ভূমি মন্ত্রণালয় সদ্য ঘোষিত নতুন নিয়মাবলির মাধ্যমে যারা এখনো জমির নামজারি করেননি বা নামজারি নিয়ে ঝামেলা ভোগ করছেন, তাদের জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সুখবর ঘোষণা করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় বলছে, এই বাস্তবায়নের ফলে জমির মালিকরা এখন সহজ, স্বচ্ছ ও দ্রুতভাবে নিজেদের নামজারি করতে পারবে এবং প্রচলিত অনিয়ম ও অসচ্ছলতা অনেকটাই নির্মূল হবে।
১. নতুন সুনির্দিষ্ট দলিল তালিকা ও সহজ আবেদন প্রক্রিয়া — নামজারির জন্য কোন কোন দলিল লাগবে, তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে; ডকুমেন্টস পূরণ করলে আবেদন বাতিল হওয়ার সুযোগ কমবে।
২. ওয়ারিশান সম্পত্তিতে যৌথ খতিয়ান ও ওয়ারিশান সনদ স্বীকৃতি — ভাগবণ্টন না থাকলেও ওয়ারিশান সনদ ও যৌথ খতিয়ান মাধ্যমে নামজারি করানো যাবে; অবৈধ আলাদা নামজারি প্রতিহত করা হবে।
৩. অটোমেশন এবং সার্ভিস এক্সপ্যানশন — জেলা/উপজেলা পর্যায়ে অটোমেশন বাড়িয়ে সমগ্র দেশে একযোগে নামজারি সিস্টেম চালু করা হবে; দলিল রেজিস্ট্রেশন থেকে খতিয়ান সংশোধন ও অনলাইন মালিকানা সনদ প্রদানসহ তিনটি সার্ভিস একসঙ্গে দেওয়া হবে।
কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ
বহু ভূমি মালিক নানা প্রশাসনিক জটিলতা, ঘুষখোরি বা দলিলগত ত্রুটির কারণে দীর্ঘদিন নামজারি করতে পারেননি। মন্ত্রণালয় বলছে—যেকোন আবেদনকারীর কাছে এখন একটি সুনির্দিষ্ট ডকুমেন্ট লিস্ট প্রদান করা হবে; এই লিস্ট অনুযায়ী কাগজপত্র দিলে নামজারি হওয়া বাধ্যতামূলক প্রক্রিয়া হিসেবে কার্যকর হবে। এতে অনিশ্চয়তা ও দুর্নীতির সুযোগ কমে যাবে।
নতুন নিয়মে কী কী কাগজপত্র লাগবে (প্রাথমিক স্টেজ)
জমির মালিকানার সম্পর্কিত রেজিস্ট্রিকৃত দলিল/দলিলের কপি (যদি নতুন মালিকানার দলিল থাকে)
পূর্ববর্তী মালিকের দলিল ও হস্তান্তরের প্রমাণপত্র
জমির ওপর সম্পূর্ণ খাজনা পরিশোধের রসিদ (যেদিন পর্যন্ত হস্তান্তর হয়েছে)
প্রযোজ্য ক্ষেত্রে জমির নকশা/ম্যাপ
আবেদনকারীর পরিচয়পত্র ও দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি; পূর্ববর্তী মালিক বা দাতার পরিচয়পত্র ও ছবি
মন্ত্রণালয় শর্ত সাফ করে বলেছেন: উপরের দলিল-দস্তাবেজ ছাড়া আবেদন করা গেলে নামজারি বাতিল/বঞ্চিত হতে পারে — তাই আবেদন করার আগে কাগজপত্র নিকটতম ভূমি অফিস/রেজিস্ট্রি অফিসে যাচাই করে নিন।
ওয়ারিশান জমির নতুন পথ — কী বদল এসেছে?
ওয়ারিশান সম্পত্তিতে যদি ওয়ারিশরা তাদের মধ্যে বন্টন না করতে পারে, তবু সম্পত্তি দীর্ঘদিন নামজারি ছাড়া রাখা যাবে না। এখন যদি বাটোয়ারা দলিল না থাকে —
প্রতিটি ওয়ারিশের নামে ওয়ারিশান সনদ সংগ্রহ করা যাবে (ইউনিয়ন/উপজেলা/সিটি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে)।
সেই সনদে ভিত্তি করে ভূমি অফিসে যৌথ খতিয়ানের জন্য আবেদন করলে ভূমি কমিশনার যৌথ খতিয়ান (who-owns-what) জারি করে দেবেন।
যৌথ খতিয়ান থেকে পরে কেউ যদি আলাদা খতিয়ান/রেজিস্ট্রেশন করতে চায়, তখন বাটোয়ারা দলিল যুক্ত করে আলাদা আবেদন করতে হবে।
মন্ত্রণালয় সতর্ক করেছে: বাটোয়ারা দলিল ছাড়া আলাদা আলাদা ভাবে নামজারি করলে তা অবৈধ গণ্য হবে; সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অটোমেশন: কীভাবে কাজ করবে
ভূমি মন্ত্রণালয় বলেছে, ইতোমধ্যে কয়েকটি উপজেলায় পাইলট চালু ছিল; জুলাই শেষ নাগাদ দেশের সব উপজেলায় অটোমেশন একযোগে চালু হবে। নতুন পদ্ধতিটি সংক্ষেপে—
১. রেজিস্ট্রি অফিসে তিনটি নির্দিষ্ট দলিল জমা হলে একটি দলিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভূমি অফিসে পাঠানো হবে।
২. ভূমি অফিস যাচাই শেষে রেজিস্ট্রি অফিসে No-Objection/Confirmation পাঠাবে।
৩. দলিল রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে ভূমি অফিস থেকে অনলাইনভাবে খতিয়ান সংশোধন ও মালিকানা সনদ জারি হবে—যাতে QR-কোড ও অনলাইন ভেরিফিকেশন সুবিধা থাকবে।
৪. আবেদনকারীর ফোনে অগ্রগতি সংক্রান্ত আপডেট দেয়া হবে (Public Relation Officer মারফত)।
মন্ত্রণালয়ের বার্তা ও সতর্কতা
ভূমি মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে—পদ্ধতি সঠিকভাবে অনুসরণ করলে নামজারি করানো বাধ্যতামূলক। যদিও অনিবার্য কেসে সময় লাগতে পারে, তবু তড়িঘড়ি করে ঘুষে নামজারি করার পুরোনো কায়দাগুলো বন্ধ। যারা নিয়ম ভঙ্গ করে নামজারি করানোর চেষ্টা করবেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পাঠকের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা (পরামর্শ)
আবেদন করার আগে সকল দলিল নকলসহ পূর্ণতায় জমা দিন।
ওয়ারিশান সম্পত্তি হলে আগাম ওয়ারিশান সনদ সংগ্রহ করে নিন।
ডকুমেন্টস জমা দিয়ে আবেদন করলে প্রাপ্ত ফোন নম্বরটি নিশ্চিত রাখুন; সময় সময় অগ্রগতি জানার জন্য প্রয়োজন হবে।
অনলাইন বা অটোমেশন সিস্টেমে ডকুমেন্ট যাচাইয়ের জন্য ভূমি অফিস-রেজিস্ট্রি অফিসে দেওয়া ইমেইল/QR-সুবিধা পরীক্ষা করুন।