• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আ.লীগের উপকমিটিতে থাকতে নেতাদের দ্বারে দ্বারে পদপ্রত্যাশীরা


সফিকুল ইসলাম
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৩, ০৯:৫৫ পিএম
আ.লীগের উপকমিটিতে থাকতে নেতাদের দ্বারে দ্বারে পদপ্রত্যাশীরা

দ্রুততম সময়ের মধ্যে উপকমিটি পুনর্গঠন করে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি উপকমিটির চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিবদের নাম ঘোষণা করা হলেও সদস্য নির্বাচন করা হয়নি। তাই উপকমিটি পুনর্গঠন করে দ্রুত সময়ের মওধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২২তম ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব উপহার দেয় দলটি। তবে শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ছাড়া সম্মেলনের মাধ্যমে সম্পাদকমণ্ডলীর সব পদই পূরণ করা হয়েছে।

দলের উপকমিটি পুনর্গঠন নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা। এই কমিটিতে স্থান পেতে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের অফিস-বাসায় ও দলীয় কর্মসূচিতে সাক্ষাৎ করে পদ প্রত্যাশার কথা বলছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার গণ গণ যাতায়াত বাড়িয়েছেন আওয়ামী লীগ ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ ও ধানমণ্ডিস্থ দলীয়প্রধান শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে।

প্রটোকল নয়, যারা দলের সৎ-ত্যাগী,পরীক্ষিত কর্মী এবং কমিটমেন্ট নিয়ে রাজনীতি করেন তাদের নিয়ে কমিটি করা হবে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর দুই সদস্য। এরইমধ্যে উপকমিটিগুলো পুনর্গঠন করতে বেশ কয়েকবার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সর্বশেষ রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি আসন্ন রমজানের আগে উপকমিটি গঠ্ন করা নির্দেশ দেন। এই নির্দেশনার পর পর উপকমিটিতে পদ পেতে চান এমন ‘পদপ্রত্যাশী’ সাবেক নেতারা তদবিরে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

সূত্রে জানা গেছে, ১৯টি সম্পাদক পদ রয়েছে টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগের। তার মধ্যে শ্রমবিষয়ক সম্পাদক পদটি এখনো শূন্য। এ পদে এখনো কাউকে চূড়ান্ত করেননি দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা। তবে ১৮টি সম্পাদকীয় বিভাগের একটি করে উপকমিটি রমজানের আগেই গঠন করতে হবে। সেজন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছেন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা। এরইমধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা একাধিকবার যৌথসভা করেছেন।

ওইসব সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “উপকমিটির চেয়ারম্যান-সদস্য সচিবের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। কাজেই উপকমিটিগুলো পুনর্গঠন করতে হবে। সেই প্রক্রিয়ায় যার যার সীমানা থেকে উদ্যোগ নেবেন। এ বিষয়ে আমি বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। আমরা কমিটি গঠনের কাজ শুরু করেছি। দলের উপকমিটিগুলো কত সদস্য বিশিষ্ট হবে তা গঠনতন্ত্রে উল্লেখ না থাকলেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিগত সময়ে এগুলো ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু অনেকেই সেই পরামর্শ মানেননি। কেউ ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করলেও অনেকে ১০১ থেকে ১৫০ সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন।

জানা গেছে, উপকমিটি গঠনের আওয়াজে নিষ্ক্রিয় কর্মীরা এখন অনেকটাই সক্রিয়। প্রতিদিন আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদকের সামনে এসে হাজিরা দিচ্ছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক কার্যালয়ের প্রবেশমুখে সরব উপস্থিতি অনেকের। এছাড়া সম্পাদকমণ্ডলীর কোন সদস্য কখন আসবেন, সেই খোঁজখবর নিয়ে উপকমিটির পদপ্রত্যাশীরা কার্যালয়ে ভিড় করছেন। দলীয় কার্যালয় ছাড়াও অনেকে সম্পাদকমণ্ডলীর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ভিড় করছেন। সেখানে নিজের প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন। এছাড়া উপকমিটিতে রাখতে অনেকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের স্বাক্ষরিত চিঠি কিংবা মৌখিক তদবির নিয়েও হাজির হচ্ছেন।

এর আগে গত ২২ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন বিভাগীয় উপকমিটির চেয়ারম্যান ও কো-চেয়ারম্যান মনোনয়ন দেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানকে অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান করা হয়। এ কমিটির কো-চেয়ারম্যান করা হয়েছেন ইনাম আহমেদ চৌধুরী। অ্যাম্বাসেডর মোহাম্মদ জমিরকে আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হয়। এছাড়া অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে আইনবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান, কৃষিবিদ ড. মির্জা জলিলকে কৃষি ও সমবায়বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান, অধ্যাপক সাইদুর রহমান খানকে তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান এবং অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামকে কো-চেয়ারম্যান করা হয়। 

প্রফেসর ড. অনুপম সেনকে দপ্তর উপকমিটির চেয়ারম্যান করা হয়, এ কে এম রহমত উল্লাহকে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান ও চৌধুরী খালেকুজ্জামানকে কো-চেয়ারম্যান, খন্দকার গোলাম মওলা নকশবন্দীকে ধর্মবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান, মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান ও প্রফেসর ড. সাদেকা হালিমকে কো-চেয়ারম্যান, অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হককে বন ও পরিবেশবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান, অধ্যাপক ড. মো. হোসেন মনসুরকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান, অধ্যাপক ড. সুলতানা শফিকে মহিলাবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান ও মাজেদা রফিকুন্নেছাকে কো-চেয়ারম্যান, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রশিদুল আলমকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান, মোজাফফর হোসেন পল্টুকে যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান ও হারুনুর রশীদকে কো-চেয়ারম্যান, অধ্যাপক ড. আব্দুল খালেককে শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান ও নুরুল ইসলাম নাহিদকে কো-চেয়ারম্যান, কাজী আকরাম উদ্দীন আহমদকে শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান, আব্দুল হাফিজ মল্লিককে শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান ও হাবিবুর রহমান সিরাজকে কো-চেয়ারম্যান,  আতাউর রহমানকে সংস্কৃতিবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান এবং অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হককে স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, “আমরা কমিটি গঠনের কাজ শুরু করেছি। কমিটি করার ক্ষেত্রে দলের হাই-কমান্ড কী নির্দেশনা দেন সেটি আগে দেখি। ওই নির্দেশনা অনুসরণ করে কমিটি করা হবে।”

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, প্রত্যেক সম্পাদকীয় বিভাগের কার্যক্রম অধিকতর গতিশীল ও সমন্বিত করার লক্ষ্যে প্রতিটি সম্পাদকীয় বিভাগে একটি করে উপকমিটি গঠন করা হবে। ওই উপকমিটি একজন চেয়ারম্যান, একজন সম্পাদক, প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিশেষজ্ঞ সদস্য, সংশ্লিষ্ট সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হবে।

জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সদস্য, যারা বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, তারা পদাধিকার বলে সংশ্লিষ্টবিষয় সম্পর্কিত উপকমিটির সদস্য হবেন। সংগঠনের সভাপতির মাধ্যমে উপকমিটির সদস্য সংখ্যা নির্ধারিত হবে এবং তিনি উপকমিটিগুলো গঠন করে দেবেন।

“সভাপতি সংগঠনের সভাপতিমণ্ডলী, উপদেষ্টা পরিষদ ও কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যদের মধ্য থেকে উপকমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত করবেন। সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সম্পাদক সংশ্লিষ্ট উপকমিটির সদস্য সচিব হবেন। উপকমিটিগুলো সংশ্লিষ্ট বিভাগের কার্যক্রম জোরদারে সহায়তা করবে। তবে উপকমিটি কত সদস্যের হবে তা গঠনতন্ত্রে বলা নেই।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, “উপকমিটি গঠনের প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ শেষ করেছি। আগের একটা কমিটি ছিল, ওখান থেকে যারা সক্রিয় ছিলেন তাদের নেব। এছাড়া নতুন কিছু সদস্য যুক্ত করা হবে যারা রাজনীতিতে সক্রিয়। দলের সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশনা অনুযায়ী, যারা চেহারা দেখানোর জন্য থাকেন তারা নয়, যারা কমিটমেন্ট নিয়ে রাজনীতি করেন তাদের মধ্য থেকে সদস্য নিয়ে কমিটি করা হবে।”

Link copied!