• ঢাকা
  • রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৫ মুহররম ১৪৪৬

প্রতিদিন ব্যবহৃত যেসব প্লাস্টিক পণ্য জীবনের ঝুঁকি বাড়ায়


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০২৫, ০৭:১৪ পিএম
প্রতিদিন ব্যবহৃত যেসব প্লাস্টিক পণ্য জীবনের ঝুঁকি বাড়ায়
ছবি: সংগৃহীত

প্লাস্টিক পণ্য দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। বোতল, বক্স, খাবার রাখার প্যাকেট, চায়ের কাপ, বাজারের ব্যাগ প্রায় প্রতিটি কাজে  প্লাস্টিক ব্যবহার হচ্ছে। কারণ প্লাস্টিক সহজলভ্য বস্তু। তবে জানেন কি, এই সহজলভ্য ও সস্তা বস্তুটিই নীরবে শরীরে বিষ ঢেলে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। 

গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু নির্দিষ্ট ধরণের প্লাস্টিক পণ্য মানবদেহে হরমোন ভারসাম্য নষ্ট, ক্যানসার, বন্ধ্যাত্ব, গর্ভপাত এমনকি হৃদরোগের ঝুঁকি পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। যা আমরা প্রতিদিন ব্যবহার করি, তা থেকেই বিষাক্ততা ছড়ায়। 

চলুন জেনে নিই, প্রতিদিন ব্যবহৃত কোন কোন প্লাস্টিক পণ্য আমাদের জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করছে।

প্লাস্টিক পানির বোতল ও পানির গ্লাস

প্লাস্টিক বোতলে পানি রাখা ও বারবার ব্যবহার করা খুবই সাধারণ অভ্যাস। তবে বোতলে ব্যবহৃত পলিকার্বোনেট নামের প্লাস্টিক থেকে বিসফেনল-এ (BPA) নামক একধরনের রাসায়নিক নির্গত হয়। এটি মানবদেহে হরমোন ভারসাম্য নষ্ট করে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য BPA অত্যন্ত ক্ষতিকর, কারণ এটি তাদের মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা দিতে পারে। গরম পানি বা রোদে থাকা বোতলে BPA নিঃসরণ আরও বেড়ে যায়।

মাইক্রোওয়েভে ব্যবহৃত প্লাস্টিক কন্টেইনার

অনেকেই খাবার গরম করতে প্লাস্টিকের পাত্র ব্যবহার করেন। বাজার চলতি খাবার ডেলিভারির বক্সে খাবার গরম করে থাকেন। কিন্তু এই প্লাস্টিক উচ্চ তাপে গলে ডাইঅক্সিন বা অন্যান্য বিষাক্ত কেমিক্যাল নির্গত করে, যা ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। ‘মাইক্রোওয়েভ সেফ’ লেখা থাকলেও তা সবসময় নিরাপদ নয়।

টিফিন বক্স ও পানির ফ্লাস্ক

বাচ্চাদের স্কুল টিফিন বক্স ও পানির ফ্লাস্ক প্রায়ই সস্তা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হয়। এসব পণ্যে ফথালেটস  থাকে, যা শরীরে হরমোনের কাজে বিঘ্ন ঘটায়।এছাড়াও এটি ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমায় এবং প্রজননক্ষমতা হ্রাস করে।

চায়ের প্লাস্টিক কাপ

রাস্তার ধারে চা বিক্রেতারা অনেক সময় পাতলা প্লাস্টিক কাপ ব্যবহার করেন। গরম পানির সংস্পর্শে এলেই এই কাপ থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক বেরিয়ে আসে। এটি কেবল পাকস্থলীর ক্ষতি করে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে লিভার ও কিডনিতেও প্রভাব ফেলে।

খাবার মোড়ানো প্লাস্টিক

অনেকেই রান্না করা খাবার ফ্রিজে রাখতে বা ফাস্টফুড মোড়াতে ক্লিং ফিল্ম বা পাতলা প্লাস্টিক ফয়েল ব্যবহার করেন। এই পাতলা প্লাস্টিক উচ্চ তাপমাত্রায় বা গরম খাবারের সংস্পর্শে গিয়ে রাসায়নিক নির্গত করে, যা হজমের সমস্যা ও হরমোনজনিত রোগ সৃষ্টি করতে পারে।

প্লাস্টিক ব্যাগ

বাজার করার সময় আমরা প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করি। অনেক সময় গরম গরম তরকারি বা ডাল সরাসরি এই ব্যাগেই ঢেলে আনা হয়। এতে থাকা রাসায়নিক যেমন স্টাইরিন ও পিভিসি খাবারে মিশে গিয়ে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

প্লাস্টিক স্ট্র

রেস্তোরাঁ বা ফাস্টফুড চেইনে নিয়মিত প্লাস্টিক স্ট্র ব্যবহার করা হয়।  এই স্ট্রতে থাকা BPA ও অন্যান্য কেমিক্যাল শরীরের কোষের ডিএনএ গঠন পর্যন্ত নষ্ট করতে পারে। বিশেষ করে বারবার ব্যবহৃত স্ট্র সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর।

দুধ বা তেল রাখার প্লাস্টিকের বোতল

গ্রামে বা শহরের অনেকেই তরল দুধ, সয়াবিন তেল বা সরিষার তেল রাখার জন্য পুরনো প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার করেন। এটি খুবই ক্ষতিকর অভ্যাস। তেলে প্লাস্টিকের রাসায়নিক মিশে গিয়ে কিডনি ও লিভার সমস্যার কারণ হতে পারে।

প্রতিরোধে যা করবেন

BPA-Free লেবেলযুক্ত প্লাস্টিক ব্যবহার করুন। প্রতিদিনের ব্যবহারযোগ্য গ্লাস, স্টেইনলেস স্টিল বা সিরামিক পাত্র ব্যবহার করুন। খাবার গরম করার সময় কাচের পাত্র ব্যবহার করুন। রিসাইকেল মার্কিং দেখে প্লাস্টিকের ধরণ নির্ধারণ করুন। ‘#৩’, ‘#৬’, ও ‘#৭’ প্লাস্টিক সবচেয়ে ক্ষতিকর। এগুলো এড়িয়ে চলুন।

Link copied!