চলতি মৌসুমের একপর্যায়ে ছেলে-মেয়ে দুই বিভাগেই উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের বড় সম্ভাবনা জাগিয়েছিল বার্সেলোনা। ছেলেদের সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয় সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের কাছে হেরে। এবার কাতালান নারী দলও একই তিক্ততায় পুড়ল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তিনবারের শিরোপাজয়ী বার্সেলোনাকে কাঁদিয়ে এবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আর্সেনাল। যা কোনো ইংলিশ ক্লাব হিসেবে প্রথম।
পর্তুগালের লিসবনে ২৪ মে (শনিবার) রাতে নারী চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে মুখোমুখি হয় দুই দল। যেখানে প্রথমার্ধে কোনো দলই গোল করতে পারেনি। ডেডলক ভাঙা গোল আসে ৭৪ মিনিটে। স্টিনা ব্ল্যাকস্টেনিয়াসের একমাত্র গোলটিই শিরোপা নির্ধারণ করে দেয়। ১-০ গোলের জয়ে আর্সেনালের মেয়েরা ১৮ বছর পর ইউরোপীয় কোনো প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত সাফল্য পেল। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের একমাত্র দল হিসেবে সর্বশেষ ২০১৭ সালে তারা উয়েফা ওমেন্স কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়।
এই ম্যাচে বার্সেলোনার মেয়েরা ছিল পরিষ্কার ফেভারিট। তারা গত পাঁচ বছরে চতুর্থ শিরোপার লক্ষ্যে খেলছিল এবং ফরাসি ক্লাব লিঁও ছাড়া আর কোনো দল টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতেনি। দুইবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী আইতানা বোনমাতি ও আলেক্সিয়া পুতেয়াসের নেতৃত্বে গড়া কাতালান দলটি নকআউটে উলফসবার্গ ও ইংলিশ চ্যাম্পিয়ন চেলসিকে উড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ফাইনালে আর্সেনাল দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু বাদ দিলে এবং সেরা সুযোগগুলো তৈরি করে।
বার্সেলোনা গোলরক্ষক কাটা কোলের দুটি অসাধারণ সেভ ফ্রিদা মানুম ও ব্ল্যাকস্টেনিয়াসের প্রচেষ্টা থামিয়ে দেয়। তবে শেষমেশ ব্ল্যাকস্টেনিয়াস জাল খুঁজে নেন ৭৪তম মিনিটে। এটি ছিল আর্সেনালের জন্য একটি রূপকথার মত সমাপ্তি। কোচ ইয়োনাস আইডেভাল পদত্যাগ করার পর সহকারী কোচ রেনে সেগলার্স গানারদের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তার অধীনে ইউরোপে দুর্দান্ত পথচলা শুরু করে দলটি। রিয়াল মাদ্রিদ ও আটবারের চ্যাম্পিয়ন লিঁও-র বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও ফিরে আসার জয়েই আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। আর সেখান থেকেই গতকালের ঐতিহাসিক জয়।
লিসবনের স্টেডিয়ামেও বার্সেলোনার সমর্থকরাই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবে শেষ দিকে তাদের চিৎকারও ম্যাচের মোড় ঘোরাতে পারেনি। বার্সার সবচেয়ে কাছাকাছি গোলের সুযোগ ছিল ক্লোদিও পিনার শট, যা দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বার কাঁপিয়ে ফিরে আসে। এরপর আর বার্সা ছন্দে ফিরতে পারেনি। ম্যাচের পর বার্সেলোনার তারকা ফরোয়ার্ড বোনমাতি বলেন, ‘আমরা আমাদের সব সমর্থকদের কাছে দুঃখিত। যারা আমাদের সমর্থন করতে এসেছে। আমরা আবার চেষ্টার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’
আর্সেনাল এই ম্যাচের শুরুতে কিছুটা নার্ভাস ছিল, তবে দ্রুতই ঘুরে দাঁড়ায় তারা। তাদের প্রেসিং খেলার ছন্দ কেড়ে নেয় বার্সেলোনার। বাঁ দিক দিয়ে লং পাসে আক্রমণ চালিয়ে যায় আর্সেনাল। ইংলিশ তারকা রুসো পুরো ম্যাচে দলকে সামনে টানতে থাকেন, বল ধরে রেখে আক্রমণে শাণান একের পর এক। যদিও তাদের গোল পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে দ্বিতীয়ার্ধের আধঘণ্টা পর্যন্ত। শেষমেষ ১-০ গোলের জয় তাদের দাপটকে সাফল্যে পরিণত করে।
রেফারি শেষ বাঁশি বাজাতেই আর্সেনালের খেলোয়াড়রা একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন এবং গ্যালারিতে থাকা সাদা-লাল শিবিরের দিকে দৌড়ে যান। মেতে ওঠে পুরো ইংলিশ ক্লাবটির সমর্থকরা। ম্যাচ শেষে আর্সেনাল স্ট্রাইকার আলেসিয়া রুসো বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই বিশ্বাস করেছিলাম। আমাদের সামর্থ্য ছিল, শুধু সেটাকে কাজে লাগানো ছিল প্রশ্ন। আর আমরা সেটা করে দেখিয়েছি!’