• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

‘আপনাদের পায়ে ধরি রে, আমার স্বামীকে এনে দেন ভাই’


রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৩, ০৫:১১ পিএম
‘আপনাদের পায়ে ধরি রে, আমার স্বামীকে এনে দেন ভাই’

“আমার স্বামীকে একটার বার হলেও দেখতে চাই রে...। স্বামীকে আমি কাছ থেকে দেখিনি রে...। আপনাদের পায়ে ধরি রে...; আমার স্বামীকে একনা এনে দেন...রে ভাই। স্বামীকে কোনো দিন চোখের কাছ থেকে দেখিনি রে...। যা দেখেছি দূরে থ্যাকা...রে। যত কথা কছে দূরে থ্যাকাই কথা কছে রে...।” এভাবেই আহাজারি করে কথাগুলো বলছিলেন সৌদি আরবে সোফা কারখানায় আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া রুবেল হোসাইনের স্ত্রী মরিয়ম আক্তার।

জানা যায়, শুক্রবার (১৪ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ হতে ৩৫০ কিমি পূর্বে অবস্থিত আল আহসা শহরের হুফুফ শিল্প এলাকায় একটি সোফা কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ৯ বাংলাদেশি ও ১ ভারতীয়সহ মোট ১০ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও ২ জন।

সেখানে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বারইপাড়া গ্রামের চাচা-ভাতিজাসহ তিনজন ও মাধাইমুড়ি গ্রামের একজন। যাদের মধ্যে সাত বছরের প্রবাসী রুবেল হোসাইন নয় মাস ছয়দিন আগে মোবাইল ফোনে ভিডিও কনফারেন্সে বিয়ে করেন। প্রেম করে বিয়ে হলেও স্বামীর সঙ্গে সাক্ষাত হওয়ার আগে বিধবা হলেন কলেজছাত্রী মরিয়ম আক্তার। স্বামীর মৃত্যু সংবাদে থামছেই না মরিয়মের আহাজারি।

শনিবার (১৫ জুলাই) রুবেল হোসাইনের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, মোবাইলে স্বামীর ছবি দেখে কাঁদতে কাঁদতে মরিয়ম বলছিলেন, “আমার রুবেল বড় বড় চুল রাখতো রে...। ঈদের আগে আমি বলে চুল কাটিয়েছি রে...। বলে তাকে বলছিল রে...; মায়ের কথায় চুল কাটিসনি; বউয়ের কথায় চুল কাটলু।” আরেক ছবি দেখে বলছিলেন “এই গেঞ্জি পড়ে আমার রুবেল মারা গেছে রে...।”

মরিয়ম জানান, সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) রাত ১২টার দিকে তাদের শেষ কথা হয়। দেশে আসার জন্য শুক্রবার কাগজপত্র জমা দিয়ে কারখানায় যাবেন বলে স্ত্রীকে জানিয়েছিল রুবেল। শুক্রবার রাতে আবার কথা বলবে বলেছিল। রাতে কলও দিয়েছিলেন মরিয়ম। কিন্তু ফোন বাজে কেউ রিসিভ করেনি। রাত নয়টা পর্যন্ত ফোন বেজেছে। এরপর ফোন আর বাজেনি। শনিবার সকাল ৮টার দিকে রুবেলের প্রবাসী বড় ভাই ফোন করে জানায় রুবেল মারা গেছে।  

তিন ভাইয়ের মধ্যে রুবেল সবার ছোট। স্থানীয় দালালকে ১৬ কাঠা জমি লিখে দেওয়া ছাড়াও দেড় লাখ টাকা নগদ দিয়ে ২০১৬ সালে সৌদি আরব পাড়ি জমান রুবেল। তার বড় দুইভাই আগে থেকেই প্রবাসী। বড়ভাই সৌদি আরব এবং মেজে ভাই দুবাই থাকেন।

Link copied!