• ঢাকা
  • রবিবার, ০৬ জুলাই, ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২, ১০ মুহররম ১৪৪৬

রাত পোহালেই খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১, ০১:৫১ পিএম
রাত পোহালেই খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

অপেক্ষার পালা শেষ। অবশেষে দীর্ঘ ১৭ মাস বন্ধ থাকার পর রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীর ক্লাস নেওয়া শুরু হবে। প্রথম দিকে শুধু চলতি বছর এবং আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস হবে। বাকি শ্রেণিগুলোর ক্লাস সপ্তাহে এক দিন করে হবে।

ইতিমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে। এখন শুধু শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ঢোকার অপেক্ষা। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বে যেসব দেশ কোভিড-১৯ অতি সংক্রমণের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখেছে, তাদের মধ্যে সংক্রমণের হার বেড়েছে অস্বাভাবিকহারে।

এমন শঙ্কা সামনে রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কীভাবে পাঠদান করা হবে—জানতে চাইলে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষক নুসরাত নাদিরা বলেন, “দীর্ঘ সময় পর স্কুল খুলছে। এটা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দের বিষয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশনা মেনে আমরা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করব। শিক্ষার্থীরা কোনোক্রমে মাস্ক খুলতে পারবে না। স্কুল থেকে জীবাণুনাশক স্প্রে দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে শিশুদের কাছে ছোট স্যানিটাইজার রাখতে বলা হয়েছে।

নুসরাত নাদিরা আরও বলেন, “শিক্ষার্থীরা আসন ছেড়ে উঠতে পারবে না। টিফিন টাইম দেওয়া হবে না। এত দিন পর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলেও একে ওপরের সঙ্গে কোলাকুলি ও করমর্দন থেকে বিরত থাকতে হবে। এমনকি ওয়াশরুমে যাওয়ার ক্ষেত্রেও সচেতনতা অবলম্বন করা হবে। সেখানে তদারকি করার জন্য আয়া থাকবেন। আসন বিন্যাসের ক্ষেত্রে তাদের ‘জেড’ আকৃতির মতো বসানো হবে।”

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে শিক্ষার্থীদের বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে, যেগুলোতে তারা অভ্যস্ত নয়। এই নিয়মগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য কঠোর হয়ে গেল কি না, জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. তৌফিক জোয়ার্দার বলেন, “কঠোর হিসেবে দেখলে ‘কঠোর’ মনে হতে পারে। আবার ডিসিপ্লিন হিসেবে দেখলে ‘ডিসিপ্লিন’ মনে হবে। আমাদের জীবনে ডিসিপ্লিনের প্রয়োজন আছে।”

ড. তৌফিক জোয়ার্দার আরও বলেন, “স্কুল খোলার বিষয়ে গত বছর সেপ্টেম্বর থেকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ—দুই জায়গা থেকেই সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে কিছু গাইডলাইনও দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ইউনিসেফ, যারা জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে তারা ঢালাওভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কথা বলেনি। এডুকেশন বাদ দিয়ে জনস্বাস্থ্য হতে পারে না। আমরা যদি শিক্ষার গুরুত্বকে অনুধাবন করি, আমাদের জীবনের জন্য শিক্ষাকে অপরিহার্য অনুষঙ্গ হিসেবে মানি, তাহলে সেই বিষয়টি মাথায় রেখে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে। আপনি লক্ষ করে দেখুন, যখন আমরা রাস্তায় নামি তখন আমাদের ঝুঁকি থাকে। কোনো গাড়ি এসে আমাদের চাপা দিতে পারে। সে কারণে রাস্তার দুই দিক দেখে আমরা রাস্তা পার হই। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিতে হয়। জীবনের সব ক্ষেত্রে ঝুঁকি মোকাবিলা করে বেঁচে থাকতে হবে। এটাই জীবন। এটাই শিক্ষা।”

স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর জোর দিয়ে ড. তৌফিক জোয়ার্দার বলেন, “আমাদের স্কুল-কলেজ খোলা রাখতে হবে। নিয়মিত তদারকি করতে হবে। সেখান থেকে যেন কোনো ইনফেকশন তৈরি না হয়, কোনো শিক্ষার্থীর যদি করোনা সংক্রমণ হয়, তাহলে তাকে আলাদা করে ফেলতে হবে। এসবের মধ্য দিয়ে আমাদের শিক্ষার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।”

এদিকে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য আন্তমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুাযায়ী ১০টি বিষয় মানতে হবে। সেগুলো হলো চেকলিস্টের মাধ্যমে দৈনিক তদারকি করা হবে প্রতিষ্ঠান, এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠাতে হবে ঢাকায়। শিক্ষার্থীদের দৈনিক সচেতন করা হবে। বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহার। হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। দৈনিক প্রত্যেকের শরীরের তাপমাত্রা যাচাই—এ জন্য গেটে ৩০ মিনিট সময় বরাদ্দ। প্রয়োজনে পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা। লক্ষণ থাকলে শিক্ষার্থীকে অনুপস্থিত হিসাবে বিবেচনা না করা। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ক্লাসরুমে বসানো, স্কুলে সমাবেশ না করা, তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাসরুমে যার যার সিটে রেখে হালকা শারীরিক কসরত। পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা। হোস্টেলে বিশেষ নির্দেশনা অনুসরণ।

তবে করোনা সংক্রমণ যদি আবারও বাড়তে থাকে, তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

Link copied!