প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনযাত্রায় এক কাপ চা যেন আমাদের অঙ্গাঙ্গী অংশ। সকালে ঘুম থেকে উঠে, অফিসের ফাঁকে, বন্ধুবান্ধবের আড্ডায় কিংবা একান্তে নির্জনতায় চা আমাদের অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী। তাই চায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতিবছর ২১ মে পালিত হয় আন্তর্জাতিক চা দিবস। এ দিনটি শুধু চায়ের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ নয়, বরং চা চাষ, শ্রমিকদের অবদান ও চায়ের পুষ্টিগুণ নিয়েও মানুষকে সচেতন করার দিন।
চা শুধু একটি পানীয়ই নয়—এটি আমাদের শরীর ও মনকে চাঙ্গা রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন উপকারিতাও দিয়ে থাকে। চলুন জেনে নিই, নিয়মিত চা পানে আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্যে কী কী উপকার হতে পারে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের শক্ত উৎস
সব ধরনের চাতেই (বিশেষ করে সবুজ ও কালো চা) রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যেমন—পলিফেনল ও ক্যাটেচিন। এই উপাদানগুলো শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান দূর করতে সাহায্য করে এবং কোষের ক্ষয় রোধ করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদরোগ, ক্যানসার, ডায়াবেটিসসহ নানা দীর্ঘমেয়াদি রোগ প্রতিরোধে কার্যকর।
মানসিক প্রশান্তি ও চাপ কমায়
চায়ের মধ্যে থাকা থিয়ানিন নামক এক বিশেষ অ্যামাইনো অ্যাসিড মস্তিষ্কে প্রশান্তি আনে। এটি স্ট্রেস হরমোন কমাতে সহায়তা করে এবং মন শান্ত রাখতে ভূমিকা রাখে। তাই চা পানে মানসিক চাপ কমে এবং মন ভালো থাকে।
মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে
সবুজ চা এবং ওলং চা আমাদের দেহের মেটাবলিক রেট বাড়াতে সাহায্য করে, যার ফলে শরীরে ক্যালোরি খরচ বেশি হয়। যারা ওজন কমাতে চান, তাঁদের জন্য চা হতে পারে ভালো সহায়ক। তবে চায়ে চিনি বা অতিরিক্ত দুধ না মেশানোই উত্তম।
হৃদপিণ্ডের জন্য উপকারী
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত চা পানে রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে। চায়ের ফ্ল্যাভোনয়েড নামক উপাদান রক্তনালীর স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে। এতে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
হজমে সাহায্য করে
খাওয়ার পর এক কাপ গরম চা হজমে সহায়ক হতে পারে। বিশেষ করে আদা চা বা পুদিনা চা হজম শক্তি বাড়ায়, গ্যাস্ট্রিক ও অম্বল কমায় এবং পেটের অস্বস্তি দূর করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
চায়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে। নিয়মিত চা পানে ঠান্ডা-জ্বর, সংক্রমণ ও অন্যান্য ভাইরাল অসুখ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষা করে
সবুজ ও কালো চাতে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান দাঁতের জন্য উপকারী। এতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে, যা দাঁতের ক্ষয় রোধ করে এবং মুখের দুর্গন্ধ কমায়। তবে চায়ে চিনি মেশালে এর উপকারিতা কমে যেতে পারে।
ত্বক উজ্জ্বল হয়
চায়ে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কোষকে সজীব রাখে। চা পান করার পাশাপাশি ঠান্ডা চা ত্বকে ব্যবহার করলেও উপকার পাওয়া যায়। এটি ব্রণ ও প্রদাহ কমায় এবং ত্বককে তরতাজা রাখে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সম্ভাব্য ভূমিকা
গবেষণায় দেখা গেছে, চায়ের মধ্যে থাকা কিছু উপাদান ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে ধীর করে দিতে পারে। বিশেষ করে সবুজ চা স্তন, প্রোস্টেট ও ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে। তবে এটি ক্যান্সারের প্রতিকার নয়, বরং একটি সহায়ক ভূমিকা।