• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

বাবার বিরুদ্ধে মেয়েকে হত্যার অভিযোগ


কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২৪, ০৪:১৪ পিএম
বাবার বিরুদ্ধে মেয়েকে হত্যার অভিযোগ
কিশোরগঞ্জ মডেল থানা। ছবি : সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জে বাবার বিরুদ্ধে তার ৯ বছর বয়সী এক মেয়েকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাতেই মেয়েটির বাবা আরজু মিয়াকে আটক করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) মধ্যরাতে সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের খিলপাড়া বন্দের বাইত এলাকা থেকে মেয়ে বৃষ্টি আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

আরজু মিয়া রশিদাবাদ ইউনিয়নের শিমুলিয়া এলাকার বাসিন্দা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে আরজু মিয়া ও ফাতেমা আক্তারের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর কলহের কারণে দেড় বছর আগে তারা আলাদা বসবাস করতেন। চার মাস আগে আরজু ও ফাতেমার ডিভোর্স হয়ে যায়। ডিভোর্সের পর বড় ছেলে ফাহিম বাবার সঙ্গে ও দুই মেয়ে বৃষ্টি আক্তার ও জান্নাতুল মায়ের সঙ্গে থাকত।

সংসার চালানোর জন্য ফাতেমা জেলা শহরের নগুয়া এলাকার একটি বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে আরজু মিয়া ফাতেমা আক্তারের বাড়িতে যায়। পরে বৃষ্টি ও জান্নাতুলকে শীতের কাপড় কিনে দেওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে বের হয় যায়। পরে রাতে আরজুর স্বজনরা ফাতেমাকে জানায় তার মেয়ে বৃষ্টি আক্তারকে মেরে ফেলছে। খবর পেয়ে রাতেই খিলপাড়া বন্দেরবাইত এলাকা থেকে পুলিশ গিয়ে বৃষ্টির মরদেহ উদ্ধার করে।

বৃষ্টির মা ফাতেমা আক্তার বলেন, “আমি মঙ্গলবার সকালে কাজে যাই। আমি বাড়িতে না থাকা অবস্থায় দুপুরে আরজু আমাদের বাড়িতে এসে শীতের কাপড় কিনে দেওয়ার কথা বলে বৃষ্টি ও জান্নাতুলকে নিয়ে যায়। বিকেলে বাড়িতে কল দিলে বিষয়টা জানতে পারি। আমি তখন আমার ফুফুকে বলি, ‘আপনি কেন মেয়েদের তার সঙ্গে যেতে দিলেন। সে কেমন তা তো আপনারা জানেন।’ ফুফু আমাকে বলেন, ‘শীতের কাপড় কিনে দেবে বলল, তাই যেতে দিয়েছি। শত হলেও তো আরজু তাদের বাবা।’

ফাতেমা আক্তার আরও বলেন, “রাত ৮টায় বৃষ্টি তার বাবার ফোন থেকে ফাতেমাকে কল দিয়ে বলে, ‘আব্বা বলতেছে রাতে তার সঙ্গে থাকতাম।’ পরে আমি বৃষ্টিকে না করি ওখানে থাকতে। এই কথা শোনা মাত্রই আরজু আমাকে অকথ্য ভাষায় গালি দেয়। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে আরজুর ভাতিজা আমাকে ফোন দিয়ে বলে, ‘বৃষ্টিকে তো মাইরা ফেলছে।’ এরপর থানা থেকে আমাকে ফোন দেওয়া হয়। পুলিশ আমাকে মরদেহ শনাক্ত করার জন্য ওখানে যেতে বলে। আমি গিয়ে দেখি আমার মেয়ে মরদেহ পড়ে আছে। আমার মেয়েকে আরজুই হত্যা করেছে। আমি এর বিচার চাই।”

ফাতেমা আক্তার যে বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করেন সে বাসার মালিক আরজানা পিংকি বলেন, “আমরা গিয়ে দেখি লাশ পড়ে আছে মাটিতে এবং মরদেহের পাশেই হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আরজু বসা। আর তিন বছর বয়সী জান্নাতুল শীতে জবুথবু হয়ে বসে আছে তাদের পাশে। বৃষ্টি হাফিজিয়া মাদ্রাসায় পড়ত। ১৫ দিন আগে বাড়িতে আসে। শুক্রবার তাকে মাদ্রাসায় দিয়ে আসার কথা ছিল। আমার গৃহপরিচারিকাকে আরজু অনেক অত্যাচার করত এবং কয়েকবার মেরে ফেলার চেষ্টাও করেছে। সন্দেহ করছি বৃষ্টিকে আরজুই হত্যা করে নাটক সাজিয়েছে।”

কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, “শিশুটির মরদেহের গলায় দাগ পাওয়া গেছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি রহস্যজনক। প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।”

Link copied!