ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যে উপজাতীয় গোষ্ঠীগুলোর বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর রাজ্যজুড়ে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি করা হয়েছে। সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘চরম পরিস্থিতিতে’ বিক্ষোভকারীদের ‘দেখা মাত্র গুলির’ নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার।
এদিকে বৃহস্পতিবার কংগ্রেসে কেন্দ্র এবং বিজেপিকে উদ্দেশ্য করে বলেছে, অন্তত একজন সিনিয়র নেতা যেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগ দাবি করেন। মণিপুর রাজ্যে এরকম অস্থিরতা বিরাজ করছে, সেখানে আগুন জ্বলছে আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং শাহ উভয়ই কর্ণাটকে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত।
বিজেপি কর্ণাটকে “ডাবল ইঞ্জিন সরকারের” স্লোগান দিয়ে নতুন করে দায়িত্ব চাইছে। এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস বলেছে মণিপুর বিজেপির “ডাবল-ইঞ্জিন" সরকারের বাস্তবতার চিত্র।
শুক্রবার (৫ মে) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খার্গ বলেছেন, “বিজেপির ঘৃণা, বিভাজনের রাজনীতি এবং ক্ষমতার লোভ এই বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী। এছাড়া কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী মোদিকে মণিপুর রাজ্যে শান্তি ও স্বাভাবিক অবস্থা পুনরুদ্ধারের দিকে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছেন যে, নির্বাচন পরে আয়োজন করা যেতে পারে এবং কেন্দ্রের উচিত আগে মণিপুরে শান্তি ফিরিয়ে আনা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে তিনি বলেছেন, “এটা রাজনীতির সময় নয়। রাজনীতি এবং নির্বাচন পরেও করা যেতে পারে, কিন্তু আমাদের সুন্দর রাজ্য মণিপুরকে আগে রক্ষা করতে হবে। তাই আমি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রথমে মণিপুরের যত্ন নেওয়া এবং সেখানে শান্তি ফিরিয়ে আনতে অনুরোধ করছি। আমি আমাদের মণিপুরের ভাই-বোনদেরও শান্ত থাকার, শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানাই।”
কংগ্রেসের কমিউনিকেশন প্রধান জয়রাম রমেশ বলেন, “বিজেপি সরকার গঠনের ১৫ মাসেরও কম সময়ে পুরো মণিপুর রাজ্য আগুনে জ্বলছে অস্থির হয়ে উঠেছে। সমাজে অসন্তোষ বৃদ্ধি পেয়েছে, ইন্টারনেট এবং সামাজিক মাধ্যম বন্ধ করা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী অবরুদ্ধ, বিধায়করা ডান, বাম এবং কেন্দ্র থেকে পদত্যাগ করছেন অথচ প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কী করছে?… তারা কর্ণাটকে ঘুরতে ব্যস্ত… কর্ণাটককে নতুন মেরুকরণ করছে।”
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতীয় সেনাবাহিনী বিক্ষুব্ধ এলাকাগুলোতে ফ্ল্যাগ মার্চ করে। সেনাবাহিনী বলছে, বুধবার রাত জুড়ে তারা সাড়ে ৭ হাজারেরও বেশি বেসামরিক লোককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়েছে।
এ রাজ্যের মেইতেই সম্প্রদায়, যারা মণিপুরের জনসংখ্যার কমপক্ষে ৫০ শতাংশ। তারা তপশিলি উপজাতি (এসটি) হিসেবে শ্রেণীভুক্ত হওয়ার জন্য গত কয়েক বছর ধরেই দাবি জানিয়ে আসছিল।
ভারতে যে সব সম্প্রদায় ঐতিহাসিকভাবে সমান সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে, তাদের এসটি শ্রেণিভুক্ত করে সরকারি চাকরি, কলেজে ভর্তি ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির আসন সংরক্ষণ করা হয়।
গত মাসে মণিপুর হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে মেইতেই সম্প্রদায়ের দাবি বিবেচনার নির্দেশ দেয়। কিন্তু রাজ্যের অন্য উপজাতিগুলোর মধ্যে এতে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। মেইতেইদের এসটি মর্যাদা দেওয়া হলে তাদের চাকরির জন্য তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। এর প্রতিবাদ জানাতে মঙ্গলবার মণিপুরের অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়নের ডাকা এক মিছিলে হাজার হাজার লোক যোগ দেয়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়, চুড়াচান্দপুর জেলায় সমাবেশে আসা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আরেকদল লোকের সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপর বিষ্ণুপুর এবং আরও কয়েকটি এলাকা থেকেও সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়।
আপনার মতামত লিখুন :