• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিলিস্তিনিদের মুক্তির সংগ্রাম


খোকন দাস
প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২৩, ১০:৩৬ এএম
ফিলিস্তিনিদের মুক্তির সংগ্রাম

গত এক বছরের অধিক সময় থেকে ইউক্রেনে পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধে বিশ্বে ক্ষমতাকাঠামোর যে পরিবর্তন হতে চলেছে, ঠিক সে সময় হামাস সর্বশক্তি নিয়ে দখলদার ইসরায়েলের ওপর হামলা করেছে।

বড় ধরনের হামলা এর আগেও হয়েছে। তবে এবারের হামলা অতীতের হামলাগুলোর তুলনায় নানা দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ।

অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ ইসরায়েল এখন পাল্টা হামলা করছে, এটা সত্য শনিবার ভোরে দখলদার ইসরায়েলিদের ওপর যে রকেট-ঝড় বয়ে গেছে, তা তারা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। দশকের পর দশ মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিদের যে রক্ষ ঝরিয়েছে, শিশুদের হত্যা করে এসেছে, এটা যে কতটা বেদনার শনিবার সকালের হামলায় ইসরায়েলিরা সামান্য উপলব্ধি করতে পারবেন।

হামাসের এই আকস্মিক ঝোড়ো হামলায় অন্তত দুটো বিষয় সামনে চলে আসে।

প্রথমত, ইসরায়েলের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বিশেষ করে অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আয়রন ডোম এবং চৌকস গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে যে উচ্চ দম্ভ ছিল, সেখানে খানিকটা চিড় ধরাতে পেরেছে হামাস। ইউক্রেনের যুদ্ধে পশ্চিমাদের অস্ত্রের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে আমেরিকার হিমাস নিয়ে উচ্ছ্বাস যেভাবে হোঁচট খেয়েছিল, সে রকম।

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থাকে বলা হয় মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে চৌকস গোয়েন্দা সংস্থা, তাদের পেছনে বরাদ্দও সর্বোচ্চ, তবু এই সংস্থা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি এত বড় একটা হামলা যে হতে যাচ্ছে।

ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেত, গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ ও ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী সবাইকে রীতিমতো ঘোল খাওয়ানো হয়েছে। ফলে দখলদার ইসরায়েলিদের মনোবলে কিছু মাত্রায় হলেও যে চিড় ধরাতে পেরেছে এবং দখলদারত্বের অবসান যে সময়ের ব্যাপার, এই উপলব্ধি হতে সহায়ক হবে।

দ্বিতীয়ত, হামাস অনেক দিন থেকে বিপুল অস্ত্রের মজুত করেছে এবং সামরিক শক্তিতে অনেকটা সক্ষমতা অর্জন করেছ এই আগ্রাসী হামলা তা প্রমাণ করে। ইরান হামাসকে অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে এই অভিযোগ অনেক পুরোনো। সুড়ঙ্গপথে ইরান থেকে অস্ত্র নিয়ে আসার বিষয় নতুন নয়। ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক যে উচ্চতায় পৌঁছেছে তাতে ইরান আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় আমেরিকার মদদপুষ্ট ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সক্রিয় হবে, তাতে সন্দেহ নেই। যদিও ইরান বলেছে তারা হামাসের হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, তবে ফিলিস্তিনিদের মুক্তির আন্দোলনের পক্ষে। রাশিয়া অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করে অমীমাংসিত ইস্যুগুলো সমাধান করার আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের জরুরি সভায় হামাসের হামলার নিন্দা প্রস্তাব আনতে চাইলেও রাশিয়া-চীনের বিরোধিতার কারণে তা পাস হয়নি।
অন্যদিকে এই হামলার পর সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান আলোচনা স্থগিত হয়ে গেছে।

এই রকম ইউনিপোলার বিশ্বব্যবস্থা থেকে মাল্টিপোলার বিশ্বব্যবস্থায় উত্তরণের বিশ্ব পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনিদের রক্ত ঝরানো তাদের মুক্তির পথকে মসৃণ করবে। কেননা, হামাসের হামলার ইসরায়েলিদের পাশাপাশি কিছু মার্কিন নাগরিকের হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ফিলিস্তিনিদের রক্তক্ষরণের মর্মবেদনা মার্কিনরাও কিছুটা হলেও অনুধাবন করতে পারবে।

অনেকে হামাসের এই হামলাকে অপরিণামদর্শী বলতে চাইছেন। তা করছেন আরও হামলার আশঙ্কায় প্রতিমুহূর্তে যারা জীবন দিয়ে চলছে, তাদের কাছে আরও হামলা কোনো শঙ্কা তৈরি করে না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্থায়ী শান্তির জন্য যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে, ফিলিস্তিনিদের এই যুদ্ধ নিশ্চয় নতুন ভোরের সূচনা করবে।

লেখক : গল্পকার

Link copied!