• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

তীব্র তাপদাহ : ফেনীর হাসপাতালে ৪ গুণ রোগী ভর্তি


ফেনী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৪, ০১:৫০ পিএম
তীব্র তাপদাহ : ফেনীর হাসপাতালে ৪ গুণ রোগী ভর্তি
রোগীতে ঠাসা ফেনী জেনারেল হাসপাতাল। ছবি : প্রতিনিধি

তাপপ্রবাহ বাড়ার সঙ্গে ফেনীতে দিনে দিনে বাড়ছে নিউমোনিয়া, জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়াজনিত রোগ। রোগী বাড়লেও চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে জেলার সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল ফেনী জেনারেল হাসপাতাল। হাসপাতাল প্রশাসন বলছেন, গত এক সপ্তাহে ধারণক্ষমতার তিন থেকে চারগুণের বেশি রোগী নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। সিট না পেয়ে অধিকাংশ রোগীকে মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। 

শনিবার (২০ এপ্রিল) ফেনী জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ২৬ শয্যার বিপরীতে চিকিৎসা নিচ্ছে ১০৪ জন। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১৭ শয্যার বিপরীতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৩২ জন। তারমধ্যে ২৫ জনই শিশু।

হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের মহিলা ওয়ার্ডে ২৬ শয্যার বিপরীতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৮০ জন এবং পুরুষ ওয়ার্ডে একই শয্যার বিপরীতে রোগী ৫৭ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। আক্রান্তদের বেশিরভাগ শিশু ও নারী। যারা জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ নানা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালে দাগনভূঞা উপজেলার সিলোনিয়ার বাসিন্দা ইউসুফ মিয়া বলেন, “৩ দিন আগে অতিরিক্ত জ্বর নিয়ে নাতনিকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। পরীক্ষায় নিউমোনিয়া ধরা পড়েছে৷ সিট না পেয়ে ওয়ার্ডের বারান্দায় বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।”

রাজাপুর এলাকার বাসিন্দা তাহমিনা আক্তার বলেন, “শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ১১ মাস বয়সী মেয়েকে নিয়ে তিন দিন ধরে হাসপাতালে আছি। এখানে এত বেশি রোগীর চাপ, ওয়ার্ডে রোগী থাকার মতো কোনো অবস্থা নেই। বাধ্য হয়ে ওয়ার্ডের বাইরে খোলা জায়গায় বিছানা করে চিকিৎসা নিচ্ছি।”

পরশুরাম উপজেলার বক্সমাহমুদ এলাকার বাসিন্দা রুজিনা আক্তার বলেন, “দুদিন কষ্ট করে ছিলাম। এতো রোগীর চাপ ঠিকমতো কাউকে কাছে পাইনা। পুরোপুরি সুস্থ না হয়েই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।”

হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে কর্তব্যরত সেবিকা শ্যামলী রাণী বলেন, শনিবার (২০ এপ্রিল) সকাল থেকে প্রায় ৪০ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে। গত কয়েক দিনের গরমে রোগীর চাপ কয়েকগুণ বেড়েছে। তারপরও সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিতের চেষ্টা করছি৷

ডায়রিয়া ওয়ার্ডে দায়িত্বরত জ্যেষ্ঠ সেবিকা আনোয়ারা বেগম বলেন, গত ৩-৪ দিনে প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ৩০ জন করে নারী ও শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছে। রোগীর চাপের সঙ্গে গরমে খুব কষ্ট হচ্ছে সবার।

আরেক নার্স শ্যামলী রাণী বলেন, শনিবার (২০ এপ্রিল) সকাল থেকে ৪০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে, “যাদের অধিকাংশই জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত। গত কয়েক দিনের গরমে রোগীর চাপ বেড়েছে। শয্যার অধিক রোগী হওয়ায় আমাদের জন্য চাপ হলেও সেবা নিশ্চিত করছি।”

এদিকে গত কয়দিনের তীব্র গরমে হাসপাতালের বহির্বিভাগেও বেড়েছে রোগীর চাপ। বহির্বিভাগের কাউন্টারে দায়িত্বরত শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন প্রায় ১৫শ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগ শিশু ও নারী রোগী। সপ্তাখানেক ধরে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ শিশু রোগী আউটডোরে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে।

এ ব্যাপারে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মো. আসিফ ইকবাল বলেন, গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে রোগীর চাপ ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি। গরমের এইসময়ে নিউমোনিয়া, জ্বর, ডায়রিয়াসহ নানা রোগ নিয়ে শিশু ও নারী রোগী ভর্তি হচ্ছেন বেশি। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি তাদের চিকিৎসা সেবা দিতে। তবুও শয্যার বিপরীতে অতিরিক্ত রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শয্যা সংকটে অধিকাংশ রোগীকে মেঝেতে থাকতে হচ্ছে।

অন্যদিকে জেলায় গত কয়েকদিন ধরেই তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। জেলা আবহাওয়া দপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, শনিবার (২০ এপ্রিল) ফেনীতে সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

এর আগে ১৩ এপ্রিল জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আগামী কয়েক দিনে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

Link copied!