• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

রমজানের আগেই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম


চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ১, ২০২৪, ০৬:১৩ পিএম
রমজানের আগেই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম

রমজান শুরু হওয়ার দেড় সপ্তাহের বেশি সময় বাকি থাকতেই চট্টগ্রামে ব্রয়লার মুরগি, পেঁয়াজ, খেজুর ও চিনির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এর কারণে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ।

দেশে বর্তমানে সরবরাহ সংকট না থাকলেও কিছু অসাধু আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের একটি অংশ রমজানকে সামনে রেখে বাড়তি মুনাফা পেতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। 
প্রতি বছর রমজানকে সামনে রেখে ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, ডাল, খেজুর ও পেঁয়াজের মতো পণ্যের দাম বাড়তে থাকে।

আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় রমজান শুরু হওয়ার প্রায় দেড় সপ্তাহ বাকি থাকলেও চট্টগ্রামে ছোলা, খেজুর ও সয়াবিন তেলের দাম ইতোমধ্যে বেড়ে গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি বছরই রমজানকে কেন্দ্র করে বাজারে প্রশাসনের নজরদারি, অভিযানসহ বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এবার সেই সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে কয়েক সপ্তাহ আগেই পণ্যগুলোর দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, “প্রতি বছরই রমজানের কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে। রমজানের সময় তদারকি বেশি থাকে এ কারণে আগেই দাম বাড়িয়ে বাজার থেকে টাকা তুলে নেয়। এবারও তাই হচ্ছে। একদিকে নির্বাচন গেল এ সুযোগে সবকিছুর দাম বেড়েছে। চালের দামও বাড়ানো হয়েছে অথচ এখন ভরা মৌসুম। এ কারণে এখন থেকেই রমজানের তদারকি শুরু করতে হবে।”

জানা যায়, রমজান উপলক্ষে গত ৮ ফেব্রুয়ারি চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুর আমদানির ওপর শুল্ক-কর ছাড় দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে বলা হয়, পরিশোধিত সয়াবিন তেল, অপরিশোধিত সয়াবিন তেল, অপরিশোধিত পাম তেল ও পরিশোধিত পাম তেলে আমদানি পর্যায়ে আরোপিত মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। তাতে প্রতি কেজি অপরিশোধিত সয়াবিনে ৫ টাকা ৬৭ পয়সা করভার কমবে। পাম তেলে কেজিতে করভার কমবে ৪ টাকা ৬৬ পয়সা। সিদ্ধ ও আতপ চালের ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। একইভাবে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা রেগুলেটরি ডিউটি ২৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। আগে চাল আমদানিতে কেজিতে করভার ছিল ৩১ টাকা। এখন তা কেজিতে সাড়ে ২৩ টাকা কমানো হয়।

শুল্ক ছাড় ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারির পরও দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে দামে কোনো প্রভাব পড়েনি। উল্টো চিনি, চাল ও ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছেই। অথচ চিনির দাম কমাতে তিন মাসের ব্যবধানে দুদফায় কমানো হয়েছে আমদানি শুল্ক। কয়েক দিনের ব্যবধানে পণ্যটির মণপ্রতি দাম বেড়েছে ৫০ টাকা। আসন্ন রমজান ও গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে চিনির বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা।

সবজির দাম কিছুটা কমলেও মাংস আগের মতোই রয়েছে। ভোক্তাদের অভিযোগ, সরকার ভোগ্যপণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়েছে। কিন্তু দাম কমছে না। অথচ কোনো পণ্যে শুল্ক বাড়ালে ব্যবসায়ীরা মিনিটের মধ্যেই বাড়তি দাম কার্যকর করেন। সরকার নির্ধারিত দাম কাগজেকলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। নির্ধারিত দাম বাজারে কার্যকর হয়েছে কি না, তা যাচাই-বাছাই বা নজরদারি কিছুই নেই। এতে সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে।

এতসব উদ্যোগ নেওয়ার পরও ভোগ্যপণ্যের বাজারে দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। কয়েকদিন আগেও প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) চিনির পাইকারি দাম ছিল ৪ হাজার ৮৭০ টাকা। শুল্ক কমানোর ঘোষণা আসার পর দাম আরও বেড়েছে। বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে মণপ্রতি ৪ হাজার ৯২০ টাকায়। কেজিতে দাম বেড়েছে ১ টাকা ৩৫ পয়সা। শুল্ক কমানোর ফলে কেজিপ্রতি প্রায় ১ টাকার বেশি কমার সম্ভাবনা থাকলেও তা বাস্তবে দেখা যাচ্ছে না; বরং ১ টাকার বেশি বেড়েছে।

চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, মানভেদে প্রতি বস্তায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে। জিরাসাইল চাল ৫০ কেজির বস্তা আগে ছিল ২৯০০-৩০০০ টাকা, বেড়ে হয়েছে ৩১০০ টাকা। পাইজাম প্রতি বস্তা আগে ছিল ২৪২৫, বেড়ে হয়েছে ২৬০০ টাকা। নুরজাহান প্রতি বস্তা আগে ছিল ২২০০, এখন বিক্রি হচ্ছে ২২৫০ টাকায়। ভোজ্যতেল লিটারে প্রায় দুই টাকা বেড়েছে। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৭২ ও প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৭ টাকায়।

এছাড়া কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়িয়ে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। ছোলার পাশাপাশি বাড়ছে অন্যান্য ডালের দামও। প্রতি কেজি ছোলার ডাল ১০০ থেকে ১১০, অ্যাংকর ডাল ৭৫ থেকে ৮০, ডাবলির ডাল ৭৫, মোটা দানার মসুর ডাল ১০৫ থেকে ১১০, চিকন মসুর ডাল ১৩৫ থেকে ১৪০, মোটা দানার মুগডাল ১৪৫ থেকে ১৫০, চিকন মুগডাল ১৭০ থেকে ১৮০ এবং খেসারি ডাল ১০৫ থেকে ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলেন, ডলারের দাম বাড়ার কারণে চিনির দাম বাড়ছে। এতে শুল্ক প্রত্যাহারের পরও দামে কোনো প্রভাব পড়ছে না। তবে চট্টগ্রামে সবজির দাম কিছুটা কমেছে। স্থিতিশীল রয়েছে মাংসের দাম।

এছাড়া সবজির বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি মুলা ৩০ থেকে ৩৫, শালগম ৪০, করলা ৬০ থেকে ৮০, শসা ৬০, লতি ৮০, শিম ৫০ থেকে ৬০, বরবটি ৮০, পেঁপে ৩৫ থেকে ৪০ এবং গাজর বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। প্রতি কেজি বেগুন জাতভেদে ৬০ থেকে ১০০, খিরা ৫০, টমেটো ৪০ থেকে ৬০, কাঁচা টম্যাটো ৩০ থেকে ৪০ এবং পেঁয়াজের কলি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০ থেকে ২১০, সোনালি মুরগি ৩৫০, দেশি মুরগি ৫৮০ থেকে ৬০০, সাদা লেয়ার ২৬০ এবং লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকায়।

Link copied!