২০১৬ সালে ঘরের মাঠে অণূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ। সেই দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন উইকেটরক্ষক ব্যাটার জাকের আলি। ওই দলের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, নাজমুল হোসেন শান্তরা এখন দেশের শীর্ষ ক্রিকেটারদের তালিকায় আছেন। সেই তুলনায় জাকের কিছুটা আড়ালেই ছিলেন এতদিন।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রত্যেক টুর্নামেন্টে ধারাবাহিকভাবে রান করেছেন জাকের। এবারের বিপিলেও তার ব্যাট থেকে এসেছে বেশ কয়েকটি নজড়কাড়া ইনিংস। এবার ধারাবাহিক পারফর্মেন্সের পুরস্কার পেলেন তিনি। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য দলে ডাক পেয়েছেন জাকের।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) হোম অফ ক্রিকেটে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন লিগের (ডিপিএল) তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচে মোহামেডান স্পোর্টিং লিমিটেডের মুখোমুখি হয়েছিল আবাহনী লিমিটেড। এই ম্যাচের মাঝেই জাকের পেয়েছেন জাতীয় দলের সুখবর।
ম্যাচ শেষে সাংবাদিকের নিজের অনুভূতির কথা শুনিয়েছেন জাকের। তিনি বলেন, জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন সব ক্রিকেটারেরই থাকে। সুযোগ কাজে লাগাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি।
জাকের বলেন, “অনেক ভাল লাগছে। প্রতিটা ক্রিকেটারেরই স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলের হয়ে খেলার। অনেক দিন ধরে চেষ্টা করছিলাম, নিজেকে তাগিদ দিচ্ছিলাম বড় পারফরম্যান্স করার। সুযোগ এসেছে, ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করব ভালো কিছু করার।”
আবাহনীর হেড কোচের দায়িত্বে আছেন খালেদ মাহমুদ সুজন। তিনি আগে থেকেই প্রস্তুত থাকতে বলেছিলেন বলে জানান জাকের।
“আমি ম্যাচের মধ্যেই জানতে পেরেছি আর কি যে টি-টোয়েন্টি দলে সুযোগ পেয়েছি। সুজন স্যার (খালেদ মাহমুদ) আমাকে আগেই জানিয়েছিলেন যে, `প্রস্তুত থাকিস। হয়তোবা হতে পারে।` তবে নিশ্চিত খবরটা কিছুক্ষণ আগে ডাগআউটে জানতে পেরেছি। আমি তো ম্যাচে ছিলাম, কিপিং করলাম। এই আর কি” যোগ করেন জাকের।
জাতীয় দলের খেলা সবার জন্যই চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করেন জাকের। তবে চ্যালেঞ্জ থাকলেও নিজের কাজ ঠিককাঠ করাতেই বেশি মনোযোগ এই উইকেটরক্ষক ব্যাটারের।
জাকের বলেন, “প্রতিটি প্লেয়ারের জন্যই চ্যালেঞ্জিং। অন্যান্য যারা কিপার আছে, তারাও হয়তো এভাবেই দেখেন জিনিসগুলো। অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং, তবে চেষ্টা করব নিজের কাজটা ঠিকঠাক করার। যেমন দায়িত্ব থাকে, ওইটা পালন করার চেষ্টা করব।”
সাম্প্রতিক সময়ে সবখানেই ধারবাহিকভাবে পারফর্ম করছেন জাকের। সবমিলিয়ে এই সময়কেই নিজের ক্যারিয়ারের সেরা সময় বলছেন তিনি। আর এই সময়েই জাতীয় দলে ডাক পেয়ে দারুণ খুশি এই ডানহাতি ব্যাটার।
“সাম্প্রতিক এক-দুই বছরের পরিসংখ্যান যদি দেখেন, তাহলে বোঝা যাবে। এই সময়টা আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো যাচ্ছে। তো পিক টাইমটায়ই আমার মনে হয় ডাকা হয়েছে” যোগ করেন জাকের।
এবারের বিপিএলেই মূলত জাকের সবার নজড়ে এসেছেন। গত বিসিএলেও ৩ সেঞ্চুরিতে সর্বোচ্চ ৪৯২ রান এসেছে জাকেরের ব্যাট থেকে। বিপিএলে তিনি চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে ব্যাটিং করেছেন ১২০ স্ট্রাইক রেটে। তবে বিপিএলে সব ম্যাচ খেলতে পারায় তার ক্যারিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন জাকের।
জাকের বলেন, “অবশ্যই। সবচেয়ে বড় কথা, সবশেষ বিপিএলের প্রতিটি ম্যাচ আমি খেলেছি। এর আগের বিপিএলগুলোয় আমি ম্যাচ পাচ্ছিলাম না। ম্যাচ পাওয়ার কারণে আমি বিভিন্ন জায়গায় ব্যাটিং করার সুযোগ পাই। আমি বলব না যে পুরোপুরি ভালো খেলতে পেরেছি। তবে আমি গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইনিংস খেলেছি। যেগুলো আমার ক্যারিয়ারের জন্য অনেক ভালো হয়েছে।”
শেষ কয়েক মাসে নিজেকে স্লগ ওভারের জন্য প্রস্তুত করেছেন বলে জানান জাকের। বিপিএলে শেষের দিকে ব্যাটিং বিপিএলেও স্লগ ওভারে ব্যাটিং করেছেন, আবাহনীর অনুশীলনেও নিজেকে প্রস্তুত করেছেন।
তিনি আরও বলেন, “আমি বিপিএলে এরকম জায়গায়ই (শেষ দিকের ওভারে) ব্যাটিং করেছিলাম। তখন আমার ওরকম পরিকল্পনা নিয়ে অনুশীলনের অভিজ্ঞতা আছে। আমি ঘরোয়াতেও আবাহনীর যে অনুশীলন, ওখানেও আমি স্লগের কিছু অনুশীলন করে নিয়েছি। তো এগুলো আমার ব্যক্তিগত কিছু প্রস্তুতি আছে। এরকমভাবেই নিজেকে আমি প্রস্তুত করেছি।”
তবে জাতীয় দলে ডাক পেয়ে স্বাভাবিক আছেন বলেই জানান জাকের। অন্যান্য ম্যাচগুলোর মতোই জাতীয় দলেও একই ফোকাস নিয়ে খেলতে চান তিনি।
জাকের বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ! আমি স্বাভাবিকই আছি। অন্যান্য ম্যাচগুলি আমি যেরকম ফোকাস নিয়ে খেলি, একই ফোকাস নিয়ে আমি যাব ইনশাআল্লাহ।”