরা বিক্রি শুরু করি। আর শেষ করি রাইতের (রাত) ৮ বাজে। আম্মায় বই বিক্রি করে। এখন বই কিছু কম আছে। হেয় (তিনি) বই কিনতে গেছে। হের লাইগ্গা (তাই) আমি বই লইয়া (নিয়ে) আইছি। কালকে তোয়ালা বিক্রি করমু। আমার আম্মারে খুব ভালোবাসি। বড় হইয়া পুলিশ হমু আর আম্মারে খাওয়ামু (খাওয়াবো)। আল্লায় যেনো আম্মারে কাইড়া না নেয়। আম্মার সব কথা শুনি। আম্মা ছাড়া আমার কেউ নাই। আব্বায় ২ বছর আগে মইরা (মৃত্যু) গেছে। এখন আমি আর মায়ে একলগে (একসঙ্গে) থাকি।” 

Link copied!