হাত ও পা ঘেমে যাওয়া অস্বস্তিকর এবং বিব্রতকর একটি সমস্যা। বিশেষ করে যখন অতিরিক্ত ঘাম হয় কিংবা ঠান্ডা আবহাওয়াতেও হাত-পা ঘামে, তখন তা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ অনেক সময় এটি কোন রোগের উপসর্গ হিসেবেও প্রকাশ পায়।
এই সমস্যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয় Palmoplantar Hyperhidrosis (হাত ও পায়ের অতিরিক্ত ঘাম)। এটি একদিকে যেমন শারীরিক সমস্যা, অন্যদিকে মানসিক চাপ বা আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিও সৃষ্টি করতে পারে। চলুন জেনে নিই, হাত ও পা ঘেমে যাওয়ার পেছনে যেসব রোগ বা শারীরিক সমস্যা লুকিয়ে থাকতে পারে।
হাইপারহাইড্রোসিস (Hyperhidrosis)
এটি একটি চিকিৎসাগত অবস্থা, যেখানে শরীরের নির্দিষ্ট অংশ অতিরিক্ত ঘাম উৎপাদন করে।সাধারণত এই রোগে যারা ভোগেন, তাদের হাত ও পা সবচেয়ে বেশি ঘামে। এটি দুই ধরনের হয়- প্রাথমিক হাইপারহাইড্রোসিস, নির্দিষ্ট কোনো রোগ ছাড়াই হয়। সেকেন্ডারি হাইপারহাইড্রোসিস – অন্য কোনো রোগের কারণে হয়।
থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা
হাইপারথাইরয়েডিজম বা অতিসক্রিয় থাইরয়েড গ্রন্থি অতিরিক্ত ঘামের একটি বড় কারণ হতে পারে। এই রোগে মেটাবলিজম বেড়ে যায়, যার ফলে শরীর গরম অনুভব করে এবং ঘাম হয়। এর লক্ষণসমূহের মধ্যে রয়েছে হাত-পা ঘামা, ওজন কমে যাওয়া,নার্ভাসনেস, দ্রুত হৃদস্পন্দন।
ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিসে হাত-পা ঘামার সমস্যা দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে যখন রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায় (হাইপোগ্লাইসেমিয়া)। অনেক সময় ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি থেকেও পায়ের ঘাম হতে পারে। এর লক্ষণসমূহের মধ্যে রয়েছে অনিয়ন্ত্রিত ঘাম, হাত-পা ঝিম ঝিম করা, দুর্বলতা।
হরমোনাল ভারসাম্যহীনতা
নারীদের ক্ষেত্রে হরমোন পরিবর্তনের কারণে যেমন মেনোপজ বা প্রেগনেন্সির সময় হাত-পা ঘামার প্রবণতা বেড়ে যায়। এছাড়াও পিউবার্টি বা মাসিক অনিয়ম থাকলেও এই উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
মানসিক চাপ বা উদ্বেগ
চাপ, ভয়, লজ্জা কিংবা উদ্বেগজনিত কারণে অনেকেরই হাত-পা ঘেমে যায়। এটি একধরনের ফাইট-অর-ফ্লাইট রেসপন্স, যেখানে স্নায়ুতন্ত্র অতিরিক্ত ঘাম নিঃসরণ করে। এর সঙ্গে আরও উপসর্গ থাকতে পারে। বুক ধড়ফড় করা, ঘামঝরা তালু ও হাত কাঁপা।
সংক্রমণ বা জ্বরজনিত সমস্যা
যেসব রোগে জ্বর আসে যেমন টাইফয়েড, টিউবারকুলোসিস বা ভাইরাল ইনফেকশন, সেসব ক্ষেত্রেও হাত-পা ঘেমে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অটোনমিক নার্ভ সিস্টেমের সমস্যা
অটোনমিক নিউরোপ্যাথি নামক স্নায়বিক রোগে শরীরের ঘাম নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুগুলোর সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে হাত ও পা অতিরিক্ত ঘামে।
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিছু ওষুধ যেমন – এন্টিডিপ্রেসেন্ট, হরমোনাল থেরাপি, স্টেরয়েড, কিছু ব্যথানাশক বা ডায়াবেটিসের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।