সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে অনলাইনে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকশ গোপন নথি ফাঁস হয়। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরের কিছু নথি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু নথি ‘অতি গোপনীয়’।
যুদ্ধে ইউক্রেনকে কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো সহায়তা করতে পারে, তার বিস্তারিত কৌশল বোঝা যায় এসব নথি থেকে। বোঝা যায় যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি। রয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রের মানচিত্র, তালিকা ও ছবি।
এবার জানা গেল ইউক্রেনে অবস্থান করছেন পশ্চিমা দেশগুলোর স্পেশাল ফোর্সের সেনারা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বুধবার (১২ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
তবে এই নথিতে উল্লেখ নেই এসব সেনা ইউক্রেনের কোন অঞ্চলে রয়েছেন এবং কী করছেন। মার্কিন সরকার বলছে যে তারা তথ্য ফাঁসের উৎস তদন্ত করছে।
বিবিসি বলছে, ফাঁসকৃত নথিগুলোর মধ্যে একটি হলো ২৩ মার্চের। ওই নথিতে উল্লেখ করা আছে ইউক্রেনে যুক্তরাজ্যের স্পেশাল ফোর্সের বৃহত্তম দল রয়েছে। তাদের দল রয়েছে ৫০টি, লাটভিয়ার ১৭, ফ্রান্সের ১৫, যুক্তরাষ্ট্রের ১৪ এবং নেদারল্যান্ডসের স্পেশাল ফোর্সের ১টি দল অবস্থান করছে সেখানে।
ইউক্রেনে পশ্চিমা দেশগুলোর স্পেশাল ফোর্সের সেনাদের সংখ্যা খুবই কম। তবে এ নিয়ে সন্দেহ নেই এ বিষয়টি উত্তেজনা সৃষ্টি করবে। রাশিয়া এ ইস্যুকে সামনে আনার চেষ্টা করবে। দেশটি দাবি করবে, তারা শুধুমাত্র ইউক্রেনের সেনাদের সঙ্গে নয়, ন্যাটোর সেনাদের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করছে।
এদিকে ইউক্রেনে নিজেদের স্পেশাল ফোর্সের ৫০টি দল থাকার বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি যুক্তরাজ্য। তবে দেশটি জানিয়েছে, যেসব গোপন নথি ফাঁস হয়েছে সেগুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে, ‘এগুলো মারাত্মক পর্যায়ের ভুল’ তথ্য।
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়া নথিগুলো আসল বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও বলা হচ্ছে, এসব নথির কিছু অংশ কাটছাঁট করা হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় আসল তথ্য মুছে দিয়ে নকল তথ্য জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
নথিতে আরও দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র অনুমান করছে, চলমান যুদ্ধে রাশিয়ার ১ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ থেকে ২ লাখ ২৩ হাজার সেনা হতাহত হয়েছেন। ইউক্রেনের দিক থেকে এ সংখ্যা ১ লাখ ২৪ হাজার ৫০০ থেকে ১ লাখ ৩১ হাজারের মধ্যে। তবে দুটি সংখ্যা নিয়ে পেন্টাগনের সংশয় রয়েছে। পেন্টাগন মনে করছে, এতে তথ্যের ঘাটতি থাকতে পারে।
সর্বশেষ ফাঁস হওয়া সামরিক নথিগুলো আরও বেশি সংবেদনশীল। ইউক্রেন যুদ্ধ এখন বেশ জটিল মুহূর্তে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে যুদ্ধের কৌশল নিয়ে গোপন নথি ফাঁসের ঘটনা ইউক্রেনকে চাপে ফেলতে পারে। এ কারণে এবারের বসন্তে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণের কৌশল বদলাতে হতে পারে কিয়েভকে।
যদিও ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের দাবি, বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্যে রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে এসব নথি ছড়িয়েছে। তবে কিছু সামরিক ব্লগারের দাবি, গোপন নথি ফাঁসের এ ঘটনা যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ কমান্ডারদের বিভ্রান্ত করার জন্য ‘পশ্চিমা চক্রান্তের’ অংশ। কেননা ইউক্রেনের সম্ভাব্য যুদ্ধকৌশল সম্পর্কে রুশ গোয়েন্দাদের না জানার কোনো কারণ নেই।
এদিকে ইউক্রেনে ফরাসি সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন কিংবা অভিযানে কোনো ফরাসি সেনা জড়িত নয় বলে জানিয়েছে ফ্রান্স। দেশটির সংবাদমাধ্যম লে মন্ডের বরাত দিয়ে পলিটিকো এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
সশস্ত্র বাহিনী মন্ত্রী সেবাস্তিয়েন লেকরনু বলেছেন, ইউক্রেনে অভিযানে কোনো ফরাসি সেনা জড়িত নয়।
কিন্তু কারা ফাঁস করেছে এসব গোপন নথি? এবং কেন:
মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম ডিসকর্ডে প্রথমে ফাঁস হয় নথিগুলো। সেখান থেকে ফোরচ্যান ও টেলিগ্রামে ছড়ায়। তবে এ নথিগুলোর মূল ফাঁসকারী কে তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি।
গত ৪ মার্চ মাইনক্রাফট খেলোয়াড়দের একটি ডিসকর্ড সার্ভারে খেলোয়াড়দের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বিতর্ক হয়। বিতর্কের এক পর্যায়ে একজন ব্যবহারকারী লেখেন, `এই নাও, কিছু ফাঁস হওয়া নথি দেখ।` এরপরই তিনি ১০টি গোপন নথি প্রকাশ করে দেন।
এ ধরনের ফাঁস পদ্ধতি অস্বাভাবিক হলেও একেবারে স্বতন্ত্র কিছু নয়। সর্বশেষ এ ফাঁসটি অনেক বেশি সংবেদনশীল এবং এর মাধ্যমে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ইউক্রেন এতদিন তার `অপারেশনাল সিকিউরিটি` রক্ষা করে এসেছে। এখন যুদ্ধের এ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসে এভাবে গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই নাখোশ হবে দেশটি।
তবে ফাঁস হওয়া নথিগুলোতে এমন কোনো তথ্য নেই যেখানে ইউক্রেনের বসন্তকালীন আক্রমণের গতিপ্রকৃতি উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে তদন্তকারী ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ বেলিংক্যাটের অ্যারিক টোলার বলেন, “শুরুতে মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম ডিসকোর্ড থেকে ফোরচ্যান ও টেলিগ্রামে এসব নথি ছড়িয়ে পড়েছিল। এ প্রক্রিয়া সম্পর্কে ইতিমধ্যে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন। গত মার্চের শুরুর দিকে কম্পিউটার গেমাররা এসব নথি দেখতে পান।”








-20251028132147.jpg)


























