আমার বাবা খুব ভোরে আরমানিটোলা মাঠে হাঁটতে যেতেন। ৪ তারিখেও গিয়েছিলেন। বাসায় এসে সেই হত্যাকাণ্ডের একটি ভয়াবহ বর্ণনা দিলেন। মাঠের উত্তর দিকে একটি বাড়িতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের মৃতদেহ রাখা হয়েছিল। কীভাবে যেন জানলেন সেখানে তাঁকে রাখা হয়েছে। তিনি গিয়ে দেখলেন তাঁকে একটি খাটে রাখা হয়েছে, কাপড় দিয়ে ঢাকা।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধুর খুনিচক্র নির্মমভাবে জাতীয় চার নেতা তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে হত্যা করে। অথচ বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই নেতারাই।
তাদের নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আদর্শের প্রকৃত বিকৃতি শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর জাতীয় চার নেতার একজনকেও জীবিত রাখা সমীচীন মনে করেননি জিয়াউর রহমান ও মোশতাক চক্র এবং তাদের অনুসারীরা।
খালেদ মোশাররফ সেনাবাহিনীর প্রধান হওয়ার পর যখন ৩২ নম্বর পর্যন্ত একটি মিছিল গিয়েছিল, তখন আশাবাদী ছিলাম হয়তোবা জিয়া-মোশতাক চক্রের অবসান হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ যদি সেদিন সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনা এবং জেলখানায় বন্দি জাতীয় চার নেতাকে মুক্ত করার পদক্ষেপ না-ও নিতেন, তাহলেও হত্যা করা হতো। জেলখানার ভেতরে না হোক, বাইরে হলেও আমাদের জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হতো। হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর হত্যাকারীদের যে নিরাপদে দেশ ত্যাগ করার সুযেগ করে দেওয়া হয়েছিল, সেটাও ছিল আমাদের অজানা।
বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা এখনো নিরাপদ নন। আজকের প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বহুবার হামলার হাত থেকে বেঁচে গিয়েছেন। স্বাধীনতাবিরোধী ও চার নেতার হত্যাকারীরা এখনো সক্রিয়। এখনো তাদের অপতৎপরতা থেমে নেই। আমরা সৌভাগ্যবান যে জাতির পিতার কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছেন। এই নেতৃত্বই আমাদের নিয়ে গেছে সম্মানের আসনে। এই নেতৃত্বেই আর পথ হারাবে না বাংলাদেশ।
লেখক: অধ্যাপক ও কোষাধ্যক্ষ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
                
              
																                  
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    






































