শহীদ আলতাফ হোসেন আজ থেকে ৫২ বছর আগে এইদিনে নিজের বাড়ির সামনেই খুন হন পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হাতে। একজন কর্তব্যনিষ্ঠ সরকারি প্রকৌশলী ছিলেন। খুবই নিরীহ স্বভাবের মানুষ। রাজনৈতিক সচেতন ছিলেন। কিন্তু কোথাও অংশগ্রহণে ছিলেন না। একটাই দোষ ছিল, পাকিস্তানিরা কীভাবে শোষণ করছে ও বাঙালি বিদ্বেষী মনোভাব তাদের, তার সমালোচনা করতেন সবসময়।
অফিস থেকে এসে বাগান করতেন, ফুল ভালোবাসতেন। সবার মতই বাচ্চাদের ভালোবাসতেন। কিশোর উপন্যাস জোরে জোরে পড়ে শোনাতেন। সে আমলের সব পত্রিকা রাখতেন। এক ধরনের উচ্চ-মধ্যবিত্ত জীবন ছিল। পেশাগত জীবনেও ছিলেন খুবই দক্ষ। চাকরি করতেন ওয়াপদার পানি উন্নয়ন বিভাগে। সিলেট সার্কেলে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ছিলেন।
বহরমপুর কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করে, ঢাকায় এসে আহসানুল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ভর্তি হন। সেখানেও কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করে ওয়াপদাতে সহকারী ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে ঢোকেন। শুরুতে ইরিগেশন বিভাগে ছিলেন। ১৯৫৯ সালে ওয়াপদার উপপরিচালক হন।
ক্যালিফোর্নিয়াতে গিয়েছিলেন এক ডিপ্লোমায়। বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তার বিপুল জানাশোনা ছিল। পাকিস্তান বাহিনী সিলেটে আসে এপ্রিলের শুরুর দিকে। ৫ এপ্রিল দুপুরে এরকম খাবার সময়ই আসে পাকিস্তান বাহিনী। দরজা নক কর জিজ্ঞেস করে, তুমি মুসলমান না হিন্দু? তারপর বেঁধে নিয়ে যায় বাসার টিলার সামনে। বারবার আলতাফ হোসেন বলতে থাকেন, তিনি একজন সরকারের ইঞ্জিনিয়ার, একজন বড় কর্মকর্তা, কী তার অপরাধ? কথাবার্তা শোনার আগেই তার বুকে তিনটে গুলি হয়। মোটামুটি পরিবারের সামনেই লাশ হয়ে যান। দিনের অনেকটা সময় তার স্ত্রী লাশ নিয়ে কেঁদেছিলেন একা।
১৯৯৭ সালে আলতাফ হোসেনের নামে স্মারক ডাকটিকেট ইস্যু হয়। আলতাফ হোসেনও শহীদ বুদ্ধিজীবী। কিন্তু বিখ্যাত সুরকার ও সংগীত পরিচালক শহীদ আলতাফ মাহমুদকে যত মানুষ চিনলো, এই আলতাফ হোসেনকে তেমন কেউ চিনলো না। আমিও চিনতাম না যদি স্মৃতি একাত্তরে, ‘আমার স্বামী’ নামক ছোট লেখাটা না পড়তাম। খুবই কষ্ট ও যন্ত্রণাকে সঙ্গী করে তিনি তার সন্তানদের নিয়ে সেই শোক ও ট্রমা থেকে বের হয়েছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :