• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

কাঁচা মরিচের ঝালে নাজেহাল মধ্যবিত্ত


শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২৩, ০৯:৩২ পিএম
কাঁচা মরিচের ঝালে নাজেহাল মধ্যবিত্ত

শেরপুরে কাঁচা মরিচের দাম এখন স্বর্ণের মতো বাড়ছে। আগে এই পাইকারি বাজারে প্রতিদিন ৮০-৯০ মণ মরিচ আমদানি হতো। আর এখন সর্বোচ্চ ২০ মণ মরিচ ওঠে। দশজন ক্রেতা দাম দর করে এরমধ্যে একজন কেনেন। কথাগুলো বলছিলেন, জেলা শহরের মাধবপুর এলাকার পাইকারি সবজি কেনাবেচার স্টেডিয়াম মার্কেটের আড়তদার হজরত আলী।

হজরত আলী আরও বলেন, সবজি ভাণ্ডার হিসাবে পরিচিত শেরপুরে কয়েক দিন আগেও এক পাল্লা (পাঁচ কেজি) দেশি কাঁচা মরিচ ৩০০-৪০০ টাকায় বিক্রি হতো। এখন সেই মরিচ ১৭৫০-১৮০০ টাকা পাল্লা বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতিমণ মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৪ হাজার টাকায়। খুচরা বাজারে ক্রেতারা প্রতি কেজি মরিচ কিনছেন ৪০০ টাকায়।

সরেজমিনে ওই বাজারে গেলে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় স্থানীয় আড়তদার, খুচরা ব্যবসায়ী ও কৃষকদের। সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের যুগনীবাগ গ্রামের কৃষক কমল মিয়া বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে প্রচণ্ড খরা আর অনাবৃষ্টির কারণে মরিচ গাছে পোকার আক্রমণ হয়েছে। এ ছাড়া অজানা কারণে ফুল হলুদ রং ধারণ করে ঝরে যাওয়া এবং গাছের পাতা, গোড়া ও কাণ্ড ফুলে মাঠের পর মাঠে রোপণ করা প্রতিটি মরিচ গাছ নষ্ট হয়ে পচে গেছে। এ জন্য বাজারে কাঁচা মরিচের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আরিফ মিয়া বলেন, “৩৫ শতাংশ জমিতে মরিচের আবাদ করেছি। পুরো জমি ঘের দিতে বাঁশ কিনতে হয়েছে। সার, বীজ ও শ্রমিকের মজুরিসহ ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ক্ষেতে মরিচ আসার পর দেখি এর আকার খুব ছোট, আর ফলন একদম কম। যেখানে প্রতি শতাংশে ৪০ কেজি মরিচ পাওয়ার কথা সেখানে এক কেজিও পাওয়া যাচ্ছে না। পুরো জমি থেকে এবার ৬০০ কেজি মরিচ পাওয়ার কথা থাকলেও পেয়েছি মাত্র ২১ কেজি।”

সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের কুঠুরাকান্দা গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান ভুলু বলেন, জেলায় হাইব্রিড জাতের বিজলী এফ ওয়ান, হট মাস্টার, বিন্দু, সিন্ধু, মাস্টার, ইস্পাহানী ও দেশিসহ প্রায় ১২ রকমের মরিচের আবাদ হয়। এর মধ্যে দেশি জাতের মরিচের দাম সবচেয়ে বেশী। বর্তমানে পাইকারি বাজারে এক কেজি দেশি মরিচ ৩৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে ৪০০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না।  তবে বিন্দু নামে হাইব্রিড জাতের মরিচ বাজারে কিছুটা কম দামে পাওয়া গেলেও এর মান ভালো না।

এরশাদ আলী নামের এক কৃষক বলেন, এবার তিনি ৩০ শতাংশ জমিতে কাঁচা মরিচের আবাদ করেন। ওই জমি থেকে ৪০ মণ মরিচ পাওয়ার কথা থাকলেও পেয়েছেন মাত্র ৬ মণ। এ জন্য তিনি অতিরিক্ত খরা আবহাওয়াকে দায়ী করেন।

শহরের নয়আনী বাজারের খুচরা বিক্রেতা আসগর আলী বলেন, পাইকারি বাজার থেকে প্রতিপাল্লা কাঁচা মরিচ ১৮০০ টাকা দিয়ে কিনে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ৪০০ টাকা বিক্রি করলেও তাদের পোষাচ্ছে না। কারণ পাইকারি বাজারে মরিচ কেনার পর আড়ত জমা, কুলি খরচ আর পরিবহন ভাড়া দিয়ে তাদের লাভের অংশ খুবই কম থাকে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুকল্প দাশ বলেন, সবজি উদ্বৃত্ত এ অঞ্চলে মরিচের ঘাটতি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই এলাকার সবজি পাশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাতে সরবরাহ কারা হয়। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে এই সবজি থেকে অতিরিক্ত মুনাফা লুটতে ফাঁদ পেতেছে।

সুকল্প দাশ জানান, জেলার সদর উপজেলাসহ নকলা, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদীর ৩৫৫ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমি থেকে ৭ টন মরিচ উৎপাদন হয়। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার টন মরিচ পাওয়া যায়।

Link copied!