• ঢাকা
  • সোমবার, ১২ মে, ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২, ১৪ জ্বিলকদ, ১৪৪৪

সুস্থতায় খনার বচন


ইশতিয়াক হোসেন
প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২২, ০৪:২৩ পিএম
সুস্থতায় খনার বচন

আদীকাল থেকেই ভারত উপমহাদেশে সাধারন মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য বিষয়ক নানা রকম আচার- কৌশলের প্রচলন রয়েছে। ইতিহাসের নানা বই, পুথি এবং বয়োজেষ্ঠ্যদের মাধ্যমেও অনেক স্বাস্থ্যকর জীবন ব্যবস্থার কৌশল পদ্ধতি জানা যায়। খনার বচনেও আছে সুস্বাস্থ্যের নানা সূত্র। চলুন জেনে নেই এমনই কিছু স্বাস্থ্যকর কৌশল।

মন্ডা মিঠাই দূরে, ওজন যাবে সরে

মিষ্টি জাতীয় খাবার কম-বেশি সবার পছন্দের। সামাজিক ধর্মীয় সব অনুষ্ঠানে মিষ্টিজাতীয় খাবার প্রচলিত। এছাড়াও ব্যক্তিগত ভাবেও অনেকে মিষ্টি খাবার গ্রহণ করে। তবে অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার বর্জন করাটাই ভালো। মিষ্টি জাতীয় খাবারে প্রচুর ক্যালরি থাকে। অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার শরীরে চর্বি জমায় ও ওজন বাড়ায়। যা নানা মরনব্যাধির কারণ।

আঁতে তিতা দাতে নুন, উদর ভরো তিন কোণ 

দাঁতের যত্নে আমরা কত কিছুই না করি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দাঁতের যত্নে টুথপেস্ট, ব্রাশ ব্যবহার হয়। গ্রাম বাংলায় এখনও অনেকে আধুনিক পদ্ধতির পরিবর্তে ঘরোয়া কৌশল ব্যবহার করে। যেমন আম, জাম বা নিম গাছের ডাল। ঘরোয়া পদ্ধতির মধ্যে নিমের পাতা এবং সামান্য লবণ মিশিয়ে দাঁত পরিষ্কার করলে দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। দাঁত রোগহীন এবং মজবুত থাকে। আবার সুস্বাস্থ্যের জন্য খাদ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। অপরিকল্পিত আহার স্থুলতাসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে আধুনিক জীবন ব্যবস্থায় হাঁটাচলা অনেক কমে গেছে। সুস্থ থাকতে হলে পাকস্থলীর তিন ভাগের এক ভাগ পানি, এক ভাগ জায়গা খাবার ও এক ভাগ খালি রেখে খাদ্য গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

হলুদ ও নিম  দাও , সোনার ত্বক ফিরে পাও

ত্বকে কাঁচা হলুদ ও নিম পাতার রস ব্যবহার করলে ত্বক সোনার মতো উজ্জ্বল হবে। চা চামচের ৪ ভাগের ১ ভাগ কাঁচা হলুদ বাটা, আধা চা চামচ লেবুর রস, ১ চা চামচ নিম পাতার রস মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ ত্বকে ১৫ মিনিট  লাগিয়ে রাখুন। পরে কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন। এই মিশ্রণ নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক উজ্জ্বল হবে।

যে না মাখে পাকা পেপে, তার চামড়া খসখসে

কাঁচা বা পাঁকা পেপে তরকারি বা ফল হিসাবে বেশি গ্রহণ করা হয়। তবে ত্বকের পরিচর্চায়ও এর ব্যবহার আছে। পাঁকা পেপেতে পর্যাপ্ত ভিটামিন এ, প্যাপেইন ও প্রোটিন থাকে। ত্বকে পাঁকা পেপে মাখলে চামড়া চকচকে থাকে এবং কুঁচকে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়।

নিত্য নিত্য ফল খাও, বদ্যি বাড়ি নাহি যাও

আমাদের দেশে বিভিন্ন মৌসুমে নানা প্রকারের ফল বাজারে পাওয়া যায়। সে সঙ্গে বিদেশি ফলও আছে অনেক। এছাড়া কিছু ফল আছে ঔষুধি গুণাগুণ সমৃদ্ধ। ফলে বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন থাকে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং প্রাকৃতিক এন্টি অক্সিডেন্ট শরীরের ওজন কমাতে সহায়তা করে। কাজেই প্রতিদিন ফল খেলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া প্রয়োজন পড়ে না। 

খেতে বসলে কীসের দায়, পাকনা ধান জলে যায় 

সুস্থ জীবনের জন্য খাদ্য ব্যবস্থাপনা যেমন জরুরি, তেমনই খাবার গ্রহণের দিকেও নজর দিতে হবে। খাবার ভালো করে চিবিয়ে খেলে হজমক্রিয়া সহজ হয়। অবশ্যই ধীর স্থির ভাবে খাবার গ্রহণ করতে হবে। কোনোক্রমেই দ্রুত খাবার গ্রহণ করা যাবে না। কাজেই জমির পাকা ধান যদি বানের পানিতে ভেসেও যায় তবু খাবার গ্রহণের সময় ব্যস্ত বা তরিঘরি করা উচিত নয়। প্রশান্ত মনে খাদ্য গ্রহণ স্বাস্থের জন্য উপকারি।

পান্তা ভাত খাও, রক্তচাপ কমাও 

পান্তা ভাতে পটাশিয়ামের পরিমান বেশি থাকে এবং সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকে। পটাশিয়াম স্নায়ুর কাজকর্ম , পেশির সংকোচন প্রসারণ ও দেহে তরলের ভারসাম্য স্বাভাবিক রাখে। এছাড়াও স্ট্রোক ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধেও পটাশিয়াম ব্যাপক কার্যকর। পান্তা ভাতে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় কোষ্টকাঠিন্য দূর হতে সহায়তা করে। পান্তা ভাতে প্রচুর পরিমাণ আয়রণ থাকায় মানব দেহের রক্ত স্বল্পতা দূর হয়। কাজেই পান্তা ভাত শরীরের উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে এবং রক্তচাপজনিত ঝুঁকি কমায়।

খেয়ে উদাইম্যা ভাত, শইল করে উত্পাত

রান্না করা খাবার স্বাভাবিক তাপমাত্রায় দুই ঘণ্টার বেশি রাখা যাবে না। এর বেশি সময় অতিক্রম করলে সেই খাবার অবশ্যই গরম করে নিতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খাবার অবশ্যই ঢেকে রাখতে হবে। খাবার ঢেকে না রাখলে এর মধ্যে পোকামাকড়, মাছি বসে এবং ধুলো বালি পড়ে। কাজেই ঢাকা ছাড়া খাবার খেলে শরীর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

স্বাস্থ্য বিষয়ক এসব উপদেশ সম্পূর্ণ ঘরোয়া কৌশল হলেও কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত। যুগ যুগ ধরে ঘরে এসব ঘরোয়া পদ্ধতির প্রচলণ রয়েছে। কাজেই আপনিও সুখী সুন্দর জীবনের জন্য কিছু সহজ কৌশল মেনে চলতে পারেন। তবে যেকোনও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একজন স্বাস্থ্য   বিশেষজ্ঞের পরামর্শই যথার্থ।

Link copied!