• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক গালিবের মা


রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২৩, ০৮:৩২ পিএম
স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক গালিবের মা

২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্বামীর মৃত্যুর পর একমাত্র ছেলে রিফাত খন্দকার গালিবকে নিয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতেন কলেজ শিক্ষিকা মা লাভলী বেগম। কিন্তু সেই স্বপ্ন কেঁড়ে নিলো পদ্মা নদী। পদ্মা নদীতে গোসলে নেমে লাশ হয়ে ফিরলেন ছেলে রিফাত খন্দকার গালিব।

শনিবার (১০ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মহানগরীর দরগাপাড় এলাকার মৃত গাজী মইদুদ্দিনের ছেলে রিফাত খন্দকার গালিব ও মেহেরচন্ডী এলাকার সাইদুর রহমানের ছেলে সারোয়র সায়েমসহ কয়েকজন বন্ধু ফুটবল খেলা শেষে পদ্মা নদীতে গোসল করতে নামেন। গোসলের এক পর্যায়ে গালিব ও সায়েম সাঁতার না জানায় পানির স্রোতে নদীতে তলিয়ে যান। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় জেলার ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল তাদের সন্ধানে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। কিন্তু শনিবার সারাদিন অভিযান চালিয়েও কারও লাশ উদ্ধার করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।

এদিকে পদ্মায় নিখোঁজের খবরে শোকের ছায়া নেমে আসে সায়েম ও গালিবের পরিবারে। রিফাত খন্দকার গালিব তার পরিবারের একমাত্র সন্তান। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গালিবের বাবা মারা যান। এরপর থেকেই একমাত্র সন্তানকে নিয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেন মা লাভলী। এসএসসি পাশ করার পর রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হন গালিব। শনিবার ছুটির দিন থাকায় পদ্মানদীর চরে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে যান গালিব। খেলা শেষে নদীতে গোসল করতে নেমে নদীতে তলিয়ে যান।

রোববার (১১ জুন) সকালে সায়েমের লাশ পাওয়া যায়। ততক্ষণেও লাশের সন্ধান মেলেনি গালিবের। এতে করে বাকরুদ্ধ হয়ে নদীর পারে লাশের অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকেন গালিবের মা। রোদ আর গরমকে উপেক্ষা করে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীদের সঙ্গে ছেলের লাশ পাওয়ার আশায় নৌকায় ঘুরতে থাকেন মা লাভলী।

পরে রোববার দুপুর ১২টার দিকে গালিবের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। 

গালিবের মা লাভলী বাকরুদ্ধ অবস্থায় বলেন, “আমার বেঁচে থাকার শেষ সম্পদ টুকুও শেষ হয়ে গেলো।”

গালিবের ফুফু তনিমা বেগম আহাজারি করে বলেন, “এভাবে কেনো হারিয়ে গেলে বাবা।”

গালিবের ফুফাতো বোন রিক্তা পারভিন বলেন, “গালিব পরিবারের একমাত্র সন্তান। বাবা কলেজ শিক্ষক ছিলেন। তিন বছর আগে মৃত্যুবরণ করলে তার মা একমাত্র ছেলেকে নিয়ে বেঁচে ছিলেন। স্বপ্ন দেখতেন ছেলেকে নিয়ে ভালোভাবে বেঁচে থাকার। কিন্তু সেই স্বপ্নও ভেঙে গেলো। কি নিয়ে বেঁচে থাকবে এই পৃথিবীতে এটাই তার বড় চিন্তা। ছুটির দিন হওয়ায় খেলাধুলা করতে যেতে নিষেধ করেননি গালিবকে। কিন্তু এখানে এসেই যে এমন পরিণতি হবে তা জানা ছিলো না।”

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাজশাহী সদর দপ্তরের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবদুর রউফ বলেন, “ফায়ার সার্ভিসের মোট ছয়জন ডুবুরি উদ্ধার কাজ চালিয়ে গালিবের লাশ উদ্ধার করেছে। এর আগে, সাইমের লাশ পাওয়া যায়। গালিবের লাশ পুলিশের মাধ্যমে পরিবারকে বুঝিয়ে দিয়ে উদ্ধার অভিযান বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।”  

Link copied!