বিশ্বের ইতিহাসে যতসব ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হেনেছে, তার বেশিরভাগই হয়েছে বঙ্গোপসাগরে। ‘ওয়েদার আন্ডারগ্রাউন্ড’ নামের এক ওয়েবসাইটে বিশ্বের যে ৩৫টি দানব ঘূর্ণিঝড়ের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তার মধ্যে ২৬টিই আছড়ে পড়েছে বঙ্গোপসাগরে।
জলবায়ু ও আবহাওয়াবিদরা বলছেন, অবতল আকৃতির অগভীর উপসাগরে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। মৌসুমি ঘূর্ণিঝড়ের তীব্র বাতাস যখন এরকম উপসাগরের পানিকে ঠেলতে থাকে, তখন ফানেল বা চোঙার মধ্যে তরল যে আচরণ করে, ঠিক তেমনটাই ঘটে এখানে। উপসাগরের ফুঁসে ওঠা পানি চোঙা বরাবর ছুটতে থাকে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের সময় ঠিক একই আচরণ করে বঙ্গোপসাগরও। তবে এক্ষেত্রে যুক্ত হয় বাড়তি কিছু বৈশিষ্ট্য। যেমন- সাগর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বঙ্গোপসাগর খুবই উষ্ণ এক সাগর। বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় অন্যান্য বড় সাগরের মতো বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রাও দিন দিন বাড়ছে।
জলবায়ু বিজ্ঞানীদের মতে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে ভারত মহাসাগরের চরিত্র ও তাপমাত্রার দ্রুত বদল ঘটছে। যার প্রভাব পড়ছে গিয়ে আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে। যে কারণে এসব সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের আয়ুষ্কার বাড়ার সঙ্গে প্রবল মাত্রার শক্তিশালী হয়ে উঠছে। যা উপকূলে আছড়ে পড়ে বেপরোয়া দানবের মতো আচরণ করছে।
ভারতের আবহাওয়া বিজ্ঞানী রক্সি ম্যাথু কোল আনন্দবাজার পত্রিকাকে বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যেসব যেসব ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হচ্ছে, সেগুলো অনেক দিন ধরে শক্তি সঞ্চয় করে রাখছে। এমনটি ঘটেছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের বেলায়। দীর্ঘ সময় ধরে শক্তি সঞ্চয় করে স্থলভাগে বিপুল শক্তি নিয়ে আছড়ে পড়েছিল। ফলে এর ধ্বংসলীলা হয়েছে বেশি।
রক্সি ম্যাথু কোলের মতে, সাগরের উপরিতল যত গরম হবে আর সেই সঙ্গে যদি বাতাস অনুকূল হয়, তাহলে ঘূর্ণিঝড় তত বেশি শক্তি সঞ্চয় করবে। আর সেই শক্তি অনেকদিন ধরে রাখতে পারবে। যেমনটা হয়েছে ঘূর্ণিঝড় মোখার ক্ষেত্রে। শক্তি সঞ্চয় করে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছিল।
ভারতের ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে ১৯৫০ সালের আগে ও পরে ৯৪ থেকে ১৪০টি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের তথ্য উঠে এসেছে। সেই সময়ের মধ্যে বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের হার বেড়েছে ৪০ শতাংশ। আর আরব সাগরে বেড়েছে ৫২ শতাংশ।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) বিজ্ঞানী এমএম আলীর মতে, সাগরের ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির যে পদ্ধতি তাতে কোনো বদল আসেনি। বরং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সাগরের উপরিতলের উষ্ণতা বাড়ছে। সেই সঙ্গে দিন দিন বাড়ছে সাগরের তার ধরে রাক্ষার মাত্রা। ফলে সাগরের চরিত্রের এসব বদল প্রভাব ফেলছে ঘূর্ণিঝড়ের ওপর।
একটি গবেষণায় উঠে এসেছে যে, বিশ্বে যে পরিমাণ গ্রিনহাউজ গ্যাস তৈরি হয় তার ৯০ ভাগই চলে যায় সমুদ্র গর্ভে। এতে সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। বিগত ২০২২ সালে সাগরের তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি বেড়ে গিয়েছিল।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডাব্লিউএমও) বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিস্থিতির ওপর করা এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে যত পরিমাণ গ্রিন হাউস গ্যাস তৈরি হয়, তার ৯০ শতাংশ যায় সমুদ্রগর্ভে। এর ফলে বৃদ্ধি পায় সমুদ্রের তাপমাত্রা। ২০২২ সালে সমুদ্রের তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল।
 
                
              
 
																 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    




























