বিশ্বসেরা ২ শতাংশ গবেষকদের তালিকায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ৬ শিক্ষক ও একজন শিক্ষার্থী স্থান পেয়েছেন।
তালিকায় স্থান পাওয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা হলেন- জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাঈদ আল-জামান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ. এ. মামুন, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান, বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক মো. ইব্রাহিম খলিল, ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলোজির অধ্যাপক এম শামীম কায়সার, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. এনামুল হক এবং পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইমফোরমেটিক্স বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ এ. মামুন।
আমেরিকার বিখ্যাত স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক জন পি. এ. ইয়োনিডিস গত ১ অক্টোবর এলসেভিয়ার প্রকাশনার ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের শীর্ষ ২ শতাংশ গবেষণা বিজ্ঞানীদের একটি তালিকা প্রকাশ করেন।
এ তালিকায় দুটি ধাপে সেরা গবেষক নির্ধারণ করা হয়। এর একটি হলো পুরো পেশাগত জীবনের ওপর, আরেকটি শুধু এক বছরের গবেষণা কর্মের ওপর।
বিজ্ঞানীর প্রকাশনা, এইচ-ইনডেক্স, সাইটেশন ও অন্যান্য সূচকগুলো বিশ্লেষণ করে তালিকাটি প্রস্তুত করা হয়। ওই প্রতিবেদনটি বিজ্ঞানীদের ২২টি বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্র এবং ১৭৪টি উপক্ষেত্রে শ্রেণিবদ্ধ করে মোট দুই লাখ ১০ হাজার ১৯৯ জন গবেষককে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই র্যাংঙ্কিংয়ের স্কোপাস ইন্ডেক্সড আর্টিকেলকে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছে।
এতে বাংলাদেশ থেকে মোট সেরা গবেষকের সংখ্যা ১৭৭ জন। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডাইরিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ, (আইসিডিডিআর,বি) এর ১৪ জন। পাশাপাশি এই তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ জন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ১০ জন, নর্থ সাউথ ও ব্রাক ইউনিভার্সিটির ৫ এবং ৩ জন করে শিক্ষক রয়েছেন।
সেরা গবেষকদের তালিকায় নাম আসায় অনুভূতি ব্যক্ত করে জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ডিজিটাল মিডিয়া গবেষক সাঈদ আল-জামান বলেন, “যেকোনো ভালো অর্জনের অনুভূতিই দারুণ। তবে এটিকে আমি আমার একার অর্জন বলতে চাই না। বরং, এটিকে একটি দলগত কাজের অর্জন বলা যায়। আমার সেই দলটি হলো আমার বিভাগ। আশপাশ থেকে প্রতিনিয়ত নানাবিধ সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়া তো এসব করা আমার পক্ষে সম্ভব হতো বলে মনে হয় না।”
গবেষণা নিয়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সাঈদ আল-জামান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকতা করার কারণে ব্যক্তিগত জায়গা থেকে গবেষণা নিয়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা আমার অবশ্যই রয়েছে, আর তা হচ্ছে নিয়মিত গবেষণা করে যাওয়া এবং মানের দিক থেকে প্রতিনিয়ত পুরোনো কাজকে ছাড়িয়ে যাওয়া। তবে অপ্রাপ্তি এবং অভিযোগও অনেক রয়েছে। যেমন, গবেষণা ফান্ডের তীব্র সংকট, গবেষণার অপর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাদি, গবেষণা-মানসিকতা ও উৎসাহের ঘাটতি ইত্যাদি।”
গবেষণার ধারা অব্যাহত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করে অধ্যাপক শামীম কায়সার বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গবেষণা ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। এ বছর আমরা প্রথমবারের মতো টাইমস হায়ার এডুকেশন র্যাঙ্কিংয়ে প্রবেশ করেছি। যেখানে গবেষণার অনেক অবদান রয়েছে। এটা আমাদের জন্য অনেক গর্বের। গবেষণার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটা নির্দিষ্টসংখ্যক ফান্ডিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া আমরা নিজ উদ্যোগেও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি ভবিষ্যতে এ ধারা আরও অব্যাহত থাকবে।”
অধ্যাপক কায়সার প্লোস ওয়ান জার্নালের একজন অ্যাকাডেমিক সম্পাদক, আইইই অ্যাক্সেস এবং কগনিটিভ কম্পিউটেশন জার্নালের সহযোগী সম্পাদক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ জন গবেষকের তালিকায় একমাত্র শিক্ষার্থী মোহাম্মদ এ মামুন। তরুণ এ গবেষক নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, “আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বছর থেকেই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত। আমার মতো ছাত্রদের কেউ এত গবেষণা করে না, যতটা আমি করেছি। কারণ বিদেশে পড়তে হলে আপনার ১৫০ পাবলিকেশন লাগে না, ২ বা ৪টা হলেই হয়। দিন নাই, রাত নাই, কাজ করেছি। প্যাশন হয়ে গেছে। প্রাতিষ্ঠানিক সাপোর্ট এবং ফান্ডিং ছাড়া কাজ করতে গিয়ে অনেক ক্লান্তি এসে যায়। কিন্তু কাজের রিকোগনাইজেশন সেগুলো ভুলিয়ে দেয়, উদ্দাম বাড়িয়ে দেয়। আরও ভালো লাগে আমার কাজের মাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম তালিকায় স্থান পাওয়া সেরা গবেষকদের অভিনন্দন জানান ও গবেষণা পরিবেশ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। উপাচার্য বলেন, “বিশ্বসেরা ২ শতাংশ বিজ্ঞান গবেষকের তালিকায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ জন শিক্ষক এবং একজন শিক্ষার্থী স্থান লাভ করায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আনন্দিত। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি ও সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে। এ স্বীকৃতি অর্জনে শিক্ষক ও গবেষকগণ অনুপ্রাণিত হবেন।”