ক্ষমতায় বসেই প্রথম দিনেই একের পর এক নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পুরোনো অনেক আইন বাতিল করেছেন। অনেক কিছুই এখন ওলটপালট। তার তড়িঘড়ি জারি করা নির্বাহী আদেশের প্রভাব কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, পড়তে পারে বিশ্বজুড়ে। শুরু হয়ে গেছে তোলপাড়।
ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে সোমবার জাঁকজমকপূর্ণ এক অনুষ্ঠানে শপথ নেন ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প। এরপর দুই দফায় প্রায় অর্ধশত নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন তিনি। প্রথম দফায় রাজধানীর ক্যাপিটল ওয়ান অ্যারেনায় অভিষেক প্যারেডের পরপরই, আর দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে।
অভিবাসন থেকে পরিবেশ, সরকারি নিয়োগ থেকে নাগরিকত্ব—নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কোন বিষয়ে বদল আনেননি ট্রাম্প? ক্ষমতায় বসে ২০২১ সালে ক্যাপিটলে হামলায় দোষী সাব্যস্ত দেড় হাজার জনকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।
ক্ষমতায় বসার দিনই অবৈধ অভিবাসীদের ওপর খড়্গহস্ত হওয়ার কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। সে কথার কোনো নড়চড় হয়নি। সোমবার নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন তিনি। এখন চাইলে সেখানে মার্কিন সেনাদের মোতায়েন করতে পারবেন।
সংবিধানের তোয়াক্কা না করে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের একটি বিধানও বাতিল করেছেন ট্রাম্প। এতে এখন থেকে ৩০ দিন পর যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানেরা দেশটির নাগরিকত্ব পাবে না। ট্রাম্পের এই আদেশ মার্কিন সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনের বিরুদ্ধে যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের প্রক্রিয়াও শুরু করেছেন ট্রাম্প। সংস্থাটিতে সবচেয়ে বেশি অনুদান দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩ সালের হিসাবে তা মোট অনুদানের ১৮ শতাংশ। সেখান থেকে সরে আসতে চান নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
সোমবার ট্রাম্পের নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়বস্তু ছিল পররাষ্ট্র দপ্তরও। এদিন সীমান্ত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দপ্তরের এক ডজনের বেশি জ্যেষ্ঠ কূটনীতিককে পদত্যাগ করতে বলা হয়। সিনেটের ভোটে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মার্কো রুবিও।
এরই মধ্যে সরকারের চারজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তারা হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের খেলাধুলা, স্বাস্থ্য-সবলতা ও পুষ্টিবিষয়ক পরিষদের হোসে আন্দ্রেজ, জাতীয় অবকাঠামো উপদেষ্টা পরিষদের মার্ক মিলে, উইলসন সেন্টার ফর স্কলার্সের ব্রায়ান হুক ও রপ্তানিবিষয়ক পরিষদের কেইশা ল্যান্স বটমস।
অভিষেকের দিন বৈশ্বিক অঙ্গনে সাড়া ফেলার মতো কিছু বক্তব্য দিয়েছেন ট্রাম্প। উঠে এসেছে পানামা খাল নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও। নির্বাচনে জয়ের পর কয়েক সপ্তাহ ধরে বেশ কয়েকবার পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। আর সোমবার বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ ওই পানিপথের চারপাশে চীনের প্রভাব বাড়ছে এবং চীনই কার্যত পানামা খাল পরিচালনা করছে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম দিনেই ৯০ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি উন্নয়ন সহায়তা স্থগিত করেছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের এ তো কেবল শুরু, আরও কত কিছুই যে বিশ্ববাসীকে দেখতে হবে।