• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

এক মহাশ্বেতার অনন্যতা


হাসান শাওন
প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৩, ০৯:৩৪ এএম
এক মহাশ্বেতার অনন্যতা
মহাশ্বেতা দেবী

২০১৬ সালের আজকের দিন ২৮ জুলাই অনন্তলোকে পাড়ি জমান কথাশিল্পী মহাশ্বেতা দেবী। তার জন্ম ১৯২৬ সালের ১৪ জানুয়ারি আমাদের শহর ঢাকায়।

মহাশ্বেতা দেবীর বাবা মণীশ ঘটক। তার মা ধরিত্রী দেবী। মা-বাবা দুজনই ছিলেন লেখক ও সমাজকর্মী। বাংলা চলচ্চিত্রে মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার নমুনা হয়ে থাকা ঋত্বিক ঘটক ছিলেন পারিবারিক সম্পর্কে মহাশ্বেতা দেবীর কাকা। দেশভাগের বেদনা শিল্পে প্রকাশ করেছেন দুজনই।    

প্রকাশযোগ্য লেখনী অনেকের দ্বারাই সম্ভব। আর বাংলায় কম নেই লেখক, কবি ও প্রাবন্ধিক। কিন্তু একজন মহাশ্বেতা দেবী অনন্য এ কারণে যে, তিনি কেবল লেখক ছিলেন না। লিখতেন নিম্নবর্গের কথা আর রাস্তায়, মাঠে, গঞ্জে, গাঁওয়ে লড়তেন তাদের হয়ে। বাংলা সাহিত্যে তিনি এককভাবে বিরাজ করেন বিপুল প্রতিরোধের শক্তি হয়ে।

মহাশ্বেতা দেবীর অনবদ্যতা এখানেই যে, তার আদিবাসীদের সঙ্গে মিলে মিশে থাকা কুটিরে হাজির হতে হয়েছে প্রত্যেককে। গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক থেকে শুরু করে সাহিত্য আকাদেমি, জ্ঞানপীঠ, র‌্যামন ম্যাগসাইসাই, পদ্মশ্রী ও পদ্মবিভূষণ, সার্ক সাহিত্য, বঙ্গবিভূষণ—সব কিছুকে, সব স্বীকৃতিকে।

আমৃত্যু তিনি লড়েছেন সর্বত্র সর্বস্ব উজাড় করে। স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়েছেন শান্তি নিকেতনে, মধ্যপ্রদেশে, ছত্রিশগড়ে, নর্মদায়, বিরসা মুণ্ডার জন্য, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামে। পা ফেলেছেন নিজস্বী ভাবেই ফ্রাঙ্কফুটে। ওদের মতো, ওদের সাজে নয়।

মহাশ্বেতা দেবীর গর্ভে জন্ম নেওয়া বাংলা ভাষার বারুদ কবির নাম নবারুণ ভট্টাচার্য। দারিদ্র মহাশ্বেতার ছিল অর্থে। জীবিকা নির্বাহে কাজ করেছেন অনুলিখনকারী হিসেবেও। কিন্তু চিত্তে তার ব্যাপকতা অনন্ত।

সাহিত্য ও জীবনে মহাশ্বেতা দেবী এক প্রেরণার নাম। তার কীর্তিময় জীবন পথ দেখায়। তার সাহিত্যে মানুষ জেগে ওঠে। এ থেকে নির্মিত চলচ্চিত্র দিশা ফেরায়। শিল্পে সত্যের জায়গায় দাঁড়িয়ে প্রতিরোধের সবটুকু দেওয়াই মহাশ্বেতা দেবীর দীর্ঘ জীবন শিক্ষা দেয়। তা না বুঝলে দাসত্ব। আর বুঝলে মুক্তি।

Link copied!