গর্ভবতী নারীর ভ্রূণ কখনো কখনো অস্বাভাবিকভাবে গর্ভ বা জরায়ুর বাইরে প্রতিস্থাপিত হয়। একে বলে এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি। এমন অস্বাভাবিক গর্ভধারণে নিষিক্ত ভ্রূণ জরায়ুর বাইরে গর্ভনালি, ডিম্বাশয়, জরায়ুর মুখ এমনকি পেটের ভেতরও স্থাপিত হতে পারে এবং সেখানেই বাড়তে থাকে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি গর্ভনালিতে হয় (৯৭ শতাংশ)। ভ্রূণের বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গর্ভনালি প্রসারিত হয় না বলে একসময় গর্ভনালি ফেটে যায়। তখন ওই অংশ থেকে ক্রমাগত পেটের মধ্যে রক্তক্ষরণ হয়।
এ অবস্থাকে রাপচার্ড এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি বলে। এটি একজন ভুক্তভোগী মায়ের জন্য প্রাণঘাতী সমস্যা। তাই শুরুতেই রোগ নির্ণয় ও সঠিক চিকিৎসা জরুরি। বিশ্বজুড়ে এ ধরনের অস্বাভাবিক গর্ভধারণের সম্ভাবনা ১ থেকে ২ শতাংশ। ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা আরও কম। তবে এটি মাতৃমৃত্যুর অন্যতম কারণ।
আরও পড়ুন: প্রসবের পর নারীরা কখন থেকে ব্যায়াম করবেন
কারণ
এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির সঠিক কারণ সম্পর্কে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে কয়েকটি কারণ এ সমস্যার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। যেমন
- নারীদের জননাঙ্গে প্রদাহজনিত রোগ।
- জন্মনিরোধক পদ্ধতি যেমন জরায়ুতে স্থাপিত কপার দণ্ড, অকার্যকর স্থায়ী জন্মনিরোধের পদ্ধতি অথবা জরুরি জন্মনিরোধক বড়ির ব্যবহার।
- পূর্ববর্তী গর্ভনালির পুনর্গঠন অস্ত্রোপচার অথবা গর্ভনালির অন্য কোনো অস্ত্রোপচার।
- ডিম্বস্ফুটন অথবা নিষেকের চিকিৎসা।
- পূর্ববর্তী এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির ইতিহাস।
লক্ষণ
ফেটে যাওয়ার আগে রোগীদের ঋতুস্রাব বন্ধ থাকা, ফোঁটা ফোঁটা রক্ত যাওয়া, পেটের একপাশে মৃদু ব্যথাসহ গর্ভধারণের অন্যান্য লক্ষণ যেমন মাথা ঘোরানো, বমি ভাব বা বমি হওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। আর ফেটে যাওয়ার পরে তলপেটে তীব্র ব্যথা, রক্তপাত, অজ্ঞান হওয়া, কাঁধে ব্যথা, বমি হওয়া, মুখ ফ্যাকাশে হওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।
রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা
রোগের লক্ষণ বিশ্লেষণ করে ও রোগীর পেটের পরীক্ষা করে চিকিৎসক এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি অনুমান করতে পারেন। তবে এটি নিশ্চিত হতে পেটের আলট্রাসনোগ্রাফি এবং রক্তের বিটা এইচসিজি পরীক্ষা করা হয়। ওষুধ প্রয়োগ ও অস্ত্রোপচার, দুইভাবে এই রোগের চিকিৎসা করা যায়। তবে ফেটে গেলে ল্যাপরোস্কপি বা ল্যাপারটোমি অস্ত্রোপচারের সাহায্য নেওয়া হয়।
কীভাবে প্রতিরোধ
ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মারুফা খাতুন বলেন, এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি পুরোপুরি প্রতিরোধযোগ্য নয়। তবে কিছু বিষয় মেনে চললে এর ঝুঁকি কমানো যায়। যেমন যৌনবাহিত রোগ প্রতিরোধ, জরুরি জন্মনিরোধ বড়ির কম ব্যবহার, ধূমপান ত্যাগ ইত্যাদি। সর্বোপরি গর্ভবতী হওয়ার প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পেটের একটি আলট্রাসনোগ্রাফি করে ভ্রূণের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার মাধ্যমে শুরুতেই এ রোগ নির্ণয় করে জটিলতা কমানো সম্ভব।
সূত্র: প্রথম আলো