• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

সুস্থ থাকুন শীতের সবজিতে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২৩, ০১:৫১ পিএম
সুস্থ থাকুন শীতের সবজিতে

শীতের ছোঁয়া পাওয়া যাচ্ছে বাতাসে। আর এই ঋতুতে আমাদের দেশে বিভিন্ন রকম সবজি পাওয়া যায়। যদিও আজকাল সারা বছরই পাওয়া যায় সব ধরনের সবজি। তবু শীতের মৌসুমে চাষ করা এসব সবজির পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। আর শীতের প্রতিটি সবজিতেই প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেলস, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। তাই সুস্থ, সুন্দর ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এসব শাকসবজি প্রচুর পরিমাণে খাওয়া উচিত। চলুন জেনে নিই শীতকালীন শাকসবজির পুষ্টিগুণ।

ফুলকপি
শীতের সুস্বাদু সবজি ফুলকপি। ফুলকপিতে রয়েছে ভিটামিন এ, বি ও সি। এ ছাড়া আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সালফার ও আয়রন রয়েছে রয়েছে উচ্চমাত্রায়। গর্ভবতী মা, বাড়ন্ত শিশু ও অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করা মানুষের জন্য ফুলকপি বেশ উপকারী। 

ফুলকপিতে কোনো চর্বি নেই। পাকস্থলীর ক্যানসার প্রতিরোধে ফুলকপি বিশেষ কার্যকর। এ ছাড়া মূত্রথলি ও প্রোস্টেট, স্তন ও ডিম্বাশয় ক্যানসার প্রতিরোধে ফুলকপির ভূমিকা অনেক। ফুলকপিতে থাকা ভিটামিন এ ও সি শীতকালীন বিভিন্ন রোগ যেমন জ্বর, কাশি, সর্দি ও টনসিল প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

বাঁধাকপি
শীতের টাটকা সবজির মধ্যে বাঁধাকপি অন্যতম। বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও ই রয়েছে। এ ছাড়া সালফারের মতো খনিজ উপাদান থাকায় পাকস্থলীর বর্জ্য পরিষ্কার করতে বেশ উপকারী। রান্না করা বাঁধাকপি খাদ্যদ্রব্য হজমে বেশ সহায়ক। 

কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতেও এই সবজি দারুণ কার্যকর। বাঁধাকপি ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে। বাঁধাকপি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া বাঁধাকপি মানবদেহের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে, আলসার নিরাময় এবং দেহের রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি সাধন করে।

টমেটো
টমেটো একটি জনপ্রিয় সবজি। ক্যালরিতে ভরপুর এই সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি। কাঁচা ও পাকা এই দুই অবস্থাতে টমেটো খাওয়া যায়। টমেটোতে উপস্থিত ভিটামিন-সি ত্বক ও চুলের রুক্ষভাব দূর করে, ঠান্ডাজনিত রোগ ভালো করে। যেকোনো চর্মরোগ, বিশেষত স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে। 

টমেটোতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা প্রকৃতির ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির বিরুদ্ধে লড়াই করে। টমেটো মাংস পেশিকে করে মজবুত, দেহের ক্ষয় রোধ করে, দাঁতের গোড়াকে করে আরও শক্তিশালী, চোখের পুষ্টিও জোগায়।

মুলা
শীতের আরেকটি অতি পরিচিত সবজি হলো মুলা। মুলা কাঁচা ও রান্না দুইভাবেই খাওয়া যায়। মুলা ভিটামিন সি এর সমৃদ্ধ উৎস। মুলার পাতায় এ ভিটামিনের পরিমাণ ছয় গুণ বেশি। মুলা বিভিন্ন ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এর বিটা-ক্যারোটিন হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। এটি শরীরের ওজন হ্রাস করে। আলসার ও বদহজম দূর করতে সাহায্য করে। দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে ও ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও মূলা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।

পালংশাক
পালংশাক উচ্চমানের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর একটি শীতকালীন সবজি। পালংশাকে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম ও আয়রন আছে। তাই আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ ছাড়াও এটা হৃদরোগ এবং কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। পালংশাকের উপাদানসমূহ ক্যানসার, বিশেষ করে ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। 

এর ক্যারোটিনয়েডস ও শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রস্টেট ক্যানসার ও ওভারিয়ান ক্যানসার প্রতিরোধ করে। তা ছাড়া পালংশাক হাড়কে মজবুত করে তুলতে, শরীরের কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

ব্রকলি
ব্রকলি বা সবুজ ফুলকপি একটি কপিজাতীয় সবজি। শীতকালীন সবজির হিসেবে ব্রকলি বর্তমানে আমাদের দেশে চাষ করা হচ্ছে। ব্রকলিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ক্যালসিয়াম বিদ্যমান। ব্রোকলি অত্যন্ত উপাদেয়, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি সবজি। এটি চোখের রোগ, রাতকানা, অস্থি বিকৃতি প্রভৃতির উপসর্গ দূর করে ও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

গাজর
গাজর অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও খাদ্যআঁশসমৃদ্ধ শীতকালীন সবজি, যা এখন প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। তরকারি বা সালাদ হিসেবে এই সবজি খাওয়া যায়। গাজরে আছে বিটা ক্যারোটিন যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। অন্যান্য উপাদানগুলো অন্ত্রের ক্যানসার প্রতিরোধ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। গাজরে উপস্থিত ক্যারোটিনয়েড ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। ত্বকের খসখসে ও রোদে পোড়া ভাব দূর করে। গাজরের সঙ্গে মধু মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের মরা কোষ দূর হয় ও ত্বক উজ্জ্বল হয়।

ধনেপাতা
ধনেপাতায় রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ ও ফলিক অ্যাসিড, যা ত্বকের জন্য যথেষ্ট প্রয়োজনীয়। এই ভিটামিনগুলো ত্বকে প্রতিদিনের পুষ্টি জোগায়, চুলের ক্ষয়রোধ করে, মুখের ভেতরের নরম অংশগুলোকে রক্ষা করে। মুখ গহ্বরের ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ধনেপাতার ভিটামিন এ চোখের পুষ্টি জোগায়, রাতকানা রোগ দূর করতে ভূমিকা রাখে। কোলেস্টেরলমুক্ত ধনেপাতা দেহের চর্বির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ধনেপাতায় থাকা আয়রন রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে এবং রক্ত পরিষ্কার রাখতেও ভূমিকা রাখে। ধনে পাতা শীতকালীন ঠোঁট ফাঁটা, ঠান্ডা লেগে যাওয়া, জ্বর জ্বর ভাব দূর করতে যথেষ্ট অবদান রাখে।

শিম
শিম সুস্বাদু, পুষ্টিকর, আমিষের একটি ভালো উৎস। এটি সবজি হিসেবে এবং এর শুকনা বীজ ডাল হিসেবে খাওয়া হয়। শিমের পরিপক্ব বীজে প্রচুর আমিষ ও স্নেহজাতীয় পদার্থ আছে। এটির আঁশজাতীয় অংশ খাবার পরিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ডায়রিয়ার প্রকোপ কমায়। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে পাকস্থলী ও প্লিহার শক্তি বাড়ায়। লিউকোরিয়াসহ মেয়েদের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে, শিশুদের অপুষ্টি দূরীভূত করে। 
বেগুন
বেগুন ভিটামিন এ, সি, ই এবং কে সমৃদ্ধ সবজি। ভিটামিন এ চোখের পুষ্টি জোগায়, চোখের যাবতীয় রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। আর ভিটামিন সি ত্বক, চুল, নখকে করে মজবুত।শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার বিরুদ্ধে কাজ করে ভিটামিন ই ও কে। 

বেগুনে প্রচুর পরিমাণে ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশ রয়েছে, যা খাবার হজমে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এর ভূমিকা অনেক। এ সবজিতে থাকা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম দাঁত, হাড় ও নখ শক্ত করে। দাঁতের মাড়িকে করে শক্তিশালী। ভঙ্গুরতা রোধ করে নখের। তবে বলে রাখা ভালো, অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে বেগুন পরিহার করা উচিত। বেগুন অনেকের অ্যালার্জি বাড়িয়ে দেয়।

যেকোনো শাক সবজির আঁশ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের রোগ-প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই আজই বাড়িতে আনুন অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ শীতের সবজি। তবে কেনার আগে ফরমালিন মুক্ত কিনা তা যাচাই করার চেষ্টা করুন। সুস্থ ও সুন্দর থাকুন।

Link copied!