• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ রমজান ১৪৪৫

ক্ষুধা ভোলাতে সন্তানদের ঘুমের ওষুধ দিচ্ছেন আফগান বাবা-মায়েরা


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২২, ০৩:৩৯ পিএম
ক্ষুধা ভোলাতে সন্তানদের ঘুমের ওষুধ দিচ্ছেন আফগান বাবা-মায়েরা

শীত চলে এসেছে আফগানিস্তানে। তালেবান শাসনে এটি আফগানদের দ্বিতীয় শীত। চারপাশের মতো তাদের জীবনের উত্তাপও কমে আসছে ধীরে ধীরে। দুর্ভিক্ষ থেকে কেবল কয়েক পা দূরে আছেন তারা। নিজেরাও খাবার পাচ্ছেন না, খাওয়াতে পারছেন না নিজেদের সন্তানদেরও। অর্থাভাব আর খাদ্যাভাবে তারা এমন কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন, স্বাভাবিক সময়ে যা মানুষ চিন্তাও করতে পারে না।

তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আটকে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে সরকার গঠন করলেও মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না আফগানিস্তানের নবগঠিত সরকার। যার প্রভাব সরাসরি পড়ছে সাধারণ মানুষের ওপর। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় স্থবির হয়ে আছে অর্থনীতি। ফলে আয়-উপার্জন না থাকায় অর্থকষ্টে জর্জরিত তাদের জীবন।

বিবিসি জানায়, অভাবের তাড়নায় তারা তাদের মেয়েদের বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন, নিজের কিডনি বিক্রি করে দেনা মেটাচ্ছেন অনেকে, ক্ষুধা ভোলাতে কেউ কেউ নিজের সন্তানকে খাওয়াচ্ছেন ঘুমের ওষুধ।

আব্দুল ওয়াহাব নামের এক আফাগান বলেন, “আমাদের ঘরে খাবার নেই। বাচ্চারা সারাক্ষণ কাঁদে। ক্ষুধায় ঘুমাতে পারে না। তাই আমরা ফার্মেসি থেকে ঘুমের ওষুধ এনে ওদের খাওয়াই। ওষুধ খেয়ে ওরা ঘুমিয়ে থাকে।”

কত সংখ্যক মানুষ তাদের সন্তানদের ঘুমের ওষুধ খাওয়াচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে আফাগানরা বলেন, “অনেকেই খাওয়াচ্ছে। তার মধ্যে আমরাও আছি।”

কথা বলার একপর্যায়ে ওষুধের একটি পাতাও বের করে দেখান গোলাম হজরত নামের একজন। তার ছয় সন্তানের একজনের বয়স মাত্র এক বছর। তাকেও এই ওষুধ খাওয়ান গোলাম।

ডাক্তারদের মতে, পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না, এমন শিশুদের এই ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর ফলে তাদের লিভার বা যকৃত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তা ছাড়া অবসাদ, ঘুম এবং আচরণগত সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে।

আফগানিস্তানের নিম্ন আয়ের বেশির ভাগ মানুষরা দিনমজুর। তবে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর কাজের পরিমাণ কমে গেছে। আর এখন কাজ পেলেও দিনে আশি বা একশ টাকার বেশি আয় করতে পারেন না তারা।

স্থানীয় এক ফার্মেসিতে দেখা যায়, একটি রুটির টাকা দিয়ে পাঁচটি ঘুমের ওষুধ কেনা যায়। আর একটি রুটি কয়েকজন ভাগাভাগি করে খান তারা। সাধারণত দিনে এক বেলা তারা খাবার খেতে পারেন। এক নারী জানান, সকালে তারা একটি শুকনো রুটির একাংশ খান আর রাতের বেলায় রুটির বাকি অংশ পানিতে ভিজিয়ে খান।

জাতিসংঘ জানিয়েছে মানবিক বিপর্যয় উন্মোচন হতে শুরু করেছে আফগানিস্তানে। এই ভুক্তভোগীদের দিকে তাকাচ্ছে না কেউ। এমনকি তালেবানরাও না।

ক্ষুধা এক নীরব ঘাতক। এই ঘাতকের প্রভাব তৎক্ষণাৎ উপলব্ধি করা যায় না। আর আফগানদের ক্ষুধা কারও নজরে আসবেও না। কারণ কারো কিছু আসে যায় না!

Link copied!