• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

স্নোডেনের সত্যের সাহস


হাসান শাওন
প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২৩, ১১:২৬ এএম
স্নোডেনের সত্যের সাহস

সত্যের উন্মোচনে সবচেয়ে বড় অস্বস্তি শাসকের। এর পরিণতিও নির্মম। নেমে আসতে পারে দুঃসহ নিপীড়ন। ছেড়ে আসতে হয় জন্মভূমি। পিছু ছাড়বে না মামলা, হামলা। বইতে হবে ‘বিশ্বাসঘাতক’, ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’, ‘অন্য রাষ্ট্রের এজেন্ট’ এমনকি ‘চোর’ অপবাদও।

এক মানুষ এডওয়ার্ড স্নোডেনের জীবনে এর সবই ঘটেছে। ২০১৩ সাল থেকে তিনি বিশ্ব মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘মোস্ট ওয়ানটেড’। এমন হওয়ার দরকার ছিল কি স্নোডেনের? দুই লাখ ডলার বেতন ছিল যার। আরও ছিল হাওয়াই দ্বীপে বাড়ি। জীবনে পূর্ণতা আনা প্রেয়সীকে নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে ভেসে যাওয়া চলে তখন। কিন্তু সত্য প্রকাশের দায়ে তিনি বেছে নেন অনিশ্চয়তা। অনেকের জানা সে পর্ব।

শোভন ‘নাগরিক’ তকমায় পরাক্রম রাষ্ট্র যে মূলত ‘ক্রীতদাস’ বানিয়ে রাখে জনতাকে সে তথ্য ২০১৩ সালে ফাঁস করেন সাবেক সিআইএ কর্মী এডওয়ার্ড স্নোডেন। এর একটি হচ্ছে প্ল্যানিং টুল ফর রিসোর্স ইন্টিগ্রেশন, সিনক্রোনাইজিং এন্ড ম্যানেজমেন্ট বা ‘প্রিজম’। এ হচ্ছে নাগরিকদের ডিভাইসে গোপনে আড়িপাতার অনাচার কার্য। ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তখনের প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ কোনো রকম ঘোষণা ছাড়াই তা চালু করেন। স্নোডেনের ফাঁস করা আরেকটি তথ্য হচ্ছে ‘মাসকুলার কার্যক্রম’। সংক্ষেপে তা যুক্তরাজ্যের গভর্মেন্ট কমিউনিকেশনস হেডকোয়ার্টাস এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির (এনএসএ) যৌথ গোয়েন্দা নজরদারি কার্যক্রম। তিনি আরও ফাঁস করেন গুগল, ইয়াহু, ইউটিউব থেকে শুরু করে সবধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী লাখ লাখ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য রেকর্ডের গোপনযজ্ঞ। বাদ যায়নি বিশ্বনেতাদের ফোনও। স্নোডেন প্রকাশ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা কর্তৃক ৩৫ জন বিশ্বনেতার ফোনে আড়িপাতার অজানা তথ্য। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায় এ আড়িপাতা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। নিয়মিতই এ কাজ করে থাকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

২০১৩ সালের জুন মাসে প্রখ্যাত সাংবাদিক গ্লেন গ্রিনওয়াল্ড স্নোডেনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রভাবশালী পত্রিকা ‘গার্ডিয়ান’-এ ধারাবাহিক লেখা শুরু করেন। গ্রহজুড়ে তুমুল সাড়া পড়ে সে লেখায়। মার্কিন রাষ্ট্র এ বেইজ্জতির জন্য প্রস্তুত ছিল না। স্নোডেন তখন হংকংয়ে। তার ওপর জারি হতে থাকে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা। আগ্রাসী যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত ‘কল্লা চাই স্নোডেনের’ মুডে। যেখানে তিনি আশ্রয় নেন সেখানেই চলে যায় তাকে হস্তান্তরের ইউএস ফরমান।

জুলুমবাজ, মিথ্যার প্রচারক পরাশক্তির দৃষ্টিভঙ্গিতে পুরো জনমত কখনো প্রভাবিত হয় না। তাই এডওয়ার্ড স্নোডেনকে বিশ্ব নাগরিকরা বিপ্লবী হিসেবেই দেখেন। জনগণের টাকা যে রাষ্ট্রের ভিত, তার কদর্যরূপ উন্মোচনের জন্য জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের মতো স্নোডেনও এক বীর। যারা শুধু ষড়যন্ত্র তত্ত্বের বয়ান না করে জনগণকে নিয়ে গোপনে চলা বাস্তবতা বিস্তৃতভাবে প্রকাশ করেন। রাজশক্তির ‘শ্বেত সন্ত্রাস’ মোকাবিলায় ক্ষণে ক্ষণে যারা প্রতিরোধের পথ দেখান। যারা ব্যক্তি স্বাধীনতা ও তথ্য অধিকারের ন্যায্যতা নিয়ে সংগ্রামের পথ বাতলে দেন।

একজন এডওয়ার্ড স্নোডেন এমন অনেক কারণে গুরুত্বপূর্ণ। যাকে নিয়ে সিনেমা বানিয়েছেন অলিভার স্টোন। ২০১৯ সালে প্রকাশিত স্নোডেনের আত্মজীবনী ‘পার্মানেন্ট রেকর্ড’ হয়েছিল হটকেট। বাংলায় এ বইয়ের ভাষান্তর করেছে প্রজন্ম প্রকাশনী।

১৯৮৩ সালের আজকের দিন ২১ জুন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনায় জন্মেছিলেন তিনি।

শুভ জন্মদিন, এডওয়ার্ড স্নোডেন!

বিবেকবান সত্যের পক্ষের লড়াকুদের প্রার্থনায় আপনি সব সময়ই থাকবেন।

Link copied!