বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ‘মুজিব মঞ্চ’ নামের একটি মুক্তমঞ্চ করা হলেও এটি রক্ষণাবেক্ষণে নেই কোনো পদক্ষেপ। ৮০০ বর্গফুটের এই মুজিব মঞ্চের পাশেই নারিকেল গাছের ডালপালা, পাতা ও বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখা হয়েছে। এতে করে নষ্ট হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। অনেকদিন ধরে এগুলো পড়ে থাকায় বৃষ্টির পানিতে পচে মশার সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে ডেঙ্গু প্রবণতা বেশি থাকায় এগুলো পরিণত হয়েছে শিক্ষার্থীদের আতঙ্কে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে মুজিব মঞ্চের পাশে ফেলে রাখা হয়েছে নারিকেল গাছের ময়লা আবর্জনা। এর সঙ্গে আরও রয়েছে পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতলসহ অন্যান্য বর্জ্য। যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। এসব আবর্জনা থেকে কাক-কুকুর খাবার সংগ্রহ করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে।
নিয়মিত এসব বর্জ্য অপসারণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পরিবেশ দূষণ ও সৌন্দর্যহানী হচ্ছে বলে মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও আগত দর্শনার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে তাদের রীতিমত অস্বস্তির মধ্যেই পড়তে হচ্ছে বলে জানান তারা। এ ছাড়াও মুজিব মঞ্চের সামনে ও অন্য পাশে সারি সারি করে রাখা হয়েছে বাস, আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন কাগজের টুকরো, প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিন। ফলে এসব আবর্জনা থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, নষ্ট হচ্ছে ক্যাম্পাসের পরিবেশ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা জানান, দিনের বেলায় ক্যাম্পাসে মশার উপদ্রবে বসা যায় না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মশার কারণে ক্যাম্পাসের শান্ত চত্বর, গুচ্ছ ভাস্কর্য, বটতলা, কাঁঠালতলা, মুজিব মঞ্চসহ সকল স্থানেই বসার আর কোনো পরিবেশ থাকে না। ডেঙ্গু আতঙ্কে এখন অনেকেই সন্ধ্যার আগে ক্যাম্পাস ত্যাগ করে।
এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাত আরা বলেন, “ডেঙ্গুর প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলছে। পরিবেশে এই আতঙ্ক সবচেয়ে বেশি। আমাদের সবার সচেতন থাকা জরুরি। কিন্তু আমাদের বিভাগের পাশেই মশার উৎপাদনের উপদ্রব দেখা যায়, তাতে আমাদের চিন্তা আরও বেড়ে যাচ্ছে। এই পরিবেশে থেকে আমাদের সবসময় ডেঙ্গু আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে। আশা করছি প্রশাসন দ্রুত এটি সমাধানের পদক্ষেপ নেবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসা গণিত বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক স্মৃতি আছে। সময় পেলেই চলে আসি প্রাণের ক্যাম্পাসে। কিন্তু এসে এমন পরিবেশ দেখতে ভালো লাগে না।”
সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী রুকাইয়া মিমি বলেন, “সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের পাশেই মুজিব মঞ্চ, অথচ আমাদের নিজেদেরই তা দেখে খারাপ লাগে। বছরের অধিকাংশ সময়ই তা ময়লা আবর্জনায় অপরিচ্ছন্ন থাকে। এসব ময়লা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আমাদের ভবনের পাশেও পড়ে আছে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত এসব ময়লা পরিষ্কার করে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা।”
ভূগোল বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান বলেন, “ছোট ক্যাম্পাসের মধ্যে এই ময়লাগুলো আরও বেশি করে চোখে পড়ে। এতে পরিবেশ নষ্ট হয়। মুজিব মঞ্চের পাশে অবস্থা আরও খারাপ। এখানে ময়লা আবর্জনার গন্ধে আর মশার কামড়ে বসা যায় না। আমরা চাই পুরো ক্যাম্পাস পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সৌন্দর্য বর্ধন করা হোক।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নতা কমিটির আহ্বায়ক এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল কাদের বলেন, “আমরা ময়লা পরিষ্কারের জন্য সিটি করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করেছি। প্রক্রিয়াটা মাত্র শুরু হয়েছে। তারা এগুলো নিয়ে নেবে। আর মুজিব মঞ্চের পাশে যে ডালপালাগুলো রাখা আছে তা বোটানিক্যাল গার্ডেনের। বাগানের পরিচালক উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান। ওনাকে জানানো হয়েছে এগুলো সরানোর জন্য, তা না হলে আমরা সরিয়ে নেবো।”
তবে এ ব্যাপারে কোনো চিঠি পাননি বলে জানান উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শাহরিয়ার আহম্মদ। তিনি জানান, মুজিব মঞ্চের পাশের ডালপালার স্তূপ বোটানিক্যাল গার্ডেনের নয়। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ময়লা উদ্যানের পাশে ফেলা হয়, যা নষ্ট করছে এর সৌন্দর্য। প্রশাসনের উচিৎ এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া।
এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্জ্য অপসারণ করতে প্রতিমাসে দেড় লাখ টাকা দাবি করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের বর্জ্য সংগ্রহের জন্য নিবন্ধনকৃত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিকদার ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল। পরে সংবাদ প্রকাশের পর তা ২৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়।