• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

সমুদ্রসৈকতে ভেসে এলো বিপন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী


কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪, ০৯:৫১ এএম
সমুদ্রসৈকতে ভেসে এলো বিপন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে জোয়ারের সঙ্গে ভেসে এল মৃত পরপইস। ছবি : সংগৃহীত

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে এবার জোয়ারের সঙ্গে ভেসে এলো মরা পরপইস। বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে শহরের সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে এই সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীটি ভেসে আসে।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশীদ বলেন, এটি বোরির স্পেসিমেন মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করা হয়েছে। তিনি জানান, মৃত পরপইসটি ওজনে মাত্র ৩ দশমিক ৮৮ কেজি। এটি একটি সদ্য প্রসবকৃত বাচ্চা পরপইস হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, কক্সবাজারে পরপইস উদ্ধারের ঘটনা এই প্রথম। এটি ইংরেজিতে ইন্দো প্যাসিফিক ফিনলেস পরপইস হিসেবে পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম নিওফোকেনা ফোকেনয়েডস। দেখতে ইরাবতী ডলফিনের মতো পরপইস একটি ছোট জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী। কিন্তু এদের পৃষ্ঠীয় পাখনা থাকে না। বাচ্চা অবস্থায় কালো রঙের হলেও বয়সের সঙ্গে রং বিবর্ণ হয়ে যায়। এটি ৫-৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এদের শরীর মজবুত এবং মাথা অনেকটা গোলাকার।

তিনি জানান, প্রাণীটি অগভীর জল, জলাভূমি এবং মোহনা পছন্দ করে। এরা সাধারণত একাকী চলাফেলা করতে পছন্দ করে। কিন্তু মাঝেমধ্যে খাদ্য গ্রহণের সময় এদের ৫ থেকে ১২টি বা ৫০টির বেশি দলে ঘুরতে দেখা যায়। এরা মাছ, স্কুইড,  চিংড়ি,  অক্টোপাস এবং মাঝে মাঝে সামুদ্রিক উদ্ভিদও খায়। সাধারণত বসন্তে বা গ্রীষ্মে প্রাণীটি বাচ্চা দেয়। বাচ্চারা জন্মের পর মায়ের পিঠে লেগে থাকতে দেখা যায়। মাছ ধরার জালে আটকে পড়ে, নৌকার সঙ্গে সংঘর্ষে, শব্দ ও জল দূষণ এবং বাঁধ, পোতাশ্রয়সহ অন্যান্য নির্মাণ কাঠামোর কারণে এরা হুমকিতে পড়েছে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকায় এটি বিপন্ন প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত।

ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির সর্বশেষ জরিপে বঙ্গোপসাগরে মোট ১৩ জাতের সিটাসিয়ান বা সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৮ প্রজাতির ডলফিন, ৪ প্রজাতির তিমি ও মাত্র এক প্রজাতির পরপইস রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছর ৩০ মার্চ সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে একটি মরা ইরাবতী ডলফিন ভেসে এসেছিল। এর আগে গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি ইনানীর হোটেল সি পার্ল সংলগ্ন সৈকতে একই প্রজাতির মরা ডলফিন ভেসে আসে। ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট ও ২০ মার্চ একই সৈকতে মরা ডলফিন ভেসে এসেছিল। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের শুরুতেও টেকনাফ সৈকতে দুটি মরা ডলফিন ভেসে এসেছিল।

এ ছাড়া গত বছর ১৮ এপ্রিল রাতে কলাতলী সৈকতে একটি মরা তিমি ভেসে আসে। ২০২১ সালের ৯ ও ১০ এপ্রিল পরপর দুই দিনে হিমছড়ি সৈকতে দুটি মরা তিমি ভেসে এসেছিল। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কক্সবাজার শহর, রামু, উখিয়া, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন ও সোনাদিয়া সৈকতে অন্তত ১৯টি মরা সামুদ্রিক কচ্ছপ ভেসে এসেছে।
 

Link copied!