• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়েছে মুডিস


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২৩, ১২:৪৮ পিএম
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়েছে মুডিস

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বৈশ্বিক ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি বা আন্তর্জাতিক ঋণমান (ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা) যাচাইকারী সংস্থা ‘মুডিস ইনভেস্টর সার্ভিস’। সংস্থাটি দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের ঋণমান এক ধাপ কমিয়ে ‘বিএ৩ থেকে বি১’-এ নামিয়েছে। সংস্থাটি ২০১০ সালে রেটিং দেওয়া শুরুর পর এই প্রথমবারের দেশের রেটিং কমানো হলো।

মঙ্গলবার (৩০ মে) মুডিস এর দেওয়া প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। তারা বলছে, বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এখন উঁচু মাত্রার দুর্বলতা ও তারল্যের ঝুঁকি রয়েছে। একই সঙ্গে চলমান সংকটের মধ্যে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশের ঋণমান কমানো হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী ঋণমান রেটিং অপরিবর্তিত ছিল অর্থাৎ বিএ৩ ধাপে ছিল।

তাদের রেটিং স্কেলে সর্বোচ্চ ‘এএএ’ থেকে সর্বনিম্ন ‘সি’ পর্যন্ত ২১টি নচ রয়েছে। তবে শর্ট টার্ম ইস্যুয়ার রেটিং (স্বল্পমেয়াদি ঋণ বাধ্যবাধকতা পূরণের সামর্থ্য) নির্ধারণ করেছে ‘নট প্রাইম’ শ্রেষ্ঠ গুণসম্পন্ন নয়, এমন মান অব্যাহত রাখার কথাও জানিয়েছে তারা।

মুডিস বলছে, চলমান সংকটের সময়টিতে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বাহ্যিক দুর্বলতা ও তারল্য ঝুঁকি এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার বিষয়টি সামনে এসেছে। চলমান ডলার ঘাটতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় দেশে বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতির ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। আমদানিতে ব্যাঘাত ঘটছে। দেখা দিচ্ছে জ্বালানি সংকট। সরকার এখনো আমদানি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগটি থেকে পুরোপুরি বের হয়ে আসতে পারেনি এবং একাধিক বিনিময় হার ও সুদহারের সীমার মতো অপ্রচলিত উদ্যোগ বিশৃঙ্খলার কারণ হয়ে উঠেছে। সর্বোপরি অর্থনীতির আকারের তুলনায় রাজস্ব আহরণ অত্যন্ত কম। বিষয়টিতে সরকারের নীতিগত সক্ষমতা ব্যাহত হচ্ছে। টাকার অবমূল্যায়নের কারণে স্বল্পমেয়াদের অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধের পরিমাণ বাড়ছে। একই সঙ্গে দুর্বল হচ্ছে সরকারের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ঋণমান কমানোর ফলে দেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। কেননা এটি বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে। এছাড়া দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যয় ও ঋণের সুদের হার বাড়বে। বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও বাংলাদেশে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হবেন।

বাংলাদেশের অর্থনীতির সাম্প্রতিক ইতিহাসে এটিকে ‘সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা’ বলে মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে দেওয়া পূর্বাভাস স্থিতিশীল রাখার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে মুডিস বলেছে, দেশটি কম সুদে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অর্থায়ন ও সহায়তা পেয়ে আসছে। ফলে বৈদেশিক ও রাজস্ব খাতে চাপ হালকা হতে পারে।

মুডিসের পূর্বাভাস, বাংলাদেশের মোট (গ্রস) রিজার্ভ আগামী দু-তিন বছর ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচেই থাকবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তমাফিক এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) বাদ দিয়ে হিসাব করা হলে নিট রিজার্ভের পরিমাণ আরো কমবে।

২০২৪ সালের জুনের শেষ নাগাদ রিজার্ভ পরিস্থিতি স্থিতিশীল হতে পারে বলে মনে করছে মুডি’স। তবে সেক্ষেত্রেও রিজার্ভ কভিডপূর্ব পর্যায়ে যেতে দু-তিন বছর লেগে যেতে পারে। 

মুডিস ইনভেস্টর সার্ভিস হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ইন্টিগ্রেটেড রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট ফার্ম বা সমন্বিত ঝুঁকি মূল্যায়ন ও ঋণমান নির্ণয়কারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। এটি ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে ঝুঁকি মূল্যায়ন ও ঋণমান নির্ণয়ের কাজ করে আসছে। বর্তমানে বিশ্বের ৪০টির বেশি দেশে ১৩ হাজারের অধিক জনবল নিয়ে বিস্তৃত রয়েছে তাদের কার্যক্রম।

Link copied!