• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

অব্যবস্থাপনা, দখল আর জলাবদ্ধতায় বন্দি গোলারটেক খেলার মাঠ


জাহিদ রাকিব
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২২, ১০:০১ পিএম
অব্যবস্থাপনা, দখল আর জলাবদ্ধতায় বন্দি গোলারটেক খেলার মাঠ

উঁচু-নিচু অসমতল খেলার মাঠ। কোথাও জমে আছে পানি, আবার কোথাও বড় বড় গর্ত। মাঠে শিশুদের খেলার সরঞ্জাম অকেজো হয়ে ঝুলছে। মাঠের অন্যপাশের অংশে মিরপুর দারুস সালাম থানার জব্দ বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাসে ডাম্পিং স্টেশন। এটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মিরপুর গোলারটেক মাঠের চিত্র।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঠের একপ্রান্তে ‘সূচনা সমিতি’ গড়ে উঠেছে। এছাড়া অন্যপাশে ‘এইচ বি ক্লাব’ অফিসও রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে গোলারটেক খেলার মাঠ যেন এক অব্যবস্থাপনার সমারোহ।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বহুদিন ধরে মাঠের এমন অব্যস্থাপনা। এ কারণে মাঠে খেলার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। চার একর জায়গা নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সবচেয়ে বড় খেলার মাঠ এটি। স্থানীয়ভাবে এটি গোলারটেক মাঠ নামে পরিচিত।

২০০৮ সালের ২৩ আগস্ট মিরপুর থানার কিছু এলাকা নিয়ে গঠিত হয় দারুস সালাম থানা। থানার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই সেখানে জব্দকৃত গাড়ি রাখা হচ্ছে বলে জানায় স্থানীয়রা। যার কারণে খেলতে আসা শিশু-কিশোরদের খেলার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে বলে জানান তারা।

স্থানীয়রা বলেন, “একসময় শিশু-কিশোরদের এই খেলার মাঠে সরগরম থাকতো। এখন মাঠের বেহাল দিন দিন জৌলুশ হারাচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতে মাঠে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। নেই পানি নিষ্কাশনের কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা। ফলে বৃষ্টি হলে এই মাঠ খেলার উপযোগী থাকে না।”

মাঠে নিয়মিত খেলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল আলী। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “মাঠে পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে পুরো মাঠে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে যায়। ফলে বৃষ্টি হলে মাঠে জমে থাকে পানি। আর এই সময় পুরো মাঠ খেলার অনুপোযোগী থাকে।”

মাঠে খেলতে আসা আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “আমাদের ক্রিকেট বল প্রায়ই গাড়ির ডাম্পিং স্টেশনে পড়ে। এছাড়া মাঠের একটি অংশ দখল থাকায় আমরা পুরো মাঠ ব্যবহার করতে পারছি না।”

মাঠে খেলাধুলা করেন এমন একাধিক যুবক সংবাদ প্রকাশকে অভিযোগ করেন, এই মাঠে আগে শর্টপিচ ক্রিকেট ও মিনিবারে ফুটবল খেলা যায়। অথচ আগে সেখানে বড় বড় টুর্নামেন্ট হতো। চারপাশে দাঁড়াতেন কয়েক হাজার দর্শক। ডে-নাইট পৃথক ম্যাচ হতো। খেলার মাঠটি শেষ করে দেওয়া হয়েছে। সবাই শুধু দেখেন, ভয় পান। যেন কারো কিছু করার নেই।

এদিকে মাঠের পাশেই শিশুদের খেলার জন্য সরঞ্জাম রাখা আছে। সেগুলো দীর্ঘদিন অকেজো হয়ে পড়ে আছে। তার ওপর বৃষ্টি পানি জমে পুরো জায়গা কাদা হয়ে আছে। ফলে গোলারটেক এলাকার শিশুরাও মাঠটি পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারছে না।

মাঠে থানার গাড়ি ডাম্পিং স্টেশন নিয়ে জানতে চাইলে দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “মাঠে আমাদের কোনো গাড়ি নেই। যেগুলো আছে, সেগুলো মামলার আলামত। আদালতে মামলা চলমান থাকায় আলামত হিসেবে গাড়িগুলো রাখা আছে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।”  

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “মাঠে থানার ডাম্পিং স্টেশন সরানোর বিষয়ে আমরা থানাকে অবহিত করেছি। তারা এসব মামলার আলামত হিসেবে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া তারা ডাম্পিংয়ের জন্য সরকারের কাছে জায়গা চেয়েছেন। সেই জায়গা পেলে তারা সেখানে এসব গাড়ি সরিয়ে নেবেন।”

ডিএনসিসির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, “যখন মাঠ থেকে গাড়িগুলো থানা সরিয়ে নেবে তখন আমরা আবার পুরো মাঠটি সংস্কার করবো। পাশাপাশি মাঠটি আধুনিকায়নের লক্ষ্যে আমাদের পরিকল্পনাও হাতে রয়েছে।”

Link copied!