• ঢাকা
  • বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬
নিষেধাজ্ঞা শেষ

বাজারে নতুন ইলিশ, প্রতি কেজি ৮০০ টাকা


মো. মির হোসেন সরকার
প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২৩, ০৮:২৯ পিএম
বাজারে নতুন ইলিশ, প্রতি কেজি ৮০০ টাকা
ছবি: সংগৃহীত

ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর)। এরপর শুক্রবার (৩ নভেম্বর) থেকেই দেশের জেলেপাড়ায় শুরু হয় উৎসবের আমেজ। নদীতে-সাগরে শুরু হয় জাল ফেলা। ঝাঁকে-ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। রাজধানীতেও এসেছে সেই নতুন ইলিশ। প্রতি কেজির দাম ৮শ’ টাকা।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, নতুন ইলিশ পাওয়ায় খুশি সাধারণ ক্রেতারা। তবে মন খারাপ অনেকের। কারণ, প্রতি কেজি ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে ৮০০ টাকা। আবার কেউ বলছেন, নতুন ইলিশের দাম এমনই।

জানা গেছে, বাজারে ৪৫০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। আবার ৩০০ গ্রাম ও এর নিচে প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৫শ থেকে ৬শ টাকা। ইলিশের এমন দামে ক্রেতারা যেমন খুশি, আবার অভিযোগও আছে অনেকের।

রাজধানীর মহাখালী কাঁচা বাজারে মাছ কিনেতে এসেছেন মো. সবুজ ইসলাম। পেশায় তিনি চাকরিজীবী। কর্মরত আছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। বাজারে এসে নতুন ইলিশ দেখে খুশিই হয়েছেন। তবে মন খারাপ হয় ইলিশের দাম শুনে। সাড়ে ৪শ থেকে ৫শ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪শ টাকায়। তাও আবার সেই ইলিশ শুধু একটি দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে কিছুক্ষণ ঘুরে সেই ৪শ টাকা দিয়েই কিনলেন ৫শ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ মাছ।

ইলিশের দাম নিয়ে সবুজ ইসলাম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে শুনেছি। তবে বাজারে কমবেশি ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে এটা জানতাম না। বাজারে এসে ইলিশ দেখতেই চোখ আটকে গেল কপালে। তাও আবার একদিনের মধ্যে রাজধানীতে ইলিশ মাছ এসেছে।”

তিনি আরও বলেন, “ইলিশ কিনতে চেয়েছিলাম এক কেজি। তবে দাম বেশি দেখে একটি মাছ নিলাম সেটাও আবার আধা কেজি। কিন্তু যে দাম দেখলাম বাজারে পুরোপুরি মাছ আসলে তো প্রতি কেজি ওজনের একটি মাছ ২ হাজারের কাছাকাছি যাবে। নতুন মাছ হিসেবে দাম একটু বেশিই মনে হয়েছে আমার কাছে। আর একটু সহনীয় হওয়া দরকার ছিলো।”

৫শ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম ৪শ টাকা নিয়ে সবুজ ইসলাম অভিযোগ করলেও দাম সহনীয় রয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশকে জানালেন বৃষ্টি বেগম নামের আরেক ইলিশ ক্রেতা।

বৃষ্টি বেগম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “নতুন মাছ বাজারে আসলে একটু দাম বেশিই থাকে। তবে গতবারের চেয়ে এবার নতুন ইলিশ মাছের দাম তেমন বেশি না। আধা কেজি ওজনের একটি মাছ ৪শ টাকা। আমি মনে করি দাম সহনীয় পর্যায়েই রয়েছে।”

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞা শেষে সবেমাত্র বাজারে আসা শুরু হয়েছে।  পুরোপুরি ইলিশ আসতে আরও তিন থেকে চারদিনের মতো সময় লাগবে। তবে এবার জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে বলে ব্যবসায়ীদের জানিয়েছেন জেলেরা। এমন ইলিশ পাওয়া গেলে এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৫০০-১৬০০ অথবা বেশি হলে ১৭০০ টাকায় বিক্রি হবে। আর যদি একটু কমে যায় তাহলে প্রতি কেজি ইলিশের দাম ২ হাজার হতে পারে।

রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচা বাজারের মাছ ব্যবসায়ী রফিক ইসলাম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বাজারে এখনও পুরোপুরি ইলিশ আসা শুরু হয়নি। ইলিশে বাজার সয়লাব হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমার কাছেও ইলিশ আছে। তবে সেটা ওজনে ছোট। আমি প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি করছি ৬শ টাকায়। আমার দোকানের ইলিশ এক কেজিতে ৩টি উঠছে। যদিও ছোট ইলিশের চাহিদা কম দেখা যাচ্ছে, তবু মোটামুটি বিক্রি হচ্ছে। আর বড় সাইজের ইলিশের দাম আছেই।”

হাতিরপুল বাজারে মাছ কিনতে এসেছেন ষাটোর্ধ বয়সী ইকবাল হোসেন। কয়েকটি দোকানে ঘুরে ইলিশের দাম শুনলেন এক দোকানদারের কাছে। ছোট ইলিশ ৬শ টাকা প্রতি কেজির দাম শুনে কিনবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিলেন দোকানদারকে।

মাছের দাম নিয়ে কেন এমন প্রতিক্রিয়া, জানতে চাওয়া হলে ইকবাল হোসেন বললেন, “আপনি একটি বিষয় লক্ষ্য করেন। বাজারে সব জিনিসের দাম কিভাবে বাড়া শুরু করেছে। আমার কাছে মনে হয় বাজার একটি খেলনা পুতুল, সেই পুতুল বড় বড় ব্যবসায়ীরা যখন-তখন নাচাচ্ছে। সেই নাচের একটি অংশ হয়েছি আমাদের মতো সাধারণ মানুষ। না পারছি আমরা সেই অংশ থেকে বের হতে, না পারছে সরকার সেই পুতুল নাচ থামাতে।”

তিনি আরও বলেন, “বাজারে আসলেই হার্টবিট বেড়ে যায়। গত দুদিন আগে যে মরিচ কিনলাম ৯০-১০০ টাকা। সেই মরিচ এখন ১৫০ টাকা। বাজারে এমন কোনো জিনিসের দাম নেই যে বাড়েনি। ব্যবসায়ীরা যতই বলুক বাজারে জিনিসের দাম বাড়েনি, তারা ১০০ কথার মধ্যে ৮০টাই মিথ্যা বলে। তাদের কথার কোনো বিশ্বাস নেই। দাম বাড়বে না বলে রাতারাতি দাম বাড়িয়ে পকেট ভর্তি করে নিয়ে বাসায় চলে যায়।”

এই ক্রেতা আরও বলেন, “ সিন্ডিকেট করে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কাছে কি পরিমাণ টাকা ছোঁ মেরে নিচ্ছেন, তার কোনো হিসেব নেই। যদি সরকার ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কঠোরভাবে দমন করতো, তাহলে দাম বাড়িয়ে পণ্য বিক্রি করার চিন্তাও করতো না। মাঝেমধ্যে বাজারে দু’একটা ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান দেখা যায়। আসলে এই অভিযান করে কোনো লাভ নেই। জরিমানা করে কোনো লাভ নেই। আরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনলে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করতে পারতো না।”

 

Link copied!