• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

১৯৭৯ সালের পর সবচেয়ে উষ্ণতম দিন দেখল বিশ্ব


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ৫, ২০২৩, ১১:৩০ এএম
১৯৭৯ সালের পর সবচেয়ে উষ্ণতম দিন দেখল বিশ্ব

বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা ভয়াবহ হারে বেড়েই চলেছে। ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বের তাপমাত্রা সার্বিকভাবে ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই কারণেই বিশ্বের নানা প্রান্তে আগের চেয়ে বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে। গরমের তীব্রতা এতটাই বেশি যে, এতে অনেকে অসুস্থও হয়ে পড়ছেন।

এরকম এক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া পূর্বাভাস সংস্থা ন্যাশনাল সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল প্রেডিকশন (এনসিইপি) জানিয়েছে, সোমবার (৩ জুলাই) ইতিহাসে ‘সবচেয়ে গরম’ দিন দেখেছে বিশ্ব। প্রথমবারের মতো বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ১৭ দশমিক ০১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পৌঁছেছে। যা ২০১৬ সালের আগস্ট মাসের রেকর্ড ১৬ দশমিক ৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে ছাড়িয়ে গেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।

বিজ্ঞানীরা আগেই এ বিষয়ে সতর্ক করে জানিয়েছিল, আবহাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এল নিনো। এল নিনোর প্রভাবে আরও বেশি উষ্ণ ও শুষ্ক হয়ে উঠতে পারে ‍পৃথিবী। অতি উত্তপ্ত এই বিশ্ব আগামী কয়েক বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো তাপমাত্রা বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছাড়িয়ে যাবে। পাশাপাশি মানবজাতির কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমন বিরূপ জলবায়ুর জন্য দায়ী।

১৯৭৯ সালে তাপমাত্রা ও আবহাওয়ার খবরের স্যাটেলাইট মনিটরিং রেকর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩ জুলাইয়ের তাপমাত্রা আগের সব দিনের চেয়ে বেশি ছিল। এছাড়া বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ১৯ শতকের শেষ দিকে যখন আবহাওয়ার যান্ত্রিক রেকর্ড শুরু হয়। তার পর থেকে ২০২৩ সালের ৩ জুলাই সবচেয়ে উত্তপ্ত দিন ছিল।

জলবায়ু গবেষক লিওন সাইমন্স বলেছেন, “বিশ্বের জলবায়ু নিয়ে নির্ভরযোগ্য রেকর্ড পাওয়ার পর থেকে প্রথমবারের মতো গড় বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১৭ সেন্টিগ্রেডে পৌঁছেছে। এখন যেহেতু এল নিনোর পর্যায় শুরু হয়েছে আমরা আগামী বছরে আরও অনেক বেশি দৈনিক, মাসিক এবং বার্ষিক রেকর্ড ভাঙার অপেক্ষায়।”

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে তীব্র গরম পড়েছে। উত্তর আফ্রিকার মানুষ তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও পৌঁছাতে দেখেছেন। এমনকি অ্যান্টার্কটিকা, যেখানে বর্তমানে শীতকাল চলছে, সেখানে তাপমাত্রা বেশি প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে।

এছাড়া মেক্সিকোতে তীব্র তাপপ্রবাহে ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত দুই সপ্তাহে অতিরিক্ত গরমে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। 

দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত দুই সপ্তাহে মেক্সিকোর বিভিন্ন অঞ্চলের তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রির (১২২ ফারেনহাইট) কাছাকাছি ছিল।

এদিকে গত ২২ জুন ষাট বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ দিন দেখেছে চীনের রাজধানী বেইজিং। যা আগের সব রেকর্ডকে ভেঙে দিয়েছে। ওই দিন তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১০৫ দশমিক ৯ ফারেনহাইট রেকর্ড করা হয়েছে।

গ্র্যান্থাম ইন্সটিটিউট ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড দ্য এনভায়রনমেন্টের জলবায়ু বিজ্ঞানী ফ্রেদ্রিক ওত্তো বলেছেন, এটি এমন একটি মাইলস্টোন যা আমাদের উদযাপন করা উচিত নয়। এটি সাধারণ মানুষ ও ইকো সিস্টেমের জন্য একটি মৃত্যুদণ্ড।

এছাড়া গত মাসে ভারতের উত্তরপ্রদেশে তাপমাত্রা ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন বহু মানুষ। দেশটিতে প্রতিনিয়ত ঘটেছে প্রাণহানির ঘটনাও।

স্প্যানিশ শব্দ ‘এল নিনো’র অর্থ হলো ‘লিটল বয়’ বা ‘ছোট ছেলে’। পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উষ্ণ থাকে, তখন তাকে এল নিনো বলা হয়। আর এর বিপরীত অবস্থার নাম ‘লা নিনা’, যার অর্থ ‘লিটল গার্ল’ বা ‘ছোট মেয়ে’। পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে, তখন তাকে লা নিনা বলা হয়।

২০২৭ সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে ৬৬ শতাংশ। মানুষের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে যে পরিমাণ কার্বন নির্গমন হচ্ছে এবং চলতি বছরের গ্রীষ্মকালে আবহাওয়ার ধরন পরিবর্তনের যে সম্ভাবনা দেখছেন বিজ্ঞানীরা তা থেকেই পৃথিবীর ভবিষৎ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

Link copied!