• ঢাকা
  • সোমবার, ০২ জুন, ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৫ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস

তামাক যেভাবে জীবনকে ধ্বংস করে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২৫, ০৫:৫৫ পিএম
তামাক যেভাবে জীবনকে ধ্বংস করে
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর ৩১ মে পালিত হয় “বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস”। এ দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো— মানুষের মধ্যে তামাকের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং তামাকজনিত মৃত্যুর হার কমানো। তামাক ধূমপানের মাধ্যমে কিংবা চিবিয়ে গ্রহণের মাধ্যমে শরীর ও মন দুটোকেই ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।

তামাকের নেশা একটি নিঃশব্দ ঘাতক। এটি ধীরে ধীরে শরীরকে গিলে খায়, রোগের জন্ম দেয় এবং জীবনের গতি থামিয়ে দেয়। চলুন জেনে নিই, তামাক কীভাবে জীবন ধ্বংস করে এবং কেন এটি থেকে দূরে থাকা উচিত।

তামাক ব্যবহারের ভয়াবহ পরিণতি

প্রাণঘাতী রোগ সৃষ্টি করে
তামাকের প্রধান ক্ষতি হলো এটি বিভিন্ন মারাত্মক রোগের উৎস। যেমন_ ফুসফুস ক্যানসার, ধূমপানের প্রধান ও সবচেয়ে মারাত্মক প্রভাব। হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের কারণ। ধূমপান রক্তচাপ বাড়ায়, হৃদযন্ত্র দুর্বল করে এবং হঠাৎ মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়।

মুখ, গলা ও ঠোঁটের ক্যানসারের কারণ। বিশেষ করে যারা জর্দা, গুল, খৈনি বা পান মেশানো তামাক গ্রহণ করেন। দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টজনিত অসুখ ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস ও এমফাইসেমা হতে পারে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর ৮০ লক্ষের বেশি মানুষ তামাকজনিত রোগে মারা যায়।

মানসিক ও সামাজিক জীবন নষ্ট করে

তামাক শুধু শারীরিক নয়, মানসিক ক্ষতিও করে। যেমন_আসক্তির কারণে মানুষের মধ্যে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। পারিবারিক জীবনে অশান্তি সৃষ্টি হয়। সমাজে ও কর্মস্থলে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করে। তামাকের গন্ধ ও ব্যবহারের কারণে অনেক সময় পরিবার ও সমাজ থেকেও দূরে সরে যেতে হয়।

অর্থনৈতিক ক্ষতি

তামাক একটি ধ্বংসাত্মক বিলাসিতা। এর পেছনে মানুষ প্রতিদিন টাকা ব্যয় করে। যা দীর্ঘমেয়াদে লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়ে দাঁড়ায়। সেই সঙ্গে অসুস্থতার চিকিৎসা খরচও বেড়ে যায়। কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়, রোজগারে প্রভাব পড়ে। একজন তামাক ব্যবহারকারীর ব্যয় একজন সাধারণ মানুষের তুলনায় ২০-২৫ গুণ বেশি হতে পারে।

পরিবার ও সমাজে নেতিবাচক প্রভাব

তামাক শুধু ব্যবহারকারী নয়, তার চারপাশের মানুষকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে, যাকে বলে প্যাসিভ স্মোকিং। বিশেষ করে শিশুরা শ্বাসকষ্টে ভোগে, নিউমোনিয়া বা ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত হয়, বুদ্ধি ও শারীরিক বিকাশে পিছিয়ে পড়ে। এছাড়া তামাক ব্যবহার শিশুদের মধ্যে খারাপ অভ্যাস গড়ে তোলে এবং ভবিষ্যতে নেশায় আসক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।

তামাক কেন বর্জন করবেন
তামাক বর্জন করলে ফুসফুস ধীরে ধীরে স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ফিরে পায়। হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
ত্বক ভালো হয়, দাঁত ও মুখ পরিষ্কার থাকে। খাদ্যরুচি ও ঘুম উন্নত হয়। আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায় ও পরিবারে শান্তি ফিরে আসে।

কীভাবে তামাকমুক্ত থাকবেন

নিজের ইচ্ছা শক্তি দৃঢ় করুন। পরিবর্তনের প্রথম ধাপ সচেতনতা। ধূমপান বা তামাক ছাড়ার জন্য পরিকল্পনা করুন ও ধাপে ধাপে অগ্রসর হোন।স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা চিকিৎসকের সহায়তা নিন (যেমন: নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি)। পরিবারের সহযোগিতা ও সামাজিক সমর্থন নিন। ধূমপায়ী বন্ধু বা পরিবেশ এড়িয়ে চলুন।

মনে রাখবেন, তামাক একটি ধ্বংসাত্মক নেশা। যা মানুষকে শরীরেও, মনে এবং অর্থনৈতিকভাবেও নিঃস্ব করে দেয় । তামাকমুক্ত হওয়া মানে শুধু নিজের নয়, সমাজ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ ভবিষ্যৎ তৈরি করা।

Link copied!